Once Mughal Capital Fatehpur Sikri Turned Into A Deserted and Haunted Palace dgtl
emperor akbar
নর্তকীর প্রতি অবিচার, ‘অভিশাপ’-এ শুকিয়ে যায় জলাশয়, সাধের ফতেপুর সিক্রি ছাড়তে বাধ্য হন সম্রাট আকবর
জনশ্রুতি, এই জলকষ্টও সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ছিল না। বরং, এর পিছনে সক্রিয় ছিল অভিশাপ। ফতেপুর সিক্রিতে সম্রাট আকবরের প্রিয় নর্তকী ছিলেন জারিনা। তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ছিল আলাদা মহল।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২০ ১২:৩২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
উত্তরাধিকার পুত্রসন্তানের জন্মের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন সুফি সাধক সেলিম চিশতী। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সফল করে ১৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন জাহাঙ্গির। আনন্দে আত্মহারা সম্রাট আকবর জাহাঙ্গিরের জন্মস্থান, সিক্রি গ্রামে নির্মাণ করান প্রাসাদ এবং তাকে ঘিরে পুরো নগরী। নাম হয়, ফতেপুর সিক্রি।
০২১৫
১৫৭১ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি থেকে এই ফতেপুর সিক্রিতেই রাজধানী সরিয়ে আনেন সম্রাট আকবর। তার পর ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দ অবধি এটাই ছিল মুঘল রাজধানী। তার পর আবার রাজধানী স্থানান্তর করেন আকবর। তার পর থেকে পরিত্যক্ত ও ভৌতিক হয়ে পড়ে আছে অতীতের মুঘল-গৌরব।
০৩১৫
ভারতীয় পুরাতাত্বিক সর্বেক্ষণ (এএসআই)-এর সাম্প্রতিক খননে দাবি, মুঘল বংশের আগে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় অব্দে এখানে শুঙ্গ বংশের শাসন ছিল। দ্বাদশ শতকে সংক্ষিপ্ত সময় শাসন করে সিকরোয়ার রাজপুত বংশও।
০৪১৫
আকবর যখন এখানে রাজধানী স্থানান্তর করেন, তখন এর পরিচয় ছিল ‘সিক্রি’ নামে একটি সাধারণ গ্রাম। ১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে গুজরাত জয়ের স্মারক হিসেবে এই নগরীর নাম আকবর রেখেছিলেন ‘ফতেপুর সিক্রি’। অর্থাৎ জয়ের শহর। গুজরাত বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে এই নগরীতে তৈরি হয়েছিল ‘বুলন্দ দরওয়াজা’।
০৫১৫
আকবরের আগেই মুঘল শাসকদের পছন্দের জায়গা ছিল এই গ্রাম। বাবর ও হুমায়ুন, দু’জনেই অবসরে আসতেন এই জনপদে। তখন মূল আগরা শহর থেকে অনেকটাই নির্জন ছিল সিক্রি গ্রাম। মুঘল সম্রাটরা আসতেন সড়কপথে বা যমুনার জলপথে।
০৬১৫
৩ কিমি লম্বা, ১ কিমি চওড়া এই প্রাসাদনগরীকে তিন দিকে ঘিরে ছিল দুর্ভেদ্য ৮ কিমি লম্বা প্রাচীর। এক দিকে ছিল গভীর জলাশয়। লাল বেলেপাথরে তৈরি মূল প্রাসাদ ও নগরীর অন্য স্থাপত্যে নির্মাণবৈশিষ্ট্যে হিন্দু ও মুসলিম দুই ঘরানার মেলবন্ধন স্পষ্ট।
০৭১৫
প্রাসাদের উল্লেখযোগ্য অংশগুলি হল দেওয়ান-ই-খাস, দেওয়ান-ই-আম, ইবাদতখানা, নহবতখানা এবং বীরবল মহল। পাশাপাশি, পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আছে টাকশাল, দফতরখানা, কারখানা, খাজানা এবং হামাম।
০৮১৫
ফতেপুর সিক্রিতে সেলিম চিশতীর সমাধি এবং জামা মসজিদও পু্ণ্যার্থীদের কাছে প্রিয় গন্তব্য। প্রতি বছর অসংখ্য দেশি ও বিদেশি পর্যটকের পা পড়ে ফতেপুর সিক্রিতে।
০৯১৫
কিন্তু পছন্দের এই নগরীও এক দিন ফেলে চলে গিয়েছিলেন সম্রাট আকবর। তার মূল কারণ ছিল জলকষ্ট। গ্রীষ্মে তীব্র জলকষ্ট হয় এই অঞ্চলে। ফলে সম্রাট আকবর তাঁর রাজধানী সরিয়ে নিয়ে যান।
১০১৫
১৫৭১ থেকে ১৫৮৫ অবধি ফতেপুর সিক্রি ছিল মুঘলদের রা্জধানী। রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পরেও কিছু দিন জ্বলে ছিল ফতেপুর সিক্রির বাতি। ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়ে যায় এই নগরী।
১১১৫
জনশ্রুতি, এই জলকষ্টও সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ছিল না। বরং, এর পিছনে সক্রিয় ছিল অভিশাপ। ফতেপুর সিক্রিতে সম্রাট আকবরের প্রিয় নর্তকী ছিলেন জারিনা। তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ছিল আলাদা মহল।
১২১৫
কথিত, জারিনার এই উত্থানে নাকি ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়েন আকবরের হারেমের বাকি নারীরা। তাঁরা ষড়যন্ত্র করেন জারিনার বিরুদ্ধে। সম্রাটের সামনে চোর সাব্যস্ত হন জারিনা। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ তিনি।
১৩১৫
চুরির শাস্তি হিসেবে আকবর তাঁর দু’টি হাত কেটে নেওয়ার শাস্তি দেন। এর পর জারিনার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাতারাতি তিনি উধাও হয়ে যান। তিনি কি পালাতে পেরেছিলেন? তাঁকে গুমখুন করা হয়েছিল? না কি রাজরোষ থেকে বাঁচতে জারিনা আত্মঘাতী হন? উত্তর পাওয়া যায়নি ইতিহাসে হারিয়ে যাওয়া এই সব প্রশ্নের।
১৪১৫
সন্তানের শোকে নাকি উন্মাদপ্রায় হয়ে যান জারিনার বাবা। তাঁর অভিশাপেই নাকি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় ফতেপুর নগরী ও তার সংলগ্ন এলাকা। বাধ্য হয়ে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে যান সম্রাট আকবর।
১৫১৫
তার পর থেকে পরিত্যক্ত ও অভিশপ্ত হয়ে পড়ে অনন্য এই ঐতিহাসিক নিদর্শন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘ভৌতিক’ পরিচয়ও জুড়ে গিয়েছে ঐতিহাসিক এই স্থাপত্যের নামের সঙ্গে। (ছবি: শাটারস্টক ও সোশ্যাল মিডিয়া)