দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পোস্টার। নিজস্ব চিত্র।
পেট্রোল-ডিজেল একশো পেরিয়ে গিয়েছে অনেক দিন। দুর্মূল্য রান্নার গ্যাস। কোভিড কালে কয়েক লক্ষ দেশবাসীর মৃত্যু, অর্থনীতির সঙ্কোচন, চাকরি হারিয়ে মানুষ যখন চরম দুরবস্থা, তখন সব সমস্যা একশো কোটির টিকাকরণের সাফল্যে ঢেকে ফেলার কৌশল নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কথায়, একশো কোটি টিকাকরণ কেবল একটি সংখ্যা নয়, এর মধ্যে দিয়ে দেশের শক্তি প্রতিফলিত হয়েছে। বিরোধীদের পাল্টা যুক্তি, যাবতীয় সমস্যাকে একশো কোটির টিকাকরণের জাদুদণ্ড বুলিয়ে ভুলিয়ে দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। আসলে অর্থনৈতিক সঙ্কট, পেট্রল ডিজেলের সেঞ্চুরি পেরিয়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা মুছতেই টিকাকরণের ঢাকা বাজানোর কৌশল নিয়েছে শাসক শিবির।
পর পর আসা করোনার দু’টি ঢেউয়ে কার্যত বিপর্যস্ত ভারতীয় অর্থনীতি। সিএমআইই-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত মে মাসে কাজ হারিয়েছেন প্রায় দেড় কোটি মানুষ। অর্থনীতিতে অতিমারির বিরূপ প্রভাব ও চড়া মূল্যবৃদ্ধির কারণে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সপ্তাহ খানেক আগেই সংশয় জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ)। কিন্তু আজ নিজের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, করোনার প্রতিষেধকের প্রয়োগে গতিময়তাকে ভর করেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতি। তাঁর কথায়, “দেশ-বিদেশের অনেক সংস্থা ও আর্থিক বিশেষজ্ঞ ভারতের অর্থনীতি নিয়ে খুবই আশাবাদী। আজ ভারতীয় সংস্থাগুলিতে রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে। এতে এ দেশের যুব সম্প্রদায়ের কাছে নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। স্টার্ট আপ ও ইউনিকর্নগুলিতে রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে। আবাসন ক্ষেত্রে নতুন উৎসাহ দেখা দিয়েছে। বিগত কয়েক মাস ধরে নানা সংস্কার এবং উদ্যোগের ফলে ভারতের অর্থনীতির দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চিত করেছে।”
বিদেশি বিনিয়োগ আসার যে দাবি মোদী করেছেন, তা অসার বলে দাবি করে টুইট করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। তাঁর কথায়, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারতের ক্রমশ ঘাটতি বাড়ছে। বিশেষ করে চিনের সঙ্গে। বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার একটি বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে রাহুল টুইট করেন “গত বছরের প্রথম নয় মাসে ভারতের সঙ্গে চিনের বাণিজ্য প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়ে ফেলেছে।” কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, লাদাখে যেখানে গত এক বছর ধরে দু’দেশের সেনা চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেখানে ওই সময়ে দু’দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ৪৯ শতাংশ বেড়েছে। কংগ্রেস মুখপাত্র গৌরব বল্লভের মতে, প্রধানমন্ত্রী আজকের বক্তব্যে টিকাকরণের মাধ্যমে আত্মনির্ভর ভারত গড়ার উদাহরণ দেখিয়েছেন, কিন্তু চিনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি স্পষ্ট করে দিয়েছে— বেজিং কী পরিমাণে এ দেশে তাদের মাল রফতানি করেছে। রাহুল গাঁধীর কথায়, “আত্মনির্ভর ভারত আসলে সেই চিরাচরিত দ্বিচারিতা।”
দেশে অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকাকরণের মাধ্যমে যে সাফল্য এসেছে, তার জন্য জনতার অংশীদারির প্রশংসা করে সরব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাল্টা যুক্তিতে বিরোধীদের মত হল, টিকাকরণের সাফল্যকে তুলে ধরে আসলে যাবতীয় সমস্যাকে আড়াল করার প্রচেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বেকারত্ব, পেট্রো-পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, কাশ্মীরের জঙ্গি হামলা, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় বেআব্রু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে সরকারের ভাবমূর্তি যে টোল খেয়েছিল, তা টিকাকরণের সাফল্য দিয়ে মুছে দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, “একশো কোটি টিকাকরণ হয়েছে ভাল কথা। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে দেশের ২১ শতাংশ মানুষই কেবল দু’টি ডোজ পেয়েছেন। পেট্রোপণ্যের মূলবৃদ্ধি হয়েই চলেছে। কৃষকেরা এখনও রাস্তায়। গুদামে খাদ্যপণ্য পচলেও, দেশবাসীর বড় অংশের পেট খালি। প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল এ সব নিয়েও মুখ খোলা।”
প্রধানমন্ত্রী আজ দাবি করেন, একশো কোটি টিকাকরণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে দেশবাসীকে। এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে কংগ্রেসের গৌরব বল্লভ বলেন, বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। এর জন্য পেট্রল–ডিজেলের মতো পেট্রো পণ্যের দাম বেড়েছে হু-হু করে। যার থেকে টিকাকরণের অর্থ সংগ্রহ করেছে সরকার। জিনিসপত্র মহার্ঘ হয়েছে। ভুগতে হচ্ছে আমজনতাকেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy