ফাইল চিত্র।
এ বার তা হলে কী ভাবে সরকার বিরোধী সমালোচনা সামলানো হবে? রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে যে স্থগিতাদেশ জারি হয়ে গেল!
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই প্রশ্নটা ছুড়লেন কেন্দ্রীয় সরকারেই প্রাক্তন আমলা অনিল স্বরূপ।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস নির্বাচনী ইস্তাহারে বলেছিল, ক্ষমতায় এলে ব্রিটিশ জমানার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রত্যাহার করা হবে। নির্বাচনের প্রচারে তা নিয়ে কংগ্রেসকে তুলোধনা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছিলেন, ‘এ বার তো কংগ্রেস খোলাখুলিই বলছে, কোনও আরবান নকশাল দেশবিরোধী কাজ করলেও তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করবে না।’
আজ কংগ্রেস সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রশ্ন তুলল, সরকারের সমালোচকদের হেনস্থা করার কালো আইন কারা রেখে দিতে চেয়েছিল? কে সরকারের সমালোচনা করার রাষ্ট্রধর্মকে দেশদ্রোহ বলেছিলেন? কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর মন্তব্য, ‘সত্যি বলাটা দেশভক্তি, দেশদ্রোহ নয়। সত্যি শোনাটা রাজধর্ম। সত্যকে দমন করা প্রতারণা।’
মোদী সরকারই রাষ্ট্রদ্রোহ আইন পুনর্বিবেচনা করতে রাজি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সুপ্রিম কোর্টে বলেছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই নাগরিক স্বাধীনতা, মানবাধিকারের পক্ষে সওয়াল করেন। স্বাধীনতার ৭৫-তম বছরে তিনিই ব্রিটিশ জমানার অপ্রয়োজনীয় বোঝা ছেড়ে ফেলার কথা বলেন।
আজ সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের পুনর্বিবেচনা না-হওয়া পর্যন্ত তা মুলতুবি রাখার নির্দেশ দেওয়ার পরে বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী সরকার চাইছিল না আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক। তাই পুনর্বিবেচনার কথা বলে আইন রেখে দিতে চাইছিল।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য বলছে, রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বা ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ ধারায় ২০১৫ থেকে ২০২০— মোদী সরকারের ছয় বছরে ৩৫৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। ৫৪৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু মাত্র ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা গিয়েছে। গত দশ বছরে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে যত মামলা হয়েছে, তার সিংহ ভাগই হয়েছে মোদী জমানায়। প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগির বক্তব্য, ‘‘খুব হালকাচ্ছলে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রয়োগ করা হচ্ছিল। খুব ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রদ্রোহে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত হতে দেখেছি।’’ সুপ্রিম কোর্টের রায়কে তাই ‘সাহসী পদক্ষেপ’ বলেই মনে করছেন রোহতগি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্তের পুরো কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নিজে ফৌজদারি দণ্ডবিধি সংস্কারের জন্য দু’বছর আগে যে কমিটি তৈরি করেছিল, সেই কমিটিও রাষ্ট্রদ্রোহ আইন তুলে দেওয়া বা তার সংশোধনের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সেই রিপোর্ট ধামাচাপা পড়ে যায়। উল্টো দিকে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে মামলা, গ্রেফতারি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। কংগ্রেস নেতা, আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস সরকারের আমলে অন্তত আইনের এমন অপব্যবহার হয়নি।’’
সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময় মামলাকারীদের হয়ে আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেছিলেন, প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুও রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে আপত্তিজনক বলেছিলেন। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জবাবে বলেছিলেন, নেহরু যা করতে পারেননি, বর্তমান সরকার সেটাই করছে। সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের মামলাকারী মহুয়া মৈত্রর মন্তব্য, ‘‘নেহরু আদালতে মিথ্যা বলেননি। দেশের মানুষের উপরে গোয়েন্দাগিরি করেননি। সরকারের সমালোচকদের জেলে পোরেননি।’’ মহুয়ার আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণন আজ প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের হাতে এক পৃষ্ঠার নোট তুলে দিয়ে জানান, রাষ্ট্রদ্রোহ আইন স্থগিত রাখা হলে তার কী প্রভাব পড়বে। আদালতকে কোন কোন ক্ষেত্রে নির্দেশিকা জারি করতে হবে। শঙ্করনারায়ণনকে ধন্যবাদ জানিয়ে মহুয়া বলেছেন, ওই এক পৃষ্ঠার নোটই খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy