সংসদে বক্তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুধবার। ছবি: পিটিআই।
অসমের মতোই দেশের সব রাজ্যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) হবে বলে জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ রাজ্যসভায় শাহের দাবি, কোনও ধর্মেরই মানুষের ভয়ের কিছু নেই। কারণ সব ব্যক্তিকে এনআরসি-তে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে।
শাহের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস সাংসদ সৈয়দ নাসির হুসেন বলেন, ‘‘কলকাতায় একটি জনসভায় অমিত শাহ দাবি করেছিলেন হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন ও পার্সিদের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়লেও চিন্তার কিছু নেই।’’ তিনি মুসলিমদের নাম না-নেওয়ায় ওই সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তার অভাববোধ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করে এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানতে চান হুসেন।
শাহ বলেন, ‘‘এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল দু’টি আলাদা। সাংসদ সম্ভবত বুঝতে ভুল করেছেন। এনআরসিতে সব ধর্মের লোকের অন্তর্ভুক্তির কথা বলা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ করার প্রশ্নই নেই। অন্য দিকে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের যে-সব হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি আর খ্রিস্টান নাগরিক ধর্মীয় বিদ্বেষের শিকার হয়ে এ দেশে শরণার্থী হয়েছেন, তাঁদের কথা ভেবেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনা হয়েছে। যা সিলেক্ট কমিটিতে পাশ করেছে সব দল।’’
আরও পড়ুন: কাশ্মীর স্বাভাবিকই, দাবি অমিতের, শাহের বক্তৃতা ‘মিথ্যের ঝুড়ি’, বলছে উপত্যকা
অমিত শাহ ওই যুক্তি দিলেও বিরোধীদের বক্তব্য, বিজেপি শুরু থেকেই ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদের কথা বলে আসছে। অথচ সাংবিধানিক ভাবে যা বলা যায় না। এনআরসি-তে অন্য ধর্মের বাদ যাওয়াদের নাগরিকত্ব আইনে ভারতবাসীর মর্যাদা দিলেও, যে-সব মুসলিম বাদ পড়েছেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নীরব শাসক শিবির। মুসলিমদের যে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না, তা সরাসরি না-বলে ঘুরিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদের রাজনীতি করার কৌশল নিয়েছেন শাহেরা। অসমে এনআরসিতে বাদ পড়া ১১ লক্ষ বাঙালি হিন্দুকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে কি না, তা আজ জানতে চেয়েছিলেন তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়। উত্তরে শাহ কেবল বলেন, ‘‘এনআরসি-তে এমন কোনও উপায় নেই।’’
এ দিকে, অসমের সদ্যপ্রকাশিত নাগরিকপঞ্জি বাতিল করার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মৌখিক ভাবে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তাঁর অভিযোগ, এক দিকে এই তালিকায় বহু বিদেশির নাম ঢুকেছে, অন্য দিকে বহু ভারতীয়ের নাম বাদ গিয়েছে। কিন্তু তা সংশোধনের আর কোনও সুযোগ না থাকায় এই তালিকা বাতিলের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শাহও এ দিন রাজ্যসভায় বলেন, ‘‘বর্তমানে অসমে যে এনআরসি প্রক্রিয়া চলছে, তা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুরু হয়েছে। যখন দেশ জুড়ে এনআরসি-র কাজ শুরু হবে তখন তা অসমেও হবে।’’
এনআরসি নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি মানুষের মধ্যে বিভাজনের রাজনীতি করছে বলে সরব হয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনও ভাবেই পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হতে দেব না। আমরা জানতে পেরেছি যে রাজ্য সরকার দু’টি জায়গায় ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করছে। যদিও তারা বলছে যে এগুলি ফরেনার্স ট্রাইবুনালে বিচারাধীন বিদেশি বন্দিদের রাখার জন্য ব্যবহার করা হবে, কিন্তু এই আশঙ্কাও রয়েছে যে ভবিষ্যতে এনআরসি-তে নাম বাদ যাওয়া নাগরিকদের রাখার জন্যও এগুলি ব্যবহার করা হবে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যদি সত্যিই এনআরসির বিরোধী হন তা হলে রাজ্যে এই ক্যাম্প বানাতে দিচ্ছেন কেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy