Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Class 12

কোথায় চান্স পাব? আতঙ্কে বিহারের ফাস্ট গার্লও

এ বছর বিহারে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল প্রায় ৬৫ শতাংশ পড়ুয়া ফেল করেছেন।গত ২০ বছরের মধ্যে পাশের হার এতটা কম হয়নি। গত বারের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ কম!

অশোক চৌধুরি। ছবি: সংগৃহীত।

অশোক চৌধুরি। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ১৪:১৬
Share: Save:

উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকা নিয়ে গত বছর কেলঙ্কারির মুখে পড়তে হয়েছিল বিহারের নীতীশ কুমারের সরকারকে। এ বার তাই প্রথম থেকেই বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সতর্কতাই জন্ম দিল নতুন বিতর্কের।যেমন প্রথম হয়েও আক্ষেপ খুশবু কুমারীর। বলছেন, ‘‘কম করে ৯০ শতাংশ নম্বর পাব ভেবেছিলাম। পেয়েছি ৮৬.২। এই নম্বরে ভাল কোনও কলেজে জায়গাই পাব না।’’

এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল প্রায় ৬৫ শতাংশ পড়ুয়া ফেল করেছেন। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী অশোক চৌধুরি বলছেন, সঠিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এটা হয়েছে। এই ফল প্রমাণ করছে রাজ্যের পরীক্ষা ব্যবস্থায় এখন কোনও গলদ নেই।

এতদূর সব ঠিক ছিল। সমস্যা তৈরি হয়েছে সর্বভারতীয়স্তরে পরীক্ষার সার্বিক ফলাফল সামনে আসার পরই। প্রশ্ন উঠছে, যেখানে গোটা দেশে পাশের হার প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ, সেখানে এমন ফল বিহারকে পিছিয়ে দেব না তো?

সোমবারই বিহার স্কুল এডুকেশন বোর্ড (বিএসইবি) দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে পাশের হার অত্যন্ত কম। মাত্র ৩৫ শতাংশ। গত ২০ বছরের মধ্যে পাশের হার এতটা কম হয়নি। গত বারের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ কম! রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী অশোক চৌধুরি বলেন, ‘‘এই ঘটনা প্রমাণ করল কতটা সচ্ছতার সঙ্গে রাজ্যে পরীক্ষা নেওয়া হয়। বিজেপি-র সব অভিযোগ যে মিথ্যা, সেটাও প্রমাণ হল।’’ কিন্তু, নম্বর কম ওঠায় হতাশ পড়ুয়ারা। তাঁদের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, ভাল কলেজে পড়ার সুযোগ মিলবে তো? এর পরই বিষয়টি সরব হয়েছে বিজেপি। শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছে তারা।

ফলাফল নিয়ে শিক্ষমন্ত্রীর মত, বিহার এ বার করে দেখিয়েছে পরীক্ষায় নকল কী ভাবে আটকানো যায়। সাফল্যের সঙ্গে নকল আটকাতে পারায় বিহারে পাশের হার কমে গিয়েছে। নকল আটকাতে উত্তরপত্রের সঙ্গে একটি করে বারকোড ব্যবহার করা হয়েছে। আর এ সবের ফলেই সাফল্যটা এসেছে বলে মনে করছেন তিনি। তবে খারাপ ফলে তিনি যে খুশি নন, তাও স্পষ্ট করেছেন শিক্ষামন্ত্রী অশোক চৌধুরি। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে এই ফলে আমি নিশ্চিত ভাবে খুশি নই। কিন্তু বিহারের বেশির ভাগ ছাত্র অসৎ উপায়ে পাশ করে, এই ধারণাটা পাল্টানোর দিকে আমরা যে সঠিক পথেই এগোচ্ছি, সেটা এই ঘটনায় প্রমাণিত। যাঁরা পাশ করেছেন তাঁরা সোনার টুকরো।’’

আরও পড়ুন: মাধ্যমিকে দ্বিতীয়, সেই জেদের জোরেই অর্চিষ্মান উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম

গত বছরে বিজ্ঞান বিভাগে পাশের হার ছিল ৬০ শতাংশ। এ বছর সেটা নেমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশে। কলা বিভাগের ক্ষেত্রেও পাশের হার গত বারের তুলনায় ৩০ শতাংশ কমে প্রায় ৩৭ শতাংশে নেমেছে। তবে বাণিজ্য বিভাগে সে দিক থেকে পাশের হার অতটা হেরফের হয়নি। গত বার যা ৮০ শতাংশ ছিল, এ বার সেটা কমে প্রায় ৭৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী এটাকেই সরকারের সাফল্য বলে দাবি করছেন।
২০১৫-য় দ্বাদশ শ্রেণিতে বিএসইবি-র পরীক্ষায় শীর্ষ স্থানে ছিলেন কলা বিভাগের ছাত্রী রুবি রাই। এই সাফল্যে গোটা রাজ্য জুড়ে যখন হইচই, তখন তাঁর একটা সাক্ষাত্কারই বিহারের শিক্ষার মানকে বিশাল প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। ওই সাক্ষাত্কারে রুবির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, পলিটিক্যাল সায়েন্স কী? তাঁর উত্তর শুনে গোটা দেশ চমকে ওঠে। রুবি জানিয়েছিলেন, পলিটিক্যাল সায়েন্স রান্না করতে শেখায়। এক জন প্রথম স্থানাধিকারীর কাছে এই জবাব শুনে স্তম্ভিত হয়ে যায় গোটা দেশ।
যখন চার দিকে এ নিয়ে সমালোচনা আর বিতর্কের ঝড় বইছে, এক প্রকার বাধ্য হয়েই তদন্তে নামে রাজ্য শিক্ষা দফতর। তদন্তে নেমে উঠে আসে ভয়ানক তথ্য। জানা যায়, লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন কেনাবেচা, অন্যের হয়ে পরীক্ষা দেওয়া, এমনকী প্রকাশ্যে ছাত্রদের প্রশ্নের উত্তর সরবরাহ করা— সবই হয়েছে। রুবি তো শুধু হিমশৈলের চূড়া ছিল, তাঁর মতো আরও কত ছাত্রছাত্রী এ ভাবে অনায়াসে পাশ করে বেরিয়ে গিয়েছেন, মার্কশিটে দারুণ নম্বর উঠেছে তার ইয়ত্তা নেই! তদন্তে এ নিয়ে বিশাল একটা চক্রের হদিস মেলে। গ্রেফতার হন বেশ কিছু সরকারি আধিকারিকও।
সমালোচনার মুখে পড়ে নীতীশ কুমারের সরকার এ বার নকল আটকাতে বেশ কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে বলে প্রশাসনের তরফ থেকে দাবি করা হয়।

তবে এত কিছুর পরও বিহারে পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় থেকে গেল বলেও মনে করা হচ্ছে। পরীক্ষায় দুর্নীতি আটকাতে গিয়ে ভাল এবং সত্ উপায়ে পরীক্ষা দেওয়া ছাত্রছাত্রীরা কম নম্বর পেয়ে সর্বভারতীয় স্তরে অসুবিধায় পড়লেন না তো? প্রশ্ন উঠেছে, পঠনপাঠনের যাবতীয় প্রক্রিয়ায় সুব্যবস্থা কায়েম না করে, শুধু পরীক্ষা ব্যবস্থায় হঠাত্ করে ‘বিপ্লব’ আনতে যাওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত! সরকারের যুক্তি, কোথাও তো একটা শুরু করতেই হয়। এটা শুরু মাত্র।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy