শুক্রবার গুলি করে খুন করা হয়েছে বিধায়ক খুনের মূল সাক্ষী উমেশ পালকে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বিকেল ৪টে ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড। সাদা রঙের একটি এসইউভি বাড়ির সামনে এসে থামল। গাড়ির পিছনের আসন থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন উমেশ পাল। দরজা খুলে বেরোতেই পিছনে কয়েকটি বাইক এসে থামে। কিছু বুঝে ওঠার আগে উমেশকে লক্ষ্য করে একের পর গুলি চালান দুষ্কৃতীরা।
বিকেল ৪টে ৫৭ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে গোটা অপারেশন চালিয়ে চম্পট দেয় তারা। উমেশকে খুন করতে মাত্র ৪৭ সেকেন্ড সময় নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। শুক্রবার বিকেলের যে হত্যাকাণ্ড শোরগোল ফেলে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে।
উমেশকে খুনের অভিযোগ উঠেছে প্রাক্তন সাংসদ আতিক আহমেদের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই তাঁর দুই ছেলেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু কে এই উমেশ পাল? কেনই বা তাঁকে খুন করা হল? কেনই বা নাম উঠে আসছে আতিক আহমেদের? রাজু পাল হত্যার সঙ্গেই বা উমেশের সম্পর্ক কী?
ঘটনার সূত্রপাত আজ থেকে ১৯ বছর আগে ২০০৪ সালে। ওই বছরের লোকসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির (এসপি) টিকিটে ফুলপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন আতিক আহমেদ। ইলাহাবাদ পশ্চিমের পাঁচ বারের বিধায়ক। ২০০৪ সালে আতিক লোকসভা নির্বাচনে জেতার পর ইলাহাবাদ পশ্চিম বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে তাঁর ভাই খালিদ আজিম ওরফে আশরফকে প্রার্থী করেছিল এসপি। ওই আসনেই আবার বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) টিকিটে আশরফের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন রাজু পাল। ওই আসনে আশরফকে হারিয়ে বিধায়ক হন রাজু। আর এখান থেকে শত্রুতার সূত্রপাত। রাজু জেতার পর থেকেই তাঁকে নানা ভাবে ধমকানো শুরু করেন আতিক।
২০০৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পূজার সঙ্গে বিয়ে হয় রাজুর। ২৫ জানুয়ারি একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন রাজু। সুলেমসরাইয়ে জিটি রোডের উপর একটি স্করপিয়ো গাড়ি তাঁর গাড়িকে ওভারটেক করে দাঁড়ায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিন দুষ্কৃতী তাঁর গাড়ি ঘিরে গুলিবর্ষণ করে। সেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান রাজু। বিধায়ক রাজুকে খুনের অভিযোগ ওঠে এসপি সাংসদ আতিক, তাঁর ভাই আশরফ, ফরহান, রঞ্জিত পাল, আবিদ এবং গুফরানের বিরুদ্ধে। ঘটনাচক্রে, ২০০৪ সালে বিধানসভা উপনির্বাচনে জেতার আগে পর্যন্ত আতিকের খাস লোক ছিলেন রাজু। ময়নাতদন্তে রাজুর শরীর থেকে ১৯টি গুলি বার হয়েছিল।
এই হত্যাকাণ্ডে একমাত্র সাক্ষী হিসাবে লড়াই শুরু করেন রাজুরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু উমেশ পাল। রাজুর সঙ্গে উমেশের পারিবারিক সম্পর্কও বেশ ভাল ছিল। উমেশের ঘনিষ্ঠদের দাবি, অন্য সাক্ষীরা যখন এক এক করে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন, তখন একমাত্র উমেশই রাজুর হত্যাকাণ্ডে সাক্ষী দেওয়ার জন্য তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, জীবিত থাকলে এই মামলা জিতে অভিযুক্তদের শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। সেই থেকে লড়াই শুরু। রাজু হত্যাকাণ্ডে মূল সাক্ষী হয়ে যাওয়ায় ২০০৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি উমেশকে অপহরণ করা হয়। আর সেই অপহরণের অভিযোগ ওঠে সেই আতিকের বিরুদ্ধেই। তাঁকে ধমকানো হয়, সাক্ষী দিলে প্রাণে মেরে দেওয়া হবে। অপহরণকারীরা উমেশকে ছেড়েও দেন। কিন্তু উমেশ চুপ করে বসে থাকেননি। পুলিশ সূত্রে খবর, এর পর একাধিক বার উমেশের উপর প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু প্রতি বারই কোনও না কোনও ভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন। এমনকি ২০১৬ সালে সাক্ষী দিতে গিয়ে আদালত চত্বরেই তাঁকে গুলি করে খুন করার চেষ্টা করা হয়। আবারও আতিকের গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন উমেশ। আতিকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছিলেন উমেশ। রাজু হত্যাকাণ্ড মামলার পাশাপাশি এই মামলাও চলছিল। হুমকি এবং শাসানির চাপে পড়ে রাজুর স্ত্রী পূজাও সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়ে পিছিয়ে আসেন। কিন্তু বন্ধুর হত্যার ন্যায়বিচারের জন্য একা লড়াই চালাচ্ছিলেন উমেশ।
তাঁকে অপহরণের মামলার সম্প্রতি শুনানি শুরু হয়েছিল। সেই মামলার বিষয়েই শুক্রবার আদালতে গিয়েছিলেন উমেশ। শুক্রবারই সেই মামলা রায় দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিবাদী পক্ষের উকিল সোমবার পর্যন্ত সময় চেয়ে নেন। আদালত থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন উমেশ। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁকে আদালত থেকেই অনুসরণ করছিল দুষ্কৃতীরা। বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামতেই গুলি করে খুন করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy