(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও লালু প্রসাদ যাদব। অরবিন্দ কেজরীওয়াল (ডান দিকে)। ছবি: পি টি আই।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের আয়োজনে বিজেপি-বিরোধী দলগুলির বৈঠকের এক দিন আগেই পটনায় পৌঁছে গেলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আম আদমি পার্টি (আপ)-এর প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল। ঘটনাচক্রে, পটনা বৈঠকের আগে বিরোধী জোটের অকংগ্রেস দলগুলির মধ্যে তৃণমূল এবং আপই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিল। এমনকি, দিল্লির আমলাতন্ত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিতর্কিত অর্ডিন্যান্স (অধ্যাদেশ)-এর বিরোধিতায় কংগ্রেসের সমর্থন না-পেলে কেজরীওয়াল পটনা বৈঠক বয়কটের হুমকি দিয়েছিলেন বলেও বিরোধী শিবির সূত্রে খবর মিলেছিল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে সঙ্গে নিয়ে পটনায় পৌঁছন মমতা। এর পরে আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের বাড়ি যান মমতা। তার আগে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আশা আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপির মোকাবিলায় ‘একের বিরুদ্ধে এক’ প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে আগামিকালের (শুক্রবার) বৈঠকে বিরোধী দলগুলির ঐকমত্য হবে। আমরা সকলে এখানে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে এসেছি।’’ মমতা পৌঁছনোর কয়েক ঘণ্টা পরে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানকে নিয়ে পটনা বিমানবন্দরে পৌঁছন কেজরী। কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি সভানেত্রী মেহবুবা মুফতিও বৃহস্পতি-সন্ধ্যায় পটনায় পৌঁছেছেন। কংগ্রেস সূত্রে খবর, শুক্রবার সকালে পটনা পৌঁছবেন রাহুল গান্ধী, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক কেসি বেনুগোপাল।
আপ প্রধান কেজরীওয়াল কংগ্রেসের উপরে চাপ বাড়িয়ে চলতি সপ্তাহেই রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের আসন্ন বিধানসভা ভোটে লড়ার ঘোষণা করেছিলেন। রাজস্থানের গঙ্গানগরে সভাও করেন তিনি। এর পর বুধবার ‘প্রত্যাঘাত’ করেছে রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খড়্গের দল। গুজরাতে আপের সহ-সভাপতির পদে থাকা বশ্রাম সগাথিয়া-সহ সে রাজ্যের কয়েক জন কেজরী-ঘনিষ্ঠকে টেনে আনা হয়েছে ‘হাত’ শিবিরে। বস্তুত, গত এক সপ্তাহ ধরে আপ-সহ কয়েকটি দলের সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বের টানাপড়েন তৈরি হয়। দিল্লিতে শীলা দীক্ষিতের সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসা কেজরীওয়ালকে কোনও ভাবেই বাড়তি জায়গা দিতে রাজি নয় কংগ্রেস। এমনকি, আমলাতন্ত্রের দখল নিয়ে মোদী সরকারের সম্ভাব্য বিলের বিরোধিতায় যখন অন্য বিরোধীরা কেজরীওয়ালের পক্ষে, তখন কংগ্রেস তার সমর্থনের বিষয়টি এখনও ঝুলিয়ে রেখেছে।
একই ভাবে বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন কংগ্রেস-তৃণমূল ‘সমীকরণে’ জটিলতা তৈরি করেছে। তা নিয়ে গত শুক্রবার প্রকাশ্যে কংগ্রেসকে নিশানা করেছিলেন মমতা। অভিষেকের ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচির শেষ দিনে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের সভায় মমতা বলেছিলেন, ‘‘কংগ্রেস অনেক রাজ্য চালিয়েছে। সিপিএমের সবচেয়ে বড় দোসর। বিজেপির বড় দোসর। আর পার্লামেন্টে (সংসদ) আমাদের সাহায্য চাও। আমরা করব তা-ও বিজেপির বিরুদ্ধে। কিন্তু মনে রেখো, বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে ঘর করে আমাদের কাছে বাংলায় সাহায্য চাইতে আসবে না।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কেজরীর দল বাংলার পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে ইতিমধ্যেই। দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার ‘অপরাধে’ ১৩ জন আপ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে কেজরীর দল!
লালুপ্রসাদের বাড়িতে মমতা
আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদবের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন অভিষেক এবং ফিরহাদ। মমতাকে স্বাগত জানান লালুপ্রসাদ, তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবী এবং কনিষ্ঠ পুত্র তেজস্বী যাদব। লালুপ্রসাদের পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন মমতা। লালুপ্রসাদের শরীর কেমন আছে, সে ব্যাপারে খোঁজ নেন তিনি। লালুপ্রসাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘লালুজি, আপনার শরীর কেমন আছে এখন?’’ লালু বলেন, ‘‘ঠিক আছি।’’ মমতা বলেন, ‘‘আপনাকে দেখে এখন ভাল লাগছে। অনেক দিন পর দেখা হল।’’ তেজস্বী বলেন, ‘‘চিকিৎসা (লালুর) সফল হয়েছে। পটনায় ফিরেছেন।’’ এ কথা শুনে মমতা বলেন, ‘‘দিল খুশ হো গয়া।’’ মমতাকে উত্তরীয় পরান লালু-ঘরনি। মমতাকে মধুবনী শাড়ি উপহার দেন তিনি। সেই শাড়ি স্ত্রীকে দেওয়ার জন্য অভিষেকের হাতে দেন মমতা। লালু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্যও উপহার এবং মিষ্টি দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। লালুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর মমতা বলেন, ‘‘বিহারের মানুষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিহারে এসে ভাল লেগেছে। লালুজিকে অনেক সম্মান করি। রাবড়ি দেবী, তেজস্বীর সঙ্গে দেখা করে ভাল লেগেছে। লালুজি শীর্ষনেতা। বহু দিন জেলে ছিলেন। হাসপাতালে ছিলেন। শরীর ঠিক ছিল না। আজ দেখে ভাল লেগেছে। বিজেপির বিরুদ্ধে লালুজি ভাল ভাবে লড়তে পারবেন। একসঙ্গে লড়ব। ওয়ান টু ওয়ান। সম্মিলিত ভাবে লড়ব। বৈঠকে কী হয় দেখব।’’
বৈঠকের আগে কী কর্মসূচি রাহুলের?
বিহার প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র আনন্দ মাধব জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় পটনা পৌঁছবেন রাহুল, খড়্গে এবং বেনুগোপাল। বিমানবন্দর থেকে প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর সদাকত আশ্রমে যাবেন তাঁরা। সেখানে বাবাসাহেব অম্বেডকরের একটি মূর্তির আবরণ উন্মোচন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। বৈঠক করবেন প্রদেশ কংগ্রেসের পদাধিকারীদের সঙ্গে। বেলা ১১টা নাগাদ রওনা হবেন জ্ঞান ভবনের উদ্দেশে। বিরোধী বৈঠকে যোগ দিতে।
সিলমোহর পড়বে মমতার ‘তত্ত্বে’?
ঘটনাচক্রে, মমতার ‘সুপারিশ’ মেনেই দিল্লির বদলে বিরোধী জোটের বৈঠকের আয়োজন করেছেন নীতীশ। গত ২৪ এপ্রিল আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের পুত্র তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীকে সঙ্গে নিয়ে নবান্নে এসে মমতার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন জেডিইউ নেতা নীতীশ। সেই সময় তৃণমূল নেত্রী প্রয়াত জয়প্রকাশ নারায়ণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছিলেন, “নীতীশজিকে অনুরোধ করছি, আপনি পটনায় একটা বিরোধী বৈঠক ডাকুন।” ১৯৭৭ সালের লোকসভা ভোটের আগে জয়প্রকাশের উদ্যোগেই বিহার থেকে কংগ্রেস বিরোধী জোট গড়ে তোলার উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপিকে হারানোর জন্য ইতিমধ্যেই আঞ্চলিক দলগুলিকে ‘জায়গা’ ছাড়ার ‘সূত্র’ দিয়েছেন মমতা। জানিয়েছেন, যে দল যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাকে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব বিজেপি-বিরোধী ভোটের বিভাজন রুখতে মমতার এই তত্ত্বে সায় দেয়নি। কারণ ওই সূত্র মেনে তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টিকে জায়গা ছাড়তে গেলে লোকসভায় অর্ধেকের বেশি আসনে প্রার্থী দিতে পারবেন না রাহুল-খড়্গেরা। এই পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার মমতার সুরেই ‘জাতীয় দলকে জায়গা ছাড়া’র বার্তা দিয়েছেন অখিলেশ। পটনা বৈঠকে সিলমোহর মিলবে এই তত্ত্বে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy