কাশ্মীরে ফের গৃহবন্দি মেহবুবা-ওমররা। —ফাইল চিত্র।
শনিবারই সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছেন, সময় এলেই জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। দাবি করেন, উপত্যকা বর্তমানে অনেকটাই ‘শান্ত’। তার পরেই ফের উপত্যকায় বিজেপি-বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকদের লাগাম টেনে ধরার অভিযোগ উঠছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। উপত্যকার ৩ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ফারুখ আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা এবং তাঁদের পরিবার পরিজনদেরও নতুন করে গৃহবন্দি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তা নিয়ে ফের এক বার কেন্দ্রের সঙ্গে সঙ্ঘাত মাথাচাড়া দিয়েছে ভূস্বর্গে বিজেপি বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকদের।
তাঁকে গৃহবন্দি করা হয়েছে বলে শনিবার প্রথম সোশ্যাল সংবাদ মাধ্যমে মুখ খোলেন পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (পিডিপি) নেত্রী মেহবুবা। রবিবার ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি)-এর নেতা ওমর আবদুল্লা টুইটে লেখেন, ‘২০১৯-এর অগাস্টের পর এটাই নয়া কাশ্মীর। কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই আজকাল গৃহবন্দি করা হয় আমাদের। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে আমার বাবা, যিনি একজন সাংসদ, তাঁকে এবং আমাকে তো গ্রেফতার করা হয়েইছে, আমার বোনের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে এবং তাঁর ছেলেমেয়েও বন্দি করা হয়েছে’। বাড়ির বাইরে মোতায়েন সেনা কনভয়ের ছবিও টুইটারে পোস্ট করেন ওমর।
গত বছর ডিসেম্বরে পারিম্পোরায় আতার মুশতাক নামের এক যুবক সেনার সঙ্গে সঙ্ঘর্ষে নিহত হন। তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল। যদিও ভুয়ো সংঘর্ষে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সেই আতারের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার ঠিক আগে তাঁকে গৃহবন্দি করা হয় বলে জানান মেহবুবা। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘ভুয়ো সংঘর্ষে যে আতার মুশতাককে হত্যা করার অভিযোগ, তাঁর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করায় বরাবরের মতো ফের গৃহবন্দি করা হয়েছে আমাকে। ছেলের দেহ চাওয়ায় ওঁর বাবাকেও ইউএপিএ আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিস্থিতি দেখতে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সামনে কাশ্মীরের এই স্বাভাবিক অবস্থাই তুলে ধরতে চায় ভারত সরকার’।
This is the “naya/new J&K” after Aug 2019. We get locked up in our homes with no explanation. It’s bad enough they’ve locked my father (a sitting MP) & me in our home, they’ve locked my sister & her kids in their home as well. pic.twitter.com/89vOgjD5WM
— Omar Abdullah (@OmarAbdullah) February 14, 2021
Chalo, your new model of democracy means that we are kept in our homes without explanation but on top of that the staff that works in the house aren’t being allowed in and then you are surprised that I’m still angry & bitter.
— Omar Abdullah (@OmarAbdullah) February 14, 2021
Please note that none of the people who have been detained in their homes today have been marked on this document. More over it still doesn’t answer under what law police trucks are parked outside our gates preventing us from leaving. https://t.co/gfiSByydcU
— Omar Abdullah (@OmarAbdullah) February 14, 2021
মেহবুবার পর রবিবার সকালে গৃহবন্দি হয়েছেন বলে টুইটারে ঘোষণা করেন ওমর। ওমরের টুইটের পর শ্রীনগর পুলিশের নামে তৈরি একটি হ্যান্ডল থেকে দাবি করা হয়, পুলওয়ামা হামলার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে নিরাপত্তার খাতিরেই তাঁদের বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। আগে থাকতে তা সকলকে জানানো হয়েছিল বলেও দাবি করা হয় ওই টুইট-বার্তায়। সেই মর্মে একটি চিঠিও সামনে আসে। কিন্তু শ্রীনগর পুলিশের ওই টুইট হ্যান্ডলটি যে ‘ভেরিফায়েড’ নয়, তা জানিয়ে দেন ওমর। একই সঙ্গে দাবি করেন কোনও রকম চিঠি দেওয়া হয়নি তাঁদের। তাঁর উদ্দেশে ওই চিঠি লেখা হলে তাতে কোথাও তাঁর নাম উল্লেখ করা নেই কেন, সেই প্রশ্নও তোলেন ওমর।
রবিবার ওমর লেখেন, ‘গণতন্ত্রের নয়া রূপ দেখাচ্ছে, কোনও কারণ ছাড়াই আমাদের বাড়িতে আটকে রাখা হবে। শুধু তা-ই নয়, আমাদের বাড়িতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদেরও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এর পরও আমি রেগে না গেলে সেটা কি অপরাধ’?
