Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Corona

শেষ দেখা কেড়েছে করোনা, স্মরণ নেটে

এমন কষ্ট বুকে চেপে বেঁচে রয়েছেন অসংখ্য মানুষ।  সেই কষ্ট ভাগ করে নেওয়ারও কাউকে পাননি, কারণ প্রিয়জনদের মধ্যেও অনেকে সেই কষ্টের মধ্য দিয়েই  বাঁচছেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:১৯
Share: Save:

কিছুতেই বাড়ি থেকে হাসপাতালে যেতে চাননি তাঁর স্বামী। বার বার বলেছিলেন, ‘‘তোমাদের ছেড়ে যেতে ভয় করছে।’’ এর পরে আর কথার সুযোগ হয়নি। দিন কয়েক পরে প্লাস্টিকে মোড়া দেহটা যখন হাসপাতাল থেকে ধাপার শ্মশানের দিকে গেল, তখনও শেষ দেখার সুযোগ ছিল না।

গত কয়েক মাস ধরে সেই যন্ত্রণা, সেই আক্ষেপ বয়ে বেড়িয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা। তাঁর স্বগতোক্তি, ‘‘মৃত্যুরও তো কিছুটা মর্যাদা প্রাপ্য। সেটুকু না-পেয়েই কত মানুষ বরাবরের জন্য হারিয়ে গেল।’’

এমন কষ্ট বুকে চেপে বেঁচে রয়েছেন অসংখ্য মানুষ। সেই কষ্ট ভাগ করে নেওয়ারও কাউকে পাননি, কারণ প্রিয়জনদের মধ্যেও অনেকে সেই কষ্টের মধ্য দিয়েই বাঁচছেন। এ বার তাঁরা নিজেদের সেই অনুভূতির কথা ভাগ করে নিতে পারবেন বাকি পৃথিবীর সঙ্গে। অনলাইন কোভিড মেমোরিয়ালে।

৩০ জানুয়ারি, অর্থাৎ যে-দিন ভারতে প্রথম কোভিড রোগীর হদিস মিলেছিল, সে-দিনই এই মঞ্চের আত্মপ্রকাশ। আমেরিকায় ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে করোনা মেমোরিয়াল। প্রথম সারির একটি দৈনিকের উদ্যোগে অনলাইন করোনা মেমোরিয়ালও তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ দেশে সংগঠিতভাবে এমন প্রয়াস এটাই প্রথম। করোনায় মৃতদের সংক্ষিপ্ত জীবনী ছাড়াও থাকবে তাঁদের প্রিয়জনের লেখা ব্লগ। কাছের মানুষকে হারিয়ে নিজের অনুভূতির কথা সেখানে জানাতে পারবেন যে কেউ। থাকবে তাঁদের নিজস্ব মুহূর্তের একাধিক ছবি। শুধু একবার লিখে যাওয়াই নয়, প্রতি বছর মৃত্যুদিনে এখানে এসে প্রিয়জনকে স্মরণও করতে পারবেন তাঁরা। প্রদীপ জ্বালাতে পারবেন। ফুল দিতে পারবেন। চিরদিনের জন্য থেকে যাবে এই ভার্চুয়াল সমাধিক্ষেত্র। কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের উদ্যোগে স্মরণের একই সুতোয় বাঁধা পড়বে দেশ। যোগাযোগ করা যাবে nationalcovidmemorial@gmail.com এর ঠিকানায়।

ইতিমধ্যেই এই মেমোরিয়ালের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের একাধিক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের নিয়ে জাতীয় স্তরে একটি পরামর্শদাতা কমিটিও গড়া হয়েছে। যুক্ত রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দোপাধ্যায়ও।

উদ্যোক্তাদের অন্যতম, চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, ‘‘চলে যাওয়ার সময়ে যে উষ্ণতাটুকু দিয়ে প্রিয়জনদের ঘিরে থাকার কথা ছিল, সেটা সম্ভব হয়নি বহু ক্ষেত্রেই। যে মর্যাদা মৃতের প্রাপ্য, তা দেওয়া যায়নি। সেই যন্ত্রণার অন্তত কিছুটা উপশম করতেই এই উদ্যোগ। মানুষগুলোর প্রতি আমরা তো সামাজিক ভাবেও অন্যায় করেছি। এ খানিকটা তারও প্রায়শ্চিত্তের চেষ্টা।’’

করোনায় মৃতেরা যে শুধু এক একটি সংখ্যা নন, অতিমারির আক্রমণ যে তাঁদের সামগ্রিক অস্তিত্বকে নস্যাৎ করে দিতে পারেনি, খানিকটা সেটাও বোঝানোর চেষ্টা হয়তো রয়েছে। যা ধরা পড়ল মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা দিল্লি কোভিড টিমের প্রধান শিব কুমার সারিনের কথায়। তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধ-শহিদদের মানুষ মনে রাখে। করোনায় মৃতেরাও তো শহিদ। ভাইরাসের সঙ্গে অসম লড়াইয়ে তাঁরা চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এখন ভ্যাকসিন এসেছে। যাঁরা তার সুযোগ পেলেন না, তাঁদের ভুলে গেলে চলবে না।’’

করোনাভাইরাস এক ধাক্কায় গোটা পৃথিবী জুড়েই বদলে দিয়েছে মৃত্যুশোকের সংজ্ঞা। বদলেছে জীবনের সংজ্ঞাও। বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে মানসিক অবসাদ। যার হাতটা বরাবর শক্ত করে ধরে রাখার কথা ছিল, আচমকাই তাকে একা ছেড়ে দেওয়ার পিছনে যে শুধুই নিরুপায়তা কাজ করেছে, স্বার্থপরতা নয়, সেই বিশ্বাসের বোধ জাগিয়ে রাখাটা এই অস্থির সময়ে বড্ড জরুরি— এমনটাই মনে করছেন উদ্যোক্তারা।

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Coronavirus Coronavirus in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy