প্রতীকী ছবি।
চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসের মধ্যে তিরিশ কোটি দেশবাসীকে করোনার প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু শুরুর পরে প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে গেলেও এখনও সে ভাবে গতি পায়নি টিকাকরণ অভিযান। প্রথম ধাপে তিন কোটি চিকিৎসাকর্মী ও ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারের মধ্যে টিকাকরণের আওতায় এসেছেন মাত্র ষাট লক্ষের কাছাকাছি মানুষ। তবু আর দেরি না-করে মার্চ থেকেই ২৭ কোটি বয়স্ক মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। বস্তুত, আজই সমস্ত রাজ্যকে টিকাকরণের গতি বাড়াতে বলেছে কেন্দ্র।
হর্ষ বর্ধনের কথায়, “প্রথম পর্বে এক কোটি স্বাস্থ্যকর্মী ও দু’কোটি ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারকে টিকাকরণের আওতায় আনার পরিকল্পনা ছিল। ১২টি রাজ্যে প্রায় ষাট শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী ইতিমধ্যেই প্রতিষেধক নিয়েছেন। তাই ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ফ্রন্টলাইন কর্মীদের প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হয়। আশা করছি মার্চ থেকে ২৭ কোটি বয়স্ক মানুষকে টিকা দেওয়ার কাজও শুরু হয়ে যাবে।” কোনও তারিখ জানাতে পারেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তবে তাঁর আশা, আগামী মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যেই বয়স্কদের টিকাকরণ শুরু হয়ে যাবে। ইচ্ছুকেরা কো-উইন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে আবেদনের সুযোগ পাবেন।
রোজ তিন লক্ষ মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সরকারের। অধিকাংশ দিনই ছোঁয়া যাচ্ছে না সেই লক্ষ্যমাত্রা। এর একটি বড় কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, বড় সংখ্যক চিকিৎসাকর্মী প্রতিষেধক নিতে অনিচ্ছুক। বিশেষ করে, কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধক প্রত্যাখানের হার তুলনায় বেশি। তবে আইসিএমআর-এর পদস্থ কর্তা তথা কোভিড সংক্রান্ত জাতীয় টাস্ক ফোর্সের সদস্য এন কে অরোড়া জানান, শুরুতে যে গতিতে টিকাকরণ হবে বলে ভাবা হয়েছিল, পরিকল্পিত ভাবে তাতে রাশ টানা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে টিকাকরণে কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে, তা বুঝে নিতেই ‘ধীরে চলো’ নীতি নেওয়া হয়েছে। অরোড়া দাবি করেন, “আমাদের প্রতিদিন পাঁচ থেকে আট লক্ষ মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। পালস পোলিও অভিযানের সময়ে এক-এক সপ্তাহে ১৭ কোটি শিশুকে পোলিওর টিকা খাওয়ানো হয়ে থাকে। তাই আমাদের পরিকাঠামোগত কোনও সমস্যা নেই। শুধু ইচ্ছে করেই গতিতে সামান্য রাশ টেনে রাখা হয়েছে।”
অরোড়া এই কথা বললেও আজই সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে টিকাকরণের গতি বাড়াতে বলেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ রাজ্যগুলিকে বলেছেন, ২০ ফেব্রুয়ারির আগে সমস্ত চিকিৎসাকর্মী যেন টিকার অন্তত একটি ডোজ় পেয়ে যান। ১৬ জানুয়ারি টিকাকরণ শুরুর দিনে যাঁরা প্রথম ডোজ় পেয়েছিলেন, ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ় দিতে শুরু করার কথাও বলেছেন তিনি। কো-উইন অ্যাপে নাম নথিভুক্ত-হওয়া সকলের টিকাকরণ নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে।
তবে প্রতিষেধকের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ একটি সমস্যা বলে ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করে নিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। বর্তমানে সিরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড ও ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে ভারতে। একে তো কোভ্যাক্সিন নিতে অনেকের আপত্তি ঘোরালো করে তুলেছে সমস্যা। একই সঙ্গে কূটনীতির অঙ্গ হিসেবে অন্য দেশকে প্রতিষেধক পাঠানোর দায়বদ্ধতা রয়েছে ভারতের। সেই প্রতিষেধকও যাচ্ছে ওই দুই সংস্থা থেকে। হর্ষ বর্ধনের লোকসভায় দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১৫টি দেশকে ভারতে প্রতিষেধক দিয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ লক্ষ প্রতিষেধক অনুদান হিসেবে গিয়েছে এবং ১০৫ লক্ষ প্রতিষেধক গিয়েছে বাণিজ্যিক চুক্তির অংশ হিসেবে। আজই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন যে, আরও ২৫টি দেশ ভারতীয় প্রতিষেধক পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশে প্রতিষেধকের চাহিদার তুলনায় জোগানের একটি ঘাটতি রয়েছে বলে একান্তে মানছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তবে আগামী এক মাসের মধ্যে আরও একটি বা দু’টি প্রতিষেধক বাজারে আসতে পারে। সেই পরিস্থিতিতে মার্চের মাঝামাঝি থেকে প্রতিষেধকের জোগান স্বাভাবিক হবে বলেই দাবি স্বাস্থ্যকর্তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy