প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি মোদী-ভৎর্সনায় সময় ব্যয় করে, মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে জিততে পারবে না, সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়েও নয়। ভোটে জিততে হলে মাঠে নেমে জনতার সেবা করতে হবে— গো বলয়ের তিন রাজ্যে কংগ্রেসকে ছিটকে দেওয়ার পর এই ‘পরামর্শ’ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আজ বিকশিত সংকল্প যাত্রার সুবিধাপ্রাপ্তদের সঙ্গে ভিডিয়ো আলাপচারিতায় নিজের 'গ্যারান্টি'র কথা প্রতিপদে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "নিজেদের গ্রাম ছাড়িয়ে অন্য গ্রামে ছড়িয়ে দিন সরকারের যোজনাগুলির কথা।" পরিবারের শিশুদের জানালেন, নিজেদের বিদ্যালয়েও প্রচার করতে হবে 'মোদীর গ্যারান্টি'-র সুফল।
এ দিন নিজের রাজ্য গুজরাতর ভারুচ জেলায় অল্পেশ কুমারের সঙ্গে ক্যামেরা সংযোগ ঘটল মোদীর। অল্পেশ ডিপ্লোমা এঞ্জিনিয়ার। চাকরি ছেড়ে মূলধন জমিয়ে কৃষিকাজে এসেছেন শুনে খুশি প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী সম্মাননিধি যোজনায় কী ভাবে সুবিধা পেয়েছেন, অল্পেশ সেই বৃত্তান্ত শেষ করলে মোদী বলেন, ‘‘আপনার পাশে যে গুড়িয়া রয়েছে ও কে?" জানা গেল, বছর আষ্টেকের মেয়েটি অল্পেশের কন্যা। মোদী তাঁকে সম্বোধন করে সহাস্যে বলেন, "আচ্ছা তোমার গ্রামে যে মোদীর গ্যারান্টিওয়ালা গাড়ি এসেছে তুমি জানতে তো?" সে ঘাড় নাড়ে। মোদী বলেন, "তুমি গিয়ে এ বার তোমাদের বন্ধুদের মোদীর গ্যারান্টিওয়ালা গাড়ির যাত্রার কথা বলবে তো?" সে আবারও ঘাড় নাড়ে। মোদী আবার বলেন, "পাক্কা বলবে তো?"এরপর বালিকাকে 'ভারতমাতা' বলতে বলে, পিছনে বসা জনতাকে পাদপূরণ করতে বলেন মোদী। সেই মতোই আওয়াজ ওঠে, 'ভারতমাতা কী জয়!'
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, "আমার সরকার মাই-বাপ-এর সরকার নয়। দেশের সরকার। মোদী দেশের সেবক। যাঁরা বঞ্চিত, যাঁরা গরিব, যাঁদের কথা কেউ শুনতে চায় না, মোদী তাঁদের কথা শোনে। সরকারি দফতরের দরজা বহু দিন যাঁদের সামনে বন্ধ ছিল, মোদী এসে সর্বাগ্রে তাঁদের খোঁজ নেয়। আমার কাছে প্রতিটি গরিব ভিআইপি, প্রতিটি কৃষক, যুবা, মা বোন ভিআইপি। আজ সবাই জেনে গিয়েছেন মোদীর গ্যারান্টির দম আছে।"
রাজনৈতিক মহল বলছে, বিধানসভায় জয়ের পর বিশ্রাম নেওয়া দূরস্থান, এখনই চব্বিশের ভোট প্রচারের ভিত গড়তে শুরু করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এক দিকে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসকে নিশানা করছেন, অন্য দিকে কোনও রাখঢাক না রেখেই উত্তমপুরুষে আত্মপ্রচার করছেন। কেন্দ্রীয় যোজনাগুলির সাফল্যের ভাষ্য ছড়িয়ে দিতে চাইছেন পঞ্চায়েত স্তরে। এমনকি একেবারে বালক-বালিকার বাচনের মধ্যেও 'মোদীর গ্যারান্টি'-কে ঢুকিয়ে দিতে সক্রিয় তিনি।
মোদীর কথায়, "দশকের পর দশক যদি ন্যায়নিষ্ঠ ভাবে সরকার চালানো হত, তা হলে আজ মানুষের এত দুর্ভোগ থাকত না। যে গ্যারান্টি আজ আমায় দিতে হচ্ছে, তার প্রয়োজন পঞ্চাশ বছর আগেই মিটে যেত। বিরোধীদের এটা বুঝতে হবে যে ভোট সামাজিক মাধ্যমে হয় না, তার জন্য মানুষের হৃদয় জিততে হয়।"
'মানুষের হৃদয়' কী ভাবে জিতেছেন মোদী, তা তুলে ধরতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উপভোক্তাদের সঙ্গে তাঁর ভিডিয়ো সম্মেলন হয়ছে আজ। প্রত্যেকেই এক স্বরে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের যে ভাবে আগলে রেখেছেন, তাতে তাঁদের কৃতজ্ঞতার সীমা নেই। তা না হলে কোভিডের পর আর্থিক ভাবে উঠে দাঁড়ানো যেত না। চণ্ডীগড় নিবাসী মোনা-র চায়ের দোকান নিয়ে বিশেষ উৎসাহ দেখান মোদী। তিনি নিজে চা বানান, না লোক রেখেছেন, স্বনিধি যোজনার সুবিধা নিয়েছেন কি না জানতে চাইলেন। মোনা জানালেন, কোভিডের পর যখন সংসার চালানো দায়, কেন্দ্রীয় যোজনায় পাওয়া ১০ হাজার টাকা ঋণে শুরু করেছিলেন দোকান। শোধ করে এ বার তৃতীয় দফায় ৫০ হাজার টাকার ঋণ নিয়েছেন, দোকানও চলছে ভাল। অকপটে জানালেন, 'মোদীর কৃপায়' তাঁর এই উদ্যোগ।
কাশ্মীরের শেখপুরার নাজিয়া জানালেন, কেন্দ্রীয় সরকার পাইপ লাইন বসানোয় গ্রামে জলের সমস্যা চিরতরে ঘুচে গিয়েছে। রান্নাঘরে সিলিন্ডার এসেছে, আগামী পাঁচ বছর বিনামূল্যে রেশনের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্র। তাঁর মতো কাশ্মীরের অন্য গ্রামও যে এখন খুশি বলে জানালেন নাজিয়া।
বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, জনজাতি সমাজের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার গত ন'বছরে কী কী কাজ করেছে, তা প্রচার করতেই 'বিকশিত সংকল্প যাত্রা' শুরু করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। খাতায়-কলমে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মসূচি হলেও যাত্রার যাবতীয় আয়োজন করছে বিজেপিই। সম্প্রতি বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিংহ এ বিষয়ে সার্কুলার পাঠিয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যের দলীয় নেতৃত্বকে। লোকসভা ভোটের মুখে জনজাতি সমাজের সমর্থন আদায়ে বিজেপির এই চেষ্টা বলে দাবি বিরোধীদের।
গত ১৫ নভেম্বর ঝাড়খণ্ডের খুন্তি থেকে যাত্রা শুরু হয়েছে। ভার্চুয়ালি এই যাত্রার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশের ৬৯টি জেলার ৩৯৩টি ব্লক এবং ৮৯৪০টি গ্রাম পঞ্চায়েত দিয়ে এই যাত্রা যাবে। পশ্চিমবঙ্গেও জনজাতিপ্রধান জেলাগুলি দিয়ে 'বিকশিত সংকল্প যাত্রা' যাওয়ার কথা, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ। এই যাত্রাকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছিল তৃণমূল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy