ছবি পিটিআই।
বাদল অধিবেশনের প্রথম সপ্তাহে কার্যত অচল থেকেছে সংসদের দুই কক্ষ। পেগাসাস-কাণ্ডে বিরোধীদের নাছোড় প্রতিবাদে দ্বিতীয় সপ্তাহেও সেই অচলাবস্থাই বহাল থাকার সম্ভাবনা।
তৃণমূল, কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের দাবি, স্পাইওয়্যার ব্যবহার নিয়ে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে সংসদে বিশদে ব্যাখ্যা দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু কেন্দ্রীয় সূত্রে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পেগাসাস নিয়ে সংসদীয় অধিবেশনে আলোচনার প্রশ্নই নেই। ফলে সরকার ও বিরোধীদের সংঘাতে সংসদ অচল থাকারই আশঙ্কা।
আজ ‘মন কি বাত’-এ মোদী পেগাসাস নিয়ে কিছু না-বলায় ফের বিরোধীদের কটাক্ষের মুখে পড়েছেন। কংগ্রেসের তোপ, মোদী সরকার সকলের ‘মন কি বাত’ শুনতে আড়ি পাতে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ‘মন কি বাত’-এ তার জবাব দেন না। রাহুল গাঁধী বলেন, ‘‘পেগাসাস দিয়ে বন্ধু শিল্পপতিদের ফায়দা করে দেওয়া হচ্ছে, বিরোধীদের উপরে গোয়েন্দাগিরিরও হচ্ছে!’’
চলতি অধিবেশনের গোড়া থেকেই সংসদের উভয় কক্ষে তীব্র সংঘাতে যেতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলকে। পশ্চিমবঙ্গের ভোটে বিজেপিকে পরাস্ত করার পরে সংসদে তাদের রণনীতি এ বার আরও আগ্রাসী বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। রাজ্যসভায় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর হাত থেকে বিবৃতি ছিনিয়ে নিয়ে তা ছিঁড়ে ফেলায় চলতি অধিবেশনের বাকি দিনগুলির জন্য তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ শান্তনু সেন সাসপেন্ড হয়েছেন। তাকে কেন্দ্র করে অধিবেশনের দ্বিতীয় সপ্তাহে তৃণমূল সংসদে অন্য বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদী রাজনীতির সুর চড়াতে চায় বলে খবর।
কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের বক্তব্য, পেগাসাস কাজে লাগিয়ে ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল কি না, তা স্পষ্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে বিবৃতি দিতে হবে। পেগাসাস কাণ্ডের তদন্তে সরকারকে হয় যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গঠন করতে হবে, নয়তো সুপ্রিম কোর্টের কাছে কর্মরত বিচারপতিকে দিয়ে তদন্তের জন্য অনুরোধ জানাতে হবে।
বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা অবশ্য পেগাসাস কাজে লাগিয়ে এই ফোন হ্যাকিংয়ের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “হতাশাগ্রস্ত বিরোধীদের কাছে আর কোনও বিষয় নেই। তাই কী করবে বুঝতে না-পেরে ভিত্তিহীন বিষয় নিয়ে হাঙ্গামা বাধিয়ে সংসদ অচল করে রাখতে চাইছে তারা।”
সোমবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকের জন্য নির্ধারিত সংসদ ভবনে দোতলার ৬২ নম্বর কক্ষে বৈঠকে বসছে তৃণমূলের সংসদীয় দল। সেখানে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থতিতে সংসদীয় রণনীতি ঝালিয়ে নেওয়া হবে। সূত্রের খবর, রাজ্যসভায় দলের মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় শান্তনুর সাসপেনশন তুলে নেওয়ার জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করছেন। তা নিয়ে আলোচনা হবে। বিকেলে দিল্লি পৌঁছনোর কথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিকেলে সংসদীয় বৈঠকের আলোচ্যসূচি তাঁকে জানানো হবে।
সূত্রের খবর, শান্তনুর সাসপেনশন ওঠানো নিয়ে যে প্রস্তাব তৃণমূল আনবে, সেখানে ঘটনার সময়ে রাজ্যসভায় উপস্থিত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের নাম উল্লেখ করা হবে কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। যাতে প্রয়োজনে তাঁদের ডেকে সাক্ষ্য দেওয়ানো যায়। এ নিয়ে তৃণমূলের অন্য দলগুলির সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। কংগ্রেস সূত্রে জানানো হয়েছে, এ ব্যাপারে তৃণমূলকে সব রকম সাহায্য করতে তারা রাজি। জানা গিয়েছে, যখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে শান্তনু বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন, তখন রাজ্যসভায় উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের পি চিদম্বরম, সিপিএমের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, আরজে়ডি-র মনোজ ঝা, এসপি-র রামগোপাল যাদব প্রমুখ।
পেগাসাস, পেট্রল-ডিজেলের চড়া দাম, মূল্যবৃদ্ধি, কৃষি আইন প্রত্যাহারের মতো বিষয়ে প্রথম সপ্তাহে সংসদ কার্যত অচলই ছিল। গত সপ্তাহে তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, বেআইনি ভাবে কারও ফোনে আড়ি পাতা হয়নি। চিদম্বরমের বক্তব্য, “তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী খুব চালাক। তাঁর বিবৃতিতে শব্দ বাছাইয়েও সেই চালাকি স্পষ্ট। মন্ত্রী বেআইনি আড়ি পাতার কথা অস্বীকার করেছেন। নিয়ম মেনে আড়ি পাতার কথা অস্বীকার করেননি। সরকারকে জানাতে হবে, কত টাকা দিয়ে, সরকারের কোন সংস্থা পেগাসাস স্পাইওয়্যার কিনেছে।”
চিদম্বরমের মতে, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল, এ বিষয়ে অভিযোগ ওঠার পরে প্রথম দিনেই বিবৃতি দিয়ে সবটা জানানো।’’ কংগ্রেস নেতা শশী তারুরের নেতৃত্বাধীন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ইতিমধ্যেই পেগাসাস-কাণ্ড খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু চিদম্বরমের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে জেপিসি অনেক বেশি কার্যকর হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy