বেঙ্গালুরুর বৈঠকে বিরোধী জোটের নেতানেত্রীরা। ছবি: পিটিআই।
এক পাশে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য পাশে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। সোমবার রাতে বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী দলগুলির ‘প্রারম্ভিক বৈঠকে’ সনিয়া গান্ধীর দু’পাশে দেখা গেল দুই নেতা-নেত্রীকে। খড়্গের পাশে বসেছিলেন, গত ২৩ জুন পটনায় বিরোধী জোটের প্রথম বৈঠকের আয়োজক, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের আসন ছিল খড়্গের পাশে। তারও পরে ছিলেন রাহুল গান্ধী। মমতার অন্য পাশে ছিল তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে নেতা এমকে স্ট্যালিনের আসন।
বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার ঘটনার জেরে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে ধারাবাহিক ভাবে নিশানা করে চলেছেন লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী। এই আবহে সনিয়ার পাশের আসনে মমতার ‘অধিষ্ঠান’ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। তৃণমূল সূত্রের খবর, বেঙ্গালুরুর তাজ ওয়েস্ট এন্ড হোটেলে আয়োজিত ২৬টি বিরোধী দলের প্রাথমিক সৌজন্য বৈঠকে মমতার পায়ের চোট সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন সনিয়া। মমতাও প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। মমতার পাশাপাশি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিরোধী জোটের বৈঠকে যোগ দিতে সোমবার বিকেলে বেঙ্গালুরু পৌঁছন। বৈঠক শেষে মমতা বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে ভাল আলোচনা হয়েছে।’’
পটনায় বিরোধী শিবিরের শীর্ষ বৈঠকের পরে সোম ও মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে বিরোধী শিবিরের দ্বিতীয় বৈঠক সোমবার শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সারা দিন মূল বৈঠক চলবে। তার আগে সোমবার সন্ধ্যায় বেঙ্গালুরুর ওই হোটেলে প্রারম্ভিক বৈঠকের পরে ছিল সনিয়ার নৈশভোজ। সদ্য পায়ের অস্ত্রোপচারের কারণে খুব বেশি দৌড়ঝাঁপ করা বা পায়ে চাপ নেওয়া যাবে না বলে মমতাকে তাঁর চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন। তবুও কংগ্রেস নেত্রীর অনুরোধেই তিনি প্রারম্ভিক নৈশভোজ বৈঠকে যোগ দেন।
গত ২৩ জুন পটনায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারের ডাকা বৈঠকে ১৫টি দল অংশ নিয়েছিল। কংগ্রেসের তরফে হাজির ছিলেন রাহুল গান্ধী এবং দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। ছিলেন মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কেজরীওয়াল ছাড়াও আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ, তার ছেলে তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার, ডিএমকে প্রধান তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন, জেএমএম নেতা তথা ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, জম্মু ও কাশ্মীরের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লা এবং পিডিপির মেহবুবা ছিলেন বৈঠকে।
তিন বাম দলের শীর্ষ নেতা— সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, সিপিআই এমএল-লিবারেশন সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, শিবসেনা (বালাসাহেব) প্রধান তথা মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদবও ছিলেন নীতীশের বৈঠকে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, পটনায় যে সব দল যোগ দিয়েছিল, তারা ছাড়াও এমডিএমকে, কেডিএমকে, ভিসিকে, আরএসপি, ফরোয়ার্ড ব্লক, কেরল কংগ্রেস(মণি), কেরল কংগ্রেস (জোসেফ) এবং ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন অব মুসলিম লিগ, এমএমকে, আপনা দল (কে)-র মতো দলগুলি যোগ দিচ্ছে বেঙ্গালুরুর বৈঠকে।
বিরোধী জোটের এই বৈঠকে সনিয়ার উপস্থিতি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। কর্নাটকের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের বিপুল জয়ের পর এই প্রথম সে রাজ্যে গেলেন সনিয়া। সূত্রের খবর, বিরোধী নেতাদের ওই বৈঠকে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের যৌথ রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে। দেশ জুড়ে একসঙ্গে মোদী-সরকার বিরোধী আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হবে। সে জন্য একটি কমিটিও তৈরি হবে। রাজ্য স্তরে আসন সমঝোতা নিয়েও আলোচনা করবেন বিরোধী নেতারা। বেঙ্গালুরুর বৈঠকে ২৬টি দল যোগ দিচ্ছে বলে কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে। তবে সোমবারের প্রারম্ভিক বৈঠকে যোগ দেননি এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার এবং তাঁর কন্যা সুপ্রিয়া সুলে। এনসিপি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকালে বেঙ্গালুরু পৌঁছবেন সকন্যা শরদ।
বিরোধী জোটের এই বৈঠককে দুর্নীতিগ্রস্থ দলের সমাবেশ বলে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। তিনি বলেন, “এই বৈঠক শুধুমাত্র ফোটোসেশন ছাড়া কিছুই নয়। কোনও দলের মনোস্থিরতা নেই। কোনও নেতা নেই। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। যখন হবে তখন আমরা দেখব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy