মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন-ঘুষ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী দর্শন হীরানন্দানি-সহ অন্য সাক্ষীদের জেরা করার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল সংসদ থেকে বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে। এমনই মত লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল পিডিটি আচারির। এক সাক্ষাৎকারে এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি স্পষ্ট ভাবেই বলেছেন, ‘‘ওই লোকগুলোকে পাল্টা প্রশ্ন করার সুযোগ ওঁকে (মহুয়া মৈত্রকে) দেওয়া উচিত ছিল। এই নিয়মটা মোটামুটি সকলেই মেনে চলে। সাক্ষীদের প্রশ্ন করার অধিকার রয়েছে অভিযুক্তের।’’
গতকাল লোকসভায় মহুয়াকে বহিষ্কার করা নিয়ে এথিক্স কমিটির সুপারিশ বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পাশ করিয়ে নিলেও একাধিক বিরোধী সাংসদের অভিযোগ ছিল, বিষয়টি নিয়ম মেনে হয়নি। তাঁদের অভিযোগ, মহুয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তাঁকে নিজের বক্তব্য জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়নি। মহুয়ার বিরুদ্ধে যাঁরা অভিযোগ তুলেছিলেন, তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন করার সুযোগ মহুয়াকে দেয়নি এথিক্স কমিটি। অভিযুক্ত হিসাবে মহুয়া ওই ৩ জনের কাউকেই প্রশ্ন করার সুযোগ পাননি।
এথিক্স কমিটির কাছে নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে এবং গত কালও মহুয়া জানিয়েছিলেন, লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড অন্যকে দেওয়ার মধ্যে কোনও বেনিয়ম নেই। সাক্ষাৎকারে আচারিও সেই একই সুরে জানিয়েছেন, লগইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড অন্যকে দেওয়ার ক্ষেত্রে সাংসদদের উপরে কোনও বাঁধাধরা বিধিনিষেধ নেই। লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘‘কোনও নিয়ম যখন নেই, তখন কী করে এই বিষয়ে আপনি এক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন, তা আমি জানি না।’’
সাক্ষাৎকারে আচারি একই সঙ্গে জানান, মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত এথিক্স কমিটি করতে পারে না, তা করতে পারে প্রিভিলেজ কমিটি। ঠিক এই একই বক্তব্য গতকাল তুলে ধরেছিলেন একাধিক বিরোধী সাংসদ। আচারি বলেন, ‘‘বিষয়টা এথিক্স কমিটির বিচার্য নয়। আমার মতে, সে কারণেই এথিক্স কমিটি শাস্তি হিসেবে তাঁকে বহিষ্কারের সুপারিশ করতে পারে না।’’
আচারি জানান, মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তিনি প্রশ্ন করার বিনিময়ে হীরানন্দানির থেকে নগদ এবং উপহার নিয়েছেন। এটা দুর্নীতির মামলা। আচারির মতে, এই মামলা দুর্নীতি দমন আইনের আওতায় সিবিআইয়ের তদন্ত করা উচিত।
গতকালই বিরোধী সাংসদেরা একসুরে বলেছিলেন, এথিক্স কমিটি যে প্রক্রিয়ায় মহুয়ার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছে, যে ভাবে তাঁকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাতে একাধিক ক্ষেত্রে সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। তা ছাড়া এই ধরনের অভিযোগের তদন্ত এথিক্স কমিটি করতে পারে না বলেই মত প্রকাশ করে একাধিক সাংসদ জানিয়েছিলেন, এটা প্রিভিলেজ কমিটির বিষয়। সেই একই বক্তব্য শোনা গিয়েছে লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেলের মুখেও।
আট বছর আগে তৈরি হওয়া এথিক্স কমিটিতে বিজেপি সাংসদেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেই কমিটি তাদের প্রথম রিপোর্টেই মহুয়াকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে। মহুয়া-সহ বিরোধী নেতৃত্বের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অতি ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির ব্যবসার নানা অনৈতিক বিষয় তুলে ধরে তা নিয়ে সরব হওয়ার কারণেই মহুয়াকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে।
মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারের প্রায় ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পরে প্রথম বার মুখ খুললেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। আগাগোড়া হাসিমুখে বিজেপি সাংসদ জানিয়ে দেন, ‘‘দুর্নীতির অভিযোগ এবং জাতীয় সুরক্ষার সঙ্গে আপসের জন্য লোকসভার কোনও সদস্যের সাংসদপদ খারিজ হওয়া আমাকে পীড়া দেয়। গত কাল (শুক্রবার), মোটেও আনন্দের দিন ছিল না, বরং দুঃখের দিন ছিল।’’ দুবের অভিযোগের সূত্রেই ‘প্রশ্নঘুষ’-কাণ্ডে মহুয়াকে বহিষ্কার করা হয় লোকসভা থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy