Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Himachal Pradesh

প্রাকৃতিক দুর্যোগের বলি ৫০! হিমাচল লন্ডভন্ড প্রবল বৃষ্টিতে, উত্তরাখণ্ডে জারি লাল সতর্কতা

রবিবার রাতে সোলান জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ১১ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। অন্য দিকে, শিমলা শহরের একটি শিবমন্দির ধসে পড়ার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত অন্তত ১৫ মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।

An image of natural calamities of Himachal Pradesh and Uttarakhand as rains wreaked havoc

ভারী বর্ষণের জেরে বিধ্বস্ত হিমাচল প্রদেশ। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শিমলা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৩ ২৩:৪৫
Share: Save:

কোথাও মেঘ ভাঙা বৃষ্টি। কোথাও হড়পা বান। কোথাও প্রবল বর্ষণের জেরে ভূমিধস। রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়া ‘প্রকৃতির রোষে’ হিমাচল প্রদেশে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ ছুঁয়েছে। গৃহহীন হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ইউনেস্কো ঘোষিত ‘বিশ্ব ঐতিহ্য ক্ষেত্র’ (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট) শিমলা-কালকা রেলপথের একাংশ ভেসে গিয়েছে জলের তোড়ে। বৃষ্টির তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি হিমালয়ের কোলের পড়শি রাজ্য উত্তরাখণ্ডও। সেখানে ভূমিধসের কারণে স্থগিত হয়ে গিয়েছে শ্রাবণ মাসের চারধাম যাত্রা।

রবিবার রাতে সোলান জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ১১ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। অন্য দিকে, শিমলা শহরের একটি শিবমন্দির ধসে পড়ার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত অন্তত ১৫ মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। মনে করা হচ্ছে, ভেঙে পড়া কংক্রিটের চাঁইয়ের নীচে এখনও চাপা রয়েছেন কয়েক জন পুণ্যার্থী। ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। পাশাপাশি, হিমাচলের মান্ডি জেলার সম্ভল গ্রামে হড়পা বানে ভেসে গিয়েও সোমবার অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু জানিয়েছেন, ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকালিয়ায় সর্বোত ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাঁর সরকার।

প্রসঙ্গত, কয়েক দিন ধরেই হিমাচল এবং উত্তরাখণ্ডে ভারী বৃষ্টি চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ আরও বেড়েছে। পাহাড়ি নদীগুলির জলস্তরও বৃদ্ধি পেয়েছে। হিমাচলে খরস্রোতা বিপাশা নদীর জল বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। প্রায়ই কোথাও না কোথাও ধস নামছে। ধসের কারণে রাস্তা আটকে বিপদে পড়েছেন তীর্থযাত্রী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা।

পশ্চিম হিমালয়ের কোলে অবস্থিত দুই রাজ্যের সরকার প্রাণহানির ঝুঁকি এড়াতে প্রায় ৭০০টি রাস্তা আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে। কোথাও মেরামতির কাজ চলছে। কোথাও বৃষ্টির কারণে তা-ও সম্ভব হচ্ছে না। শুধু শিমলাতেই ৫৯টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে। শিমলা এবং চণ্ডীগড়ের সংযোগকারী শিমলা-কালকা জাতীয় সড়কে ধসের কারণে গত দু’সপ্তাহ ধরে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ধস নেমেছে ঋষিকেশ-চম্বা জাতীয় সড়কেও।

মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, হিমাচল এবং উত্তরাখণ্ডে এখনই থামছে না বৃষ্টিপাত। হিমাচলের চাম্বা, কাংড়া, হমিরপুর, মান্ডি, বিলাসপুর, সোলান ও শিমলার বিচ্ছিন্ন জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে কুলু এবং সিরমৌরে। তবে, মঙ্গলবার দিনের শেষে বৃষ্টিপাত খানিকটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী সুখুর সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে যে, অতিবর্ষণে হিমাচলে ৭,০০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হিমাচলে বর্ষার মরসুম শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৫৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন

মেঘভাঙা বৃষ্টিতে মৃত ১১

রবিবার রাতে হিমাচল প্রদেশের সোলান এলাকার জাডোন গ্রামের বাসিন্দাদের আচমকাই কানে আসে প্রচণ্ড গর্জন। মেঘভাঙা বৃষ্টির প্রবল জলস্রোত কিছু ক্ষণের মধ্যেই আছড়ে পড়ে গ্রামে। ভাসিয়ে নিয়ে যায় বেশ কিছু বাড়িঘর। একটি পরিবারের সাত সদস্য-সহ এই ঘটনায় অন্তত ১১ জন মারা গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সোলানের ডিভিশনাল কমিশনার মনমোহন শর্মা। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) বাহিনী কাজ করছে হিমাচলে।

মন্দির ধসে মৃত্যু পুণ্যার্থীদের

ভূমিধসের কারণে শিমলায় একটি শিবমন্দির ভেঙে পড়ার ঘটনার মৃতের সংখ্যা অন্তত ১৫। মনে করা হচ্ছে, ভেঙে পড়া কংক্রিটের চাঁইয়ের নীচে এখনও চাপা রয়েছেন কয়েক জন পুণ্যার্থী। ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। শিমলার ডেপুটি কমিশনার আদিত্য নেগি জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের তলায় আটকে পড়াদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখু সোমবার পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত স্কুল এবং কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে স্কুল বন্ধের মেয়াদ বৃদ্ধি পেতে পারে। ক্রমাগত বৃষ্টি এবং ধস চাষের কাজে অনেক ক্ষতি করছে। রাজ্যের নানা অংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়িঘরও। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের তরফে এলাকার মানুষকে যথাসম্ভব বাড়ির ভিতরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় না বেরোনো, বিশেষত, বিপাশা বা তার শাখা নদীগুলির ধারেকাছে না যাওয়ার জন্য স্থানীয়দের অনুরোধ করেছে প্রশাসন। প্রসঙ্গত, হরিদ্বারের গঙ্গাও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে।

টানা বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ড

একটানা ভারী বৃষ্টির জেরে বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ডের একাংশে লাল সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। বিরূপ প্রাকৃতিক আবহাওয়ায় এ বার সাময়িক ভাবে চার ধাম যাত্রাও স্থগিত করা হল। উত্তরাখণ্ড প্রশাসন জানিয়েছে, আপাতত মঙ্গলবার পর্যন্ত পূণ্যার্থীদের জন্য গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, কেদারনাথ এবং বদ্রীনাথ ধাম যাত্রা স্থগিত থাকবে। গত দু’দিন ধরে উত্তরের এই রাজ্যে ক্রমাগত ভারী বৃষ্টির জেরে ভূমিধস নেমেছে। বেশ কয়েকটি জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ। বিপর্যয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬০ জন। কমপক্ষে ১৭ জন নিখোঁজ। প্রবল জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে কমপক্ষে ১,১৬৯টি ঘরবাড়ি এবং জমিজমা। খারাপ আবহাওয়ার কারণে দেহরাদূন, নৈনিতাল-সহ উত্তরাখণ্ডের ছ’টি জেলায় লাল সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। প্রশাসন সূত্রে খবর, ভারী বৃষ্টির জেরে ফুলেফেঁপে উঠেছে উত্তরাখণ্ডের নদ-নদী এবং তার শাখাগুলি। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে গঙ্গা, মন্দাকিনী এবং অলকানন্দা। রুদ্রপ্রয়াগ, দেবপ্রয়াগ এবং শ্রীনগরে ধসের জেরে কেদারনাথ, বদ্রীনাথ এবং গঙ্গোত্রী যাওয়ার জন্য জাতীয় সড়কগুলি ছাড়া বহু রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ। টিহরীর কাছে কুঞ্জপুরী বাগরধরে ধস নামায় ঋষিকেষ-চম্বা জাতীয় সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, ঋষিকেশ-দেবপ্রয়াগ-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে বড় গাড়ি চলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

অন্য বিষয়গুলি:

himachal pradesh Uttarakhand Natural Calamity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy