মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
ইতিহাস নাকি ফিরে ফিরে আসে! কখনও কখনও পরিহাসও করে।
ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে ‘সম্পূর্ণ ক্রান্তি’র ডাক দিয়ে সাতের দশকে বিরোধী আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ (জেপি)। তাঁর প্রয়াণ যে শহরে, যে শহরের বিমানবন্দর এখন তাঁর নাম ধারণ করে আছে, সেই পটনার সর্বত্র এই মুহূর্তে রাহুল গান্ধীর মুখ! নরেন্দ্র মোদীর ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ জমানার অবসান ঘটিয়ে দেশ বাঁচানোর ডাক দিয়ে ইন্দিরার দৌহিত্রকেই কাণ্ডারী হিসেবে তুলে ধরেছে কংগ্রেস। উপলক্ষ, পটনায় বিরোধী শিবিরের আসন্ন মহা-বৈঠক। ঘটনাচক্রে, যা অনুষ্ঠিত হবে ইন্দিরার সেই জরুরি অবস্থা ঘোষণার ৪৮ বছর পূর্তির ঠিক দু’দিন আগে!
বিরোধী শিবিরের ওই বৈঠক উপলক্ষে পটনা জুড়ে এখন যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি। ঠিক এই সময়েই বিহারের রাজধানী শহরে আবার হচ্ছে জি-২০ বৈঠক। দুই সম্মেলন উপলক্ষে ভিআইপি-দের আনাগোনা সামলাতে নিরাপত্তার নানা শর্ত আরোপ হয়েছে, বিভিন্ন রাস্তায় চলাচলেও নানা নিষেধাজ্ঞা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পটনায় আসার কথা বৃহস্পতিবার। সঙ্গে তিনি আনছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। আরও নানা দলের নেতাদেরও আগমন শুরু হবে বৃহস্পতিবারই। পর দিন, শুক্রবার গান্ধী ময়দানের কাছে জ্ঞান ভবনে বিরোধী বৈঠকের আসর বসবে। উদ্যোক্তা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব। শরীর অসুস্থ হলেও আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি বৈঠকে থাকতে চান।
বিরোধী শিবিরের মহারথীরা আসার আগেই বৈঠকের শহরে এখন রীতিমতো পোস্টার-যুদ্ধ! সেই যুদ্ধে এগিয়ে কংগ্রেস। বাংলা যখন পঞ্চায়েত ভোটের উত্তাপে ফুটছে, বিহার কংগ্রেসের তৈরি পোস্টারে একসঙ্গে চোখে পড়ছে রাহুল গান্ধী, মমতা এবং সীতারাম ইয়েচুরির মুখ! বাংলায় যে তিন দল পরস্পরের যুযুধান, জাতীয় স্তরের বাধ্যবাধকতায় তাদেরই এমন ‘সহাবস্থান’ চোখ টানার মতোই! আম আদমি পার্টি (আপ) আবার অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে ‘দেশ কা লাল’ আখ্যা দিয়ে পোস্টার-দৌড়ে নেমেছে। আর যিনি বৈঠকের মুখ্য আয়োজক, সেই নীতীশ যেন হয়ে দাঁড়িয়েছেন নিমিত্ত মাত্র!
বসে নেই বিজেপিও। মোদীকেই ‘ত্রাতা’ হিসেবে তুলে ধরে গেরুয়া শিবিরের পোস্টারে বিরোধী নেতাদের একমঞ্চে থাকার ছবি দিয়ে তাঁদের ‘বিভ্রান্তি ও দুর্নীতি’র প্রতীক (কনফিউশন অ্যান্ড করাপশন) তকমা দেওয়া হয়েছে! এরই মধ্যে জিতন রাম মাঝির দল যোগ দিয়েছে এনডিএ শিবিরে। বিজেপি নেতা এবং বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদীর দাবি, ‘‘বিরোধীদের কাছে লোকে জানতে চাইবে, মোদীর বিকল্প মুখ আপনাদের কে? এর কোনও জবাব ওঁদের কাছে আছে? শুধু বিভ্রান্তি আর দুর্নীতি!’’ অন্য দিকে, বিহার কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ব্রিজেশ পাণ্ডের বক্তব্য, ‘‘মুখ নিয়ে ভাবনা নেই। প্রশ্নটা নীতির। দেশকে স্বৈরাচার এবং অপশাসন থেকে বাঁচাতে কংগ্রেসকে সামনে রেখে লড়াই হবে।’’
তাঁর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ এবং সাংসদ-পদ খারিজের পরে এই প্রথম বিহারে আসছেন রাহুল। তাঁকে স্বাগত জানাতে আলাদা করেও প্রস্তুতি নিচ্ছে কংগ্রেস। রাহুলকে নিয়ে শুক্রবারই কংগ্রেসের আলাদা সমাবেশ হওয়ার কথা। সেখানে থাকার কথা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেরও। বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে পটনা আসতে চলেছেন কংগ্রেস নেতারা। বক্সার জেলা কংগ্রেস সভাপতি মনোজ পাণ্ডের কথায়, ‘‘আগামী লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি এখান থেকেই শুরু হয়ে যাবে।’’
প্রস্তুতির নির্যাস কী বেরোবে, পরের কথা। আয়োজনে খামতি নেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy