প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। ছবি: পিটিআই।
ভারতীয় দণ্ডবিধি তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ জমানায়, ১৮৬০ সালে। সাক্ষ্য আইন তৈরি হয় ১৮৭২-এ। ফৌজদারি দণ্ডবিধি তৈরি হয় ১৯৭৩-এ। এই তিন আইন বদলে এ বার ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও সাক্ষ্য অধিনিয়ম চালু করতে অগস্ট মাসে সংসদে বিল পেশ হয়েছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, তাদের সাংসদদের আপত্তি সত্ত্বেও দেড় মাসের মধ্যেই বিজেপি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সেই তিনটি বিলে সিলমোহর আদায় করিয়ে নিতে চাইছে। ২৭ অক্টোবর তিনটি বিল নিয়ে রিপোর্ট পাশ করাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে।
প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম, তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এ নিয়ে আপত্তি তুলে স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিজেপি সাংসদ ব্রিজ লালকে চিঠি পাঠিয়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন, কেন এই তাড়াহুড়ো? বিরোধী সাংসদেরা একজোট হয়ে ‘ডিসেন্ট নোট’ও দিতে চলেছেন।
চিদম্বরম ও ডেরেক, দু’জনেই ২২ অক্টোবর ব্রিজ লালকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন, ২১ অক্টোবর রাতে তাঁরা তিনটি বিলের খসড়া রিপোর্ট হাতে পেয়েছেন। ২৭ তারিখ তিনটি বিলের খসড়া রিপোর্ট পাশ করানো হবে। চিদম্বরম জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হলেও তাঁর পক্ষেও মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে তিনটি বিলের খসড়া রিপোর্ট পড়ে মতামত জানানো সম্ভব নয়। তার উপরে দশেরা উৎসব রয়েছে।
একই যুক্তি ডেরেক ও’ব্রায়েনেরও। চিঠিতে তাঁর প্রশ্ন, দুর্গাপুজোর মধ্যে খসড়া রিপোর্ট হাতে এসেছে। ২৭ অক্টোবর কলকাতায় দুর্গাপুজো কার্নিভাল। ২৮ অক্টোবর লক্ষ্মীপুজো। পশ্চিমবঙ্গের সাংসদেরা এই সময় ব্যস্ত থাকবেন জেনেও কেন স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হল? এ বিষয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দলের এক নেতা বলেন, “বিজেপি কোনও দিনই বাংলার মানুষের সংস্কৃতি, সংবেদনশীলতা বুঝতে পারে না। এটা তারই নমুনা।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বিজেপি সাংসদদেরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা। চেয়ারম্যান-সহ ৩০ জন সদস্যের কমিটিতে বিজেপির সদস্য ১৬, বিজু জনতা দলের ২, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ১, শিবসেনার (শিন্দে) ১ জন এবং বাকি ১০ জন বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদ। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, তাই সংখ্যার জোরে বিজেপি তিন বিল নিয়ে রিপোর্ট পাশ করিয়ে নেবে। উল্টো দিকে, বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদেরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে খসড়া রিপোর্টে আপত্তি জানিয়ে ‘ডিসেন্ট নোট’ দিতে চলেছেন। কংগ্রেসের চিদম্বরম, দিগ্বিজয় সিংহ, অধীর চৌধুরী, রভনীত সিংহ বিট্টু, তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন ও কাকলি ঘোষ দস্তিদার, ডিএমকে-র এন আর এলানগো ও দয়ানিধি মারান, জেডিইউর দুই সাংসদ, মোট দশ জন ‘ডিসেন্ট নোট’ দিতে চলেছেন।
বিরোধী সাংসদদের বক্তব্য, এক, তিনটি বিলের ৯৫ শতাংশই পুরনো আইনের হুবহু নকল।দুই, ঔপনিবেশিক আইন বলে পুরনো আইন বদলানোর যুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই বিলের কিছু ধারা আরও বেশি ঔপনিবেশিক। তিন, ইউএপিএ, এনএসএ-র মতো কঠোর আইনের ধারা তিন বিলে ঢোকানো হয়েছে। চার, বিল নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়নি। পাঁচ, তাড়াহুড়ো করে এই বিল পাশ করিয়ে মোদী সরকার লোকসভা নির্বাচনের আগে চমক দিতে চাইছে।
দু’সপ্তাহ আগেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনটি বিল নিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রত্যাহার করার কথা বলেছে। পরিবর্তে তিন বিলে আরও কঠোর ও স্বেচ্ছাচারী আইন আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। দেশের আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীদের ওই নতুন আইন খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেন মমতা।
তৃণমূলের তরফে ডেরেক ও’ব্রায়েন সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিত, প্রাক্তন বিচারপতি মদন লোকুর থেকে শুরু করে ফালি নরিম্যান, সিদ্ধার্থ লুথরা, রাজীব ধাওয়ান, রেবেকা জন, মেনকা গুরুস্বামীর মতো আইনজীবীদের মতামত নিক স্থায়ী কমিটি। কিন্তু তা হয়নি। বিরোধীদের অভিযোগ, স্থায়ী কমিটিতে যাঁদের ডাকা হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই কোনও না কোনও ভাবে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত।
ডেরেক চিঠিতে স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানকে লিখেছেন, “তাড়াহুড়ো করে এত গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট পাশ করালে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে আর্থিক ও সামাজিক ভাবে প্রান্তিক মানুষের প্রতি অবিচার করা হবে। দলগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে, স্বল্পমেয়াদি নির্বাচনী চমকের পথে না হেঁটে এ নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত।” ২৭ তারিখের বৈঠক পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন চিদম্বরমও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy