কংগ্রেসকে পাশে চায় নীতীশ। ফাইল চিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে রাহুল গান্ধী, নীতীশ কুমার থেকে শরদ পওয়ার— সকলেই নানা ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধী ঐক্যের কথা বলছেন। কিন্তু বিরোধী ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও তাঁদের নিজেদের মধ্যেই মতভেদ উঠে আসছে।
মমতা নেতাজি ইন্ডোর থেকে নীতীশ, হেমন্ত সোরেন, অখিলেশ যাদব ও অন্য বন্ধুদের নিয়ে জোট করার কথা বললেও নীতীশ কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে চলতে চাইছেন না। কংগ্রেস সম্পর্কে মমতার ‘অ্যালার্জি’ থাকলেও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী সনিয়া-রাহুল গান্ধীর সঙ্গে আলোচনা করেই এগোতে চাইছেন। আবার বিরোধী ঐক্য গড়তে পওয়ার নীতীশকে পটনা, কলকাতা, মুম্বইতে বিরোধীদের নিয়ে সভা বা কর্মসূচির পরামর্শ দিলে তৃণমূল কংগ্রেস শিবির প্রশ্ন তুলছে, বিজেপি-বিরোধী জোটের আলোচনা করতে একমাত্র পওয়ারের বাড়ির বৈঠকখানারই প্রয়োজন হবে, এ কথা কে বলল!
তৃণমূল সূত্র জানাচ্ছে, মমতার সঙ্গে নীতীশের ঢাকঢোল পিটিয়ে কোনও বৈঠক হয়নি ঠিকই, কিন্তু প্রয়োজনীয় বিরোধী কৌশল নিয়ে তৃণমূল এবং জেডিইউ নেতৃত্বের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে। তৃণমূলের এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতার কথায়, “বিজেপি-বিরোধী জোটের আলোচনা করতে একমাত্র শরদ পওয়ারের ড্রয়িংরুম বা সংসদে কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গের দফতরই দরকার, এমনটা কে বলল!’’
কংগ্রেসের সম্পর্কে মমতার ‘অ্যালার্জি’ থাকলেও নীতীশ গত সোমবার দিল্লিতে এসেই প্রথমে রাহুলের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। শুক্রবার বিহারে ফিরে গেলেও সনিয়া বিদেশ থেকে ফিরলে নীতীশ ফের দিল্লিতে এসে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করতে চান। আজ রাহুল তামিলনাড়ুতে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’-র ফাঁকে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, ‘‘গোটা বিরোধী শিবিরের দায়িত্ব হল একজোট হওয়া। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, প্রত্যেকের তাতে ভূমিকা রয়েছে। এমন নয় যে কংগ্রেসই একমাত্র দল। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।’’
সূত্রের খবর, পওয়ার নীতীশের সঙ্গে পটনা, কলকাতা, মুম্বইতে বিরোধীদের জনসভা ডাকার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। রবিবার দিল্লিতে এনসিপির জাতীয় সম্মেলন। সেখান থেকেও পওয়ার বিরোধী ঐক্যের বার্তা দেবেন। তার আগে শনিবার এনসিপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাশ হবে। বাম শিবিরের সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজাদের সঙ্গেও নীতীশ কথা বলেছিলেন। উল্টো দিকে তৃণমূল পওয়ার, ইয়েচুরিদের ‘সংখ্যাহীন অতএব গুরুত্বহীন’ বলে তকমা দিচ্ছে। তৃণমূলের বক্তব্য, ইয়েচুরি বা রাজার পরামর্শ নিয়ে বিরোধী জোটের আলোচনা হবে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমনটা নয়।
তৃণমূল নেত্রী বৃহস্পতিবার কলকাতায় বলেছিলেন, ২০২৪-এর ভোটে শুধু চার-পাঁচটি রাজ্য থেকেই বিজেপি শ’খানেক জেতা আসন হারাবে। তৃণমূলের অঙ্ক হল, নীতীশের দল বিহারে ১৮টি আসনে লড়বে। খুব বেশি হলে ১০টি আসন মিলবে। একই ভাবে অখিলেশ উত্তরপ্রদেশে ২০টি এবং সোরেন বড়জোর দু’টি বা তিনটি আসন পাবেন। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ৩৩ ছাড়াবে না। অন্য দিকে মমতা একাই এ বার বাংলা থেকে ৩৫টি আসন আশা করছেন। ফলে যে বিরোধী ব্লকটির কথা মমতা বলেছেন, তার রাশ তৃণমূল নেত্রীর হাতেই থাকবে। উল্টো দিকে, জেডিইউ, এনসিপি, বাম নেতাদের মতে, এতে বিজেপিকে হটানো যাবে না। কংগ্রেস তো বটেই, আরও বিরোধীদের এককাট্টা করতে হবে।
১৯৮৯-এ অ-কংগ্রেসি সরকার গঠনে হরিয়ানার জনতা দলের নেতা দেবী লাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। ২৫ সেপ্টেম্বর দেবী লালের জন্মদিনে তাঁর পুত্র ওমপ্রকাশ চৌটালা হরিয়ানার ফতেহাবাদে জনসভার ডাক দিয়েছেন। তাতে তিনি সব বিরোধীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। নীতীশ, তেজস্বী যাদব থাকবেন। পওয়ার, অখিলেশ, ফারুক আবদুল্লাও থাকতে পারেন। আজ চৌটালা ইয়েচুরির সঙ্গে দেখা করে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মমতাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাঁর যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। একই ভাবে একদা কংগ্রেস-বিরোধী চৌটালা এখন বিজেপিকে হটানোর ডাক দিলেও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।
নিজেদের মধ্যেই এত রেষারেষি থাকলে শেষ পর্যন্ত বিরোধী রাজনীতির মোয়া পাকানোর ক্ষেত্রে কত দূর সাফল্য আসবে, সেই প্রশ্ন বিরোধী শিবিরেই থেকে যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy