Advertisement
E-Paper

পঞ্চায়েত ভোটের হিংসা দূরে সরিয়ে কংগ্রেস চাইছে সনিয়ার নৈশভোজে উপস্থিত থাকুন মমতা

বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া বিমানবন্দর থেকে শহরের দিকে যেতে যেতে টিপু সুলতানের কথাই মনে পড়তে বাধ্য। কারণ রাস্তার দু’পাশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই রাহুল গান্ধী, সীতারাম ইয়েচুরির ছবি।

Opposition Parties Meet in Patna.

পটনায় বিরোধী শিবিরের প্রথম বৈঠক। ছবি: পিটিআই।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩ ০৭:২৬
Share
Save

মহীশূরের টিপু সুলতান ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়তে ফ্রান্স, আফগানিস্তান এমনকি অটোমান সুলতানদের কাছেও দূত পাঠিয়েছিলেন। একটাই লক্ষ্য ছিল, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যে যেখানে রয়েছে, সবাইকে পাশে পাওয়া।

বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া বিমানবন্দর থেকে শহরের দিকে যেতে যেতে টিপু সুলতানের কথাই মনে পড়তে বাধ্য। কারণ রাস্তার দু’পাশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই রাহুল গান্ধী, সীতারাম ইয়েচুরির ছবি। তৃণমূল নেত্রীর ছবির নীচে তাঁর দলের ঘাসফুল প্রতীক। ইয়েচুরির ছবির সঙ্গে কাস্তে-হাতুড়ি-তারা। ঠিক যেন টিপু সুলতানের মতোই বিজেপির বিরুদ্ধে যে যেখানে রয়েছে, সবাইকে একজোট করার চেষ্টা।

এই বিরোধী জোটের আবহে তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম— সব পক্ষই পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের প্রসঙ্গ দূরে রাখতে চাইছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের হিংসায় যে কংগ্রেস কর্মীরাও প্রাণ হারিয়েছেন, কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী যে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছেন, জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে কোনও শিবিরই সেই প্রসঙ্গ তুলতে চাইছে না। উল্টে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব প্রবল ভাবে চাইছেন, মমতা সোমবার রাতে সনিয়া গান্ধীর নৈশভোজে যোগ দিন। তৃণমূল নেতৃত্ব বলছে, বড় দল হিসেবে কংগ্রেসের থেকে যে উদারতা কাম্য, দেরিতে হলেও তা দেখা যাচ্ছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলছেন, সংসদের গত অধিবেশন থেকে এখনও পর্যন্ত কংগ্রেস এই উদারতা দেখিয়েছে।

গত ২৩ জুন পটনায় বিরোধী শিবিরের শীর্ষ বৈঠকের পরে সোম ও মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে বিরোধী শিবিরের দ্বিতীয় বৈঠক হতে চলেছে। মঙ্গলবার সারা দিন মূল বৈঠক চলবে। তার আগে সোমবার সন্ধ্যায় প্রাথমিক বৈঠকের পরে সনিয়া গান্ধীর নৈশভোজ। তৃণমূল সূত্রে প্রাথমিক ভাবে জানানো হয়েছিল, মমতা সোমবার সন্ধ্যায় নৈশভোজের আগে বিরোধী নেতানেত্রীদের প্রাথমিক কথাবার্তায় যোগ দেবেন। তবে সদ্য পায়ের অস্ত্রোপচারের কারণে খুব বেশি দৌড়ঝাঁপ করা বা পায়ে চাপ নেওয়া সম্ভব হবে না তাঁর।

কংগ্রেস নেতৃত্ব চাইছেন, মমতা নৈশভোজেও থাকুন। কারণ যেখানে বৈঠক হবে, সেখানেই নৈশভোজের আয়োজন করা হচ্ছে। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, মমতা নৈশভোজে যোগ দিতে পারবেন কি না, তা চিকিৎসকদের পরামর্শের উপর নির্ভর করছে। কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, “সোমবার সন্ধ্যার বৈঠকে বহু দিন পরে সনিয়া ও মমতা মুখোমুখি হবেন। দুই নেত্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক অনেক কিছুই বদলে দিতে পারে।”

কংগ্রেস, তৃণমূল, এমনকি সিপিএমও যখন রাজ্য স্তরে বিরোধিতা ভুলে জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে এক টেবিলে বসতে চাইছে, তখন বিজেপি রবিবার সারা দিন কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে ফাটল তৈরির চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিন কংগ্রেস কর্মী প্রাণ হারালেও কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্ব তা নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করেননি।

রবিবার সে দিকেই আঙুল তুলে বিজেপির আইটি সেলের নেতা অমিত মালবীয়র প্রশ্ন, ‘রাহুল গান্ধী কি পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে খুনোখুনি নিয়ে মুখ খোলার সাহস সঞ্চয় করতে পেরেছেন? এই নির্বাচনে অনেক কংগ্রেস কর্মীকেও ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। না কি রাহুল গান্ধী কাপুরুষ?’

বেঙ্গালুরুর রাস্তায় ডিকে শিবকুমারের পাশেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি।

বেঙ্গালুরুর রাস্তায় ডিকে শিবকুমারের পাশেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। —নিজস্ব চিত্র।

কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, অনেক রাজ্যেই আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের বিরোধ থাকবে। কিন্তু তা দূরে রেখে বিজেপিকে হারাতেই কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলি জাতীয় স্তরে এককাট্টা হতে চাইছে। সোম ও মঙ্গলবার সেই ঐক্যকেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হবে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, কোন কোন বিষয় নিয়ে বিরোধী দলগুলি লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে যেতে পারে, তা ঠিক করা হবে। ইতিমধ্যেই তার একটি প্রাথমিক খসড়া সব দলের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। জোটের একটি নাম দেওয়ার কথা মাথায় রাখছেন নেতারা। জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী জোটকে কী ভাবে রাজ্য স্তরে নির্বাচনী বোঝাপড়ায় নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়েও আলোচনা হবে। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কংগ্রেসের হিসেব অনুযায়ী, সোম ও মঙ্গলের বৈঠকে মোট ২৬টি দলযোগ দিতে চলেছে। পটনায় ১৫টি দল যোগ দিয়েছিল।

তৃণমূল শিবির থেকে ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, কংগ্রেস যদি মেঘালয়ে তাদের লোকসভা আসন ছাড়তে রাজি থাকে, তা হলে তৃণমূলও পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে দু’টি লোকসভা আসন ছাড়ার কথা ভাববে। শনিবার কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্ব অসম বাদে উত্তর-পূর্বের অন্য রাজ্যগুলির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে মেঘালয়, ত্রিপুরার কংগ্রেস নেতারা বলেছিলেন, তাঁরা নিজেদের রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় আগ্রহী নন।

বিজেপি এখানেও কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের ফাটল তৈরি করতে চাইছে। অমিত মালবীয়র মন্তব্য, ‘পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুনি সরকারের বিরুদ্ধে অধীররঞ্জন চৌধুরী লড়ছেন। কিন্তু কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়া করছেন। কংগ্রেস চিরকালই রাজ্য নেতৃত্বের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়। তার ফলেই কংগ্রেস শুধু রাহুল গান্ধীর চারপাশে ঘুরঘুর কিছু করা লোকের দলে পরিণত হয়েছে।’

রবিবার বেঙ্গালুরু পৌঁছে যাওয়া কংগ্রেস নেতারা এ সব শুনে মুচকি হাসছেন। তাঁদের বক্তব্য, বিজেপির এই সব মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, বিরোধী ঐক্য দেখে তারা আতঙ্কিত। এক সময় কংগ্রেস-মুক্ত ভারতের কথা বলা বিজেপি এখন প্রদেশ কংগ্রেসের ফায়দা নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছে!

TMC Congress Bangalore Oppositions Anti BJP Alliance Opposition Unity

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।