এর আগে, ২০১৯ সালে কাশ্মীরের জন্য সংরক্ষিত ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সময়ও মেহবুবা, ফারুখ, ওমর-সহ কাশ্মীরের বহু রাজনীতিককে দীর্ঘদিন বন্দি করে রাখা হয়েছিল। বন্দিদশা কাটিয়ে বেরিয়েই কাশ্মীরের হৃত মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে কংগ্রেস এবং আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে মিলে গুপকার জোট গঠন করেন তাঁরা। তার পর জেলাস্তরের নির্বাচনে ৭৪টি আসন পেয়ে একক বৃহত্তম দল হলেও, ২৭৬টি আসনের মধ্যে ১১০টি আসনে জয়ী হয় মোট ৭টি দলের গুপকার জোট। তার পরেও গুপকার জোটকে কোণঠাসা করে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ওমর। এমনকি নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগও তোলেন তিনি সম্প্রতি।
Placed under house arrest as usual for trying to visit the family of Athar Mushtaq killed allegedly in a fake encounter. His father was booked under UAPA for demanding his dead body. This the normalcy GOI wants to showcase to the EU delegation visiting Kashmir. pic.twitter.com/xFkcqTGQyV
— Mehbooba Mufti (@MehboobaMufti) February 13, 2021
ঘটনাচক্রে শনিবারই লোকসভায় পেশ করা হয় জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধন) বিল৷ সেই বিল নিয়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষের সবাই বক্তব্য পেশ করেন সংসদের নিম্নকক্ষে৷ সেই আলোচনার শুরু হয় লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরীকে দিয়ে৷ শেষে ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য৷
সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ ও পূর্বতন জন্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেওয়া নিয়ে লোকসভায় বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বলেন, ‘‘যখন কাশ্মীর বিভক্ত করা হয়েছিল, তখন কোথাও লেখা ছিল না যে ভূস্বর্গ রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাবে না। সঠিক সময়ে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে জম্মু ও কাশ্মীরকে।’’ এর পর রেগে গিয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘আমি বিল এনেছি। এই বিল পেশ করেছি। কী জন্য এই সংশোধনী বিল আনা হয়েছে, তা আপনাদের ব্যাখ্যা করে বলেছি। আপনারা ভুয়ো সংবাদ ছড়ানো বন্ধ করুন। অতীতে কি কোনও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়নি? অতীতে কি কখনও কোনও সীমান্তবর্তী অঞ্চলকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়নি? তা হলে জম্মু ও কাশ্মীর এ সবের থেকে আলাদা হবে কী করে?’’ একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, আগের থেকে বর্তমানে উপত্যকা অনেক ‘শান্ত’।
১৭ মাস আগে কেন্দ্রীয় সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পাশাপাশি জন্মু ও কাশ্মীরকে দু’ভাগে বিভক্ত করে। কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসাবে জন্ম নেয় জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ। কাশ্মীরের নেতা ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতিরা ক্রমাগত কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে থাকেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে কাশ্মীরি নেতার জন্য রাজ্যসভায় চোখের জল ফেলেছেন, ভূস্বর্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সেই গুলাম নবি আজাদও সেই সময় সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy