Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Election Commission of India

পরিযায়ী ভোটে কমিশনের ব্যবস্থায় নারাজ বিরোধীরা

কংগ্রেস আহ্বান জানালেও তৃণমূল রবিবার দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বিরোধী দলগুলির বৈঠকে যোগ দেয়নি। তবে কেন্দ্রের ওই প্রস্তাবে তাদেরও আপত্তি রয়েছে।

সোমবার নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলির বৈঠক ডেকেছে।

সোমবার নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলির বৈঠক ডেকেছে। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:১১
Share: Save:

ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকেরা ভোট দিন, তা সকলেই চান। কিন্তু তার জন্য নির্বাচন কমিশনের আরভিএম বা ‘রিমোট ভোটিং মেশিন’ চালুর প্রস্তাব নিয়ে প্রায় সব বিরোধী দলই আপত্তি তুলছে। সোমবার নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলির বৈঠক ডেকেছে। তার আগে কংগ্রেস-সহ ১৬টি বিরোধী দল এককাট্টা হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সবাই মিলে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করা হবে।

কংগ্রেস আহ্বান জানালেও তৃণমূল রবিবার দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বিরোধী দলগুলির বৈঠকে যোগ দেয়নি। তবে কেন্দ্রের ওই প্রস্তাবে তাদেরও আপত্তি রয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকের সংজ্ঞা কী, তাদের সংখ্যাই বা কত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল। একই সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের সন্দেহ, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে ভোটে জিততেই বিজেপি পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ভোটদানের ব্যবস্থা করতে চাইছে। কারণ এই রাজ্যগুলি থেকেই সিংহ ভাগ পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যান। নির্বাচন কমিশন চাইছে, ভিন্ রাজ্য থেকেই পরিযায়ী শ্রমিকেরা ‘রিমোট ভোটিং মেশিন’-এর মাধ্যমে নিজেদের লোকসভা বা বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট দিতে দিন। তৃণমূলের প্রশ্ন, সেখানে যে তাঁদের উপরে চাপ তৈরি করে ভোট দেওয়ানো হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? পরিযায়ী শ্রমিকেরা যেখান থেকে নিজেদের কেন্দ্রে ভোট দেবেন, সেখানে ওই কেন্দ্রের প্রার্থীদের কোনও পোলিং এজেন্টও থাকবেন না।

নির্বাচন কমিশন কেন পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ভোটদান ব্যবস্থা চালু করতে চায়, তার জন্য দূরনিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিন ভোটগ্রহণ যন্ত্র বা আরভিএম কী ভাবে কাজ করবে, তা বোঝাতে কমিশন সোমবার রাজনৈতিক দলগুলির বৈঠক ডেকেছে। তার পরে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে দলগুলির লিখিত মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। তার আগে রবিবার বিরোধী দলগুলির বৈঠক বসে। কংগ্রেসের ডাকে বিরোধী দলগুলির বৈঠকে জেডিইউ, শিবসেনা, ন্যাশনাল কনফারেন্স, সিপিএম, সিপিআই, জেএমএম, আরজেডি, পিডিপি-র মতো বিরোধী দল হাজির ছিল। বৈঠক শেষে কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ বলেন, এনসিপি ও এসপি-ও নিজেদের মতামত জানিয়েছে। সবাই সর্বসম্মত ভাবে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে। পরিযায়ী শ্রমিকের সংজ্ঞা কী, কত দিন নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্য রাজ্যে থাকলে কাউকে পরিযায়ী শ্রমিক বলা হবে, তা নিয়ে সকলেরই প্রশ্ন রয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কত, কী ভাবে ৩০ কোটি সংখ্যা ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে এই প্রশ্ন তোলা হবে। ফের ২৫ জানুয়ারি বিরোধী দলগুলি বৈঠকে বসবে। তার পরে আলাদা ভাবে বা এক সঙ্গে এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েদেওয়া হবে।

তৃণমূলের তরফে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে যোগ দেবেন। তবে এ দিন কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে তৃণমূলের কেউ যোগ দেননি। দিগ্বিজয় জানান, তাঁরা এ বিষয়ে তৃণমূলের সঙ্গেও আলোচনা করবেন। বিএসপি বিরোধীদের বৈঠকে যোগ না দিলেও মায়াবতীও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন।

নির্বাচন কমিশনের ২০১৯-এর হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ৩০ কোটি ভোটার ভোট দিচ্ছেন না। এদের মধ্যে যাঁরা বিয়ে, রোজগার, শিক্ষা ইত্যাদি কারণে মূল বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন, তাঁদের সংখ্যাই বেশি। প্রায় ৮৫ শতাংশ। তবে কমিশন মানছে, পরিযায়ী শ্রমিক বা পড়ুয়াদের কোনও কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার নেই। সূত্রের খবর, আইন মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে ইতিমধ্যেই কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, শিবসেনার মতো দলের সাংসদরা এ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। রাজনৈতিক দলগুলির বক্তব্য, আরভিএম চালু করে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোটদানের ব্যবস্থা করে নির্বাচন কমিশনের সন্তুষ্টির চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলির বিশ্বাস থাকা দরকার। এর সঙ্গে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্ন জড়িত।

অন্য বিষয়গুলি:

Election Commission of India Migrant Voters
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE