প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
রামমন্দিরকে রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগানোর কৌশল মানতেও পারছেন না। আবার ‘হিন্দু বিরোধী’ তকমা লেগে যাওয়ার ভয়ে মন খুলে রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সমালোচনাও করতে পারছেন না। বিরোধীরা মহা দোটানায় পড়েছেন। লোকসভা ভোটের আগে রামমন্দিরকে ঘিরে নরেন্দ্র মোদী গোটা দেশে আবেগের ঢেউ তুলতে চাইছেন। তার মোকাবিলা কী ভাবে করা হবে, বিরোধী শিবির তা নিয়ে এখনও মনস্থির করতে পারেনি।
কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা বলছেন, এত দিন ধর্ম ছিল ব্যক্তিগত আস্থার বিষয়। এখন তাকে সরকারি অনুষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেই পুরোহিত সেজে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বসে পড়ছেন। কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতার মন্তব্য, ‘‘ভারতের মানুষ বরাবরই ধার্মিক। জীবনের সব ক্ষেত্রেই ধর্মবিশ্বাস বড় ভূমিকা নেয়। সব ধর্মীয় স্থানকেই মানুষ সম্মান করে। কিন্তু বিজেপি-আরএসএস এখানে ‘হিন্দু খতরে মে হ্যায়’ বলে ধুয়ো তুলতে চাইছে। দেখাতে চাইছে, রামমন্দিরের মাধ্যমেই হিন্দুধর্মের পুনরুত্থান হল। নরেন্দ্র মোদী সেই পুনরুত্থানের পুরো কৃতিত্ব নিয়ে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর গদিতে ফিরতে চাইছেন।’’
মুশকিল হল, ঘরোয়া আলোচনায় এ কথা বললেও কংগ্রেস বা ইন্ডিয়া জোটের কোনও নেতাই এর সরাসরি বিরোধিতা করতে পারছেন না। অযোধ্যায় না গেলেও প্রায় সব বিরোধী দলের নেতানেত্রীই ২২ জানুয়ারি কোনও না কোনও মন্দিরে বা ধর্মস্থানে হাজির হয়েছেন। ফেসবুকে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় রামের জয়গানও করেছেন। একমাত্র সিপিএমের হয়ে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষ দেশের সরকার কোনও একটি বিশেষ ধর্মকে তুলে ধরতে পারে না। এই কারণেই অতীতে দেশের প্রধানমন্ত্রীরা সরকারি ভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন না।’’
রাহুল গান্ধী গত সপ্তাহে বলেছিলেন, বিজেপি-আরএসএস মিলে রামমন্দিরের অনুষ্ঠানকে নরেন্দ্র মোদী-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে পরিণত করে ফেলেছে। সেই কারণেই মল্লিকার্জুন খড়্গে-সনিয়া গান্ধীরা ওই অনুষ্ঠান এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু মোদী যে ভাবে রামকে ঘিরে ভাবাবেগের ঢেউ ভোটের বাক্সে টানতে চাইছেন, তার মোকাবিলা কী ভাবে করবে কংগ্রেস? জবাবে রাহুল গান্ধীর দাবি, ‘‘এমন কোনও ঢেউ নেই। আমি আগেও বলেছি যে, এটা বিজেপির রাজনৈতিক কর্মসূচি। ওখানে নরেন্দ্র মোদী পুরো অনুষ্ঠান করেছেন। আমাদের কর্মসূচি কী, সেটা আমাদের কাছে স্পষ্ট। আমরা দেশকে মজবুত করতে পাঁচটি ন্যায়ের কথা মানুষের সামনে রাখব।’’
সিপিএমের পলিটব্যুরো নেত্রী বৃন্দা কারাটের মতে, অযোধ্যার অনুষ্ঠান যে পুরোপুরি বিজেপি-আরএসএসের রাজনৈতিক অনুষ্ঠান ছিল, তার সবথেকে বড় প্রমাণ হল, মঞ্চে মোহন ভাগবতের উপস্থিতি। বৃন্দার প্রশ্ন, ভাগবত কোন পদাধিকার বলে মঞ্চে ছিলেন? বৃন্দা বলেন, ‘‘মানুষের ধর্মীয় আস্থাকে সম্মান করতে হবে। কিন্তু ধর্ম ও রাজনীতিকে মেশালে চলবে না। এখানে ধর্মনিরপেক্ষ দেশের প্রধানমন্ত্রী শঙ্করাচার্যের মতো নিজেই প্রাণপ্রতিষ্ঠায় বসে পড়ছেন। ধর্মবিশ্বাসী মানুষকেও বুঝতে হবে, প্রধানমন্ত্রী আসলে ধর্মকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছেন।’’
বিরোধী শিবিরের নেতানেত্রীদের চিন্তার কারণ হল, রামমন্দিরের ভাবাবেগেই বিজেপি থামবে না। তার সঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক দক্ষতা যোগ হবে। নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার পরে বিজেপি নানা ক্ষেত্রে মোদী সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রচারে নামবে। তার মোকাবিলা করার মতো পুঁজি কি ইন্ডিয়া-র কাছে রয়েছে?
আজ রাহুল বলেছেন, ‘‘এক দিকে নরেন্দ্র মোদী-আরএসএস, অন্য দিকে ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়া একটা বিচারধারা। একটা ভাবনা। ইন্ডিয়া জোটের কাছে ভারতের ৬০ শতাংশ ভোট রয়েছে।’’ কিন্তু বিরোধী শিবিরের বাড়তি চিন্তা হল, সেই ৬০ শতাংশ বিরোধী ভোট যে একটি বাক্সেই পড়বে, তা এখনও আসন সমঝোতার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy