জঙ্গলের সাম্রাজ্য। ছবি: পিলিভিত টাইগার রিজার্ভের ফেসবুক পেজের সৌজন্যে।
গ্রামের পাশেই ঘন জঙ্গল। বনবিবির সেখানে নিত্য আনাগোনা। ছাগলটা, মুরগিটা টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা আকছাড় ঘটে। এমনকী মানুষকে আক্রমণের ঘটনাও বিরল নয়। কিন্তু তা বলে এতটা! আর আশ্চর্যজনক ভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন শুধুমাত্র বয়স্ক মানুষরাই! খটকাটা শুরু হয়েছিল এখানেই।
ঘটনার কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের পিলিভিট টাইগার রিজার্ভ। জঙ্গলের পাশেই রয়েছে একাধিক ছোট বড় গ্রাম। হঠাৎই দেখা গেল, গ্রামের বয়স্ক মানুষরা বেশির ভাগই মারা যাচ্ছেন বাঘের আক্রমণে। পরে তাঁদের আধখাওয়া মৃতদেহগুলো উদ্ধার হচ্ছে আশেপাশের ক্ষেত থেকে বা জঙ্গলের পাশ থেকে। বাঘের আক্রমণে মারা যাওয়ায় বন দফতরের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও দাবি করছেন গ্রামবাসীরা।
তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এমন ঘটনার সংখ্যা সাত। সাত জনই বয়স্ক মানুষ আর সাত জনেরই মৃত্যু হয়েছে বাঘের আক্রমণে। প্রত্যেকেরই দেহ মিলেছে সংরক্ষিত এলাকার ঠিক বাইরে। ঘটনাগুলি কি সত্যিই কাকতালীয়? বিষয়টি প্রথম নজরে আসে পিলিভিত টাইগার রিজার্ভ(পিটিআর) কর্তৃপক্ষের। বেশ কয়েকটি ঘটনা দেখার পর তাঁদের সন্দেহ হয়, ঘটনাগুলি ইচ্ছাকৃত। সম্ভবত জেনে শুনেই পরিবারের বয়স্ক মানুষদের গভীর জঙ্গলে বাঘের খাদ্য হিসাবে পাঠাচ্ছেন তাঁদেরই নিকট আত্মীয়রা। তারপর বাঘের ফেলে যাওয়া আধখাওয়া সেই দেহ নিয়ে এসে রাখা হচ্ছে খেত বা মাঠের ধারে। বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হওয়ায় বন দফতরের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে দাবি করছে মৃত ব্যক্তির পরিবার। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমান, পুরো ঘটনাটির সঙ্গে ইচ্ছুক ভাবেই যুক্ত থাকছেন পরিবারের বৃদ্ধরা।
আরও পড়ুন: ঋতুস্রাব অপবিত্র, আজও লজ্জায় পড়ছে ভারতীয় মেয়েরা, কী বলছে সমীক্ষা
জার্নেল সিংহ নামে বছর ষাটেকের স্থানীয় এক কৃষক মেনেও নিলেন সে কথা। জানালেন, তাঁরা যেহেতু জঙ্গল থেকে তেমন সাহায্য পান না, তাই দারিদ্র্যের জ্বালা মেটাতে এটাই একমাত্র উপায়। বয়স্ক ব্যক্তিরাও এই উপায়কে মেনে নিয়েছেন।
পিটিআর-এর এই পর্যবেক্ষণ সামনে আসার পরেই ঘটনার তদন্তে নামে বণ্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো। বাঘের আক্রমণে প্রতিটি মৃত্যু, মৃত্যুর কারণ ও সম্পূর্ণ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তারা। এই তদন্তের ভারপ্রাপ্ত অফিসার কালিম আথার জানালেন, প্রতিটি ঘটনা আলাদা আলাদা ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে ব্যুরোর কাছে। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কালিম জানান, গোটা রিপোর্টটিই জাতীয় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই ঘটনার ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy