রাহুল গান্ধী ছবি: পিটিআই।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আজ সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ দেখাল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ। যাকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনদের মতো শরিক দলের নেতাদের পাশে থাকার বার্তা হিসাবে দেখা হচ্ছে। পরে লোকসভায় নিজের বক্তব্যে রাহুল গান্ধী নিজেকে কেবল কংগ্রেসের নন, সামগ্রিক ভাবে সমস্ত বিরোধী দলের প্রতিনিধি বলে বার্তা দেন। পাল্টা চালে বিরোধী জোটের শরিকদের দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব বাড়ানোর কৌশল নেয় বিজেপি নেতৃত্ব। ঠিক যে ভাবে সরকার গঠনের সময়ে এনডিএ-র শরিকদের মধ্যে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করেছিল ‘ইন্ডিয়া’।
গত কালই ঠিক হয়েছিল আজ সংসদে গান্ধী মূর্তির সামনে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির অপব্যবহার নিয়ে বিক্ষোভ দেখাবেন বিরোধী দলগুলি। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে আজ নতুন সংসদের মূল প্রবেশ পথ মকর দ্বারের সামনে ওই বিক্ষোভ দেখান বিরোধী দলের নেতারা। যুক্তি হিসাবে বলা হয়, গান্ধী মূর্তি নতুন সংসদ থেকে অনেক দূরে সংসদ চত্বরের এক কোণায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই কারণে গান্ধী মূর্তির পরিবর্তে মকর দ্বারকেই বেছে নেওয়া হয়। আজ ওই বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন আম আদমি পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস, শিবসেনা (উদ্ধব), জেএমম-এর মতো ইন্ডিয়া-র শরিক দলগুলি। কংগ্রেস নেতা রাজীব শুক্ল বলেন, “বিরোধী দলের নেতাদের শায়েস্তা করতে যে ভাবে সরকার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে অপব্যবহার করছে, তার বিরুদ্ধে সব বিরোধী দলই ঐক্যবদ্ধ।”
লোকসভায় দিল্লিতে একজোটে লড়েছিল কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি। সাফল্য না আসায় আগামী দিনে একা লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। সেই প্রেক্ষিতে আজ আপ নেতৃত্বের সমর্থনে কংগ্রেসের দাঁড়ানো রাজনীতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। রাজনীতির অনেকের মতে, বিরোধী জোটের ঐক্যবদ্ধ চেহারা তুলে ধরতেই এক মঞ্চে হাজির হয়েছেন
বিরোধী দলগুলি।
পরে লোকসভাতেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহার নিয়ে বিরোধী দলগুলি যে এক জোট রয়েছে, সেই বার্তা দেন রাহুল গান্ধী। আজ লোকসভায় রাষ্ট্রপতির ধন্যবাদ জ্ঞাপন বিতর্কে অংশ নিয়ে রাহুল নিজেকে কেবল কংগ্রেসের নয় সামগ্রিক ভাবে গোটা বিরোধী শিবিরের মুখ হিসাবে তুলে ধরেন। রাহুলের কথায়, “আমি কেবল কংগ্রেস দলের প্রতিনিধিত্ব করি না। আমি প্রতিটি বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব করি। তাই হেমন্ত সোরেন বা অরবিন্দ কেজরীওয়ালের জেলে থাকা আমায় আঘাত করে।” এর পর শাসক শিবিরের উদ্দেশ্যে রাহুল বলেন, “আপনারা যখন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহার করেন, তখন এক জন আমজনতা তথা সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তি হিসাবে তাঁদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।”
তৃতীয় বারের মোদী সরকার শরিক নির্ভর। এনডিএ জোটে ভাঙন ধরাতে তাই ফলপ্রকাশের পর থেকেই তৎপর ছিল ইন্ডিয়া জোট। আজ পাল্টা চালে দুর্নীতির প্রশ্ন তুলে ইন্ডিয়া-য় ফাটল ধরাতে তৎপর হন বিজেপি নেতৃত্ব। রাষ্ট্রপতির ধন্যবাদজ্ঞাপন বিতর্কের সরকার পক্ষের প্রথম বক্তা হিসাবে বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর বলেন, “জেলওয়ালে (অরবিন্দ কেজরীওয়াল) ও বেলওয়ালে (হেমন্ত সোরেন)-কে সঙ্গে নিয়ে এই ইন্ডিয়া গঠন করা হয়েছে। তাতে লাভ কিছুই হয়নি। দিল্লিতে কংগ্রেস ও অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল একটিও আসন পায়নি। আবার দুই দল পঞ্জাবে একে অপরের সঙ্গে লড়েছে।” পাশাপাশি ইন্ডিয়া-র সঙ্গী তৃণমূল কংগ্রেসের নাম না নিয়ে অনুরাগ বলেন, “জোটে এমন দলও রয়েছে যাদের রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, চিটফান্ড কেলেঙ্কারির ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে।” পরে পঞ্চাশ বছর আগের জরুরি অবস্থা জারি করার প্রশ্নে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে অনুরাগ আক্রমণ শানালে পাল্টা সরব হন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। যা দেখে কল্যাণের উদ্দেশে অনুরাগের কটাক্ষ, “আপনাকে তো বলছি না দাদা। কংগ্রেসকে বলছি। আপনি কেন উড়ন্ত তির নিজের দিকে টেনে নিচ্ছেন।” হেসে বসে পড়েন কল্যাণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy