Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

শ্রম সংস্কারে আপস নয়, বার্তা সঙ্ঘকে

শিল্প মহলের চাপ রয়েছে। রয়েছে বদলানোর ইচ্ছাও। কিন্তু শ্রম সংস্কারের পথে এগোতে গিয়ে এখন ঘরের মধ্যেই বিরোধিতার মুখোমুখি নরেন্দ্র মোদী, অরুণ জেটলিরা। সঙ্ঘ পরিবারের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছে, সরকার যে ভাবে শ্রম আইন বদলানোর চেষ্টা করছে, তাঁরা তার ঘোর বিরোধী। তবে মোদী, কিংবা জেটলি এই চাপে মাথা নোয়াতে রাজি নন। এ ব্যাপারে সঙ্ঘ পরিবারকে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে দিয়েছেন জেটলি।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০৪:১৫
Share: Save:

শিল্প মহলের চাপ রয়েছে। রয়েছে বদলানোর ইচ্ছাও। কিন্তু শ্রম সংস্কারের পথে এগোতে গিয়ে এখন ঘরের মধ্যেই বিরোধিতার মুখোমুখি নরেন্দ্র মোদী, অরুণ জেটলিরা। সঙ্ঘ পরিবারের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছে, সরকার যে ভাবে শ্রম আইন বদলানোর চেষ্টা করছে, তাঁরা তার ঘোর বিরোধী। তবে মোদী, কিংবা জেটলি এই চাপে মাথা নোয়াতে রাজি নন। এ ব্যাপারে সঙ্ঘ পরিবারকে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে দিয়েছেন জেটলি।

জেটলি সম্প্রতি বিএমএসের শীর্ষ নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, শিল্পের পরিবেশ বদলের সঙ্গে সঙ্গে শ্রম ক্ষেত্রে সংস্কারের ভাবনাও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। যেমন, বর্তমান কারখানা আইন অনুযায়ী কোনও কারখানায় ১০০ জন বা তার বেশি শ্রমিক থাকলে, ছাঁটাইয়ের জন্য রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু কারখানা মালিকদের থেকে দাবি উঠেছে, তাঁরা যদি কোনও অস্থায়ী কাজের বরাত পান, তা হলে শুধু ওই কাজের জন্যই কর্মী নিয়োগ করতে দিতে হবে। অর্থাৎ, যেখানে তিন মাসের জন্য কাজ হবে, সেখানে ওই তিনটি মাসের জন্যই কর্মী নিয়োগ করতে চান। কিন্তু শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০০-র বেশি শ্রমিক হলেই ছাঁটাই করতে সমস্যা। এই পরিস্থিতির বদল চাইছে সরকারও। কিন্তু শ্রম সংস্কারের এই প্রস্তাবে বাদ সাধছে বিএমএস।

অর্থমন্ত্রী সঙ্ঘ পরিবারের শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের বুঝিয়েছেন, রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্পেও সরকার বছরে ১০০ দিনের জন্য কাজ দেয়। তাতে শ্রমিক সমস্যা হয় না, বরং সামাজিক উন্নতি হয়। বেসরকারি সংস্থাগুলি সেই ভাবে স্বল্প সময়ের জন্য অস্থায়ী নিয়োগ করতে পারবে না কেন? প্রধানমন্ত্রী আগেই যুক্তি দিয়েছিলেন, চিনে শিল্প ক্ষেত্রে ২ কোটি অ্যাপ্রেন্টিস রয়েছে। জাপানে রয়েছে ১ কোটি। আর ভারতে মাত্র তিরিশ লক্ষ। কারখানার মালিকরা অ্যাপ্রেন্টিস নিয়োগ করতে চাইলেও শ্রম আইনের জন্য ভয় পান। এতে শ্রমিকদেরই ক্ষতি হচ্ছে। তাই আইনটা বদলানো দরকার। ১২ ও ১৩ জুন এলাহাবাদে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক। সেখানেও শ্রম সংস্কারের বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঘটনা হল, শ্রমমন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয় নিজে আরএসএসের ঘনিষ্ঠ। তিনি মন্ত্রিসভায় বিএমএসের পক্ষে সওয়াল করতে শুরু করেছেন। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ জেটলি জানিয়ে দিয়েছেন, এ ভাবে চললে তো সংস্কারের যাবতীয় চিন্তাভাবনাকে শিকেয় তুলে রাখতে হয়! জেটলি আরএসএস নেতাদেরও জানিয়েছেন, সরকার যে ভাবে শ্রম আইন বদলাতে চাইছে, তাতে যাতে সঙ্ঘ নাক না গলায়। সরকার শ্রম সংস্কারে কোন পথে এগোতে চায়, ক’দিন আগেই তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন মোদী। তাতে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শুধু বেসরকারি ক্ষেত্রের স্বার্থ দেখাই নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকেও বাঁচিয়ে রাখতে চায় সরকার। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদীর মন্তব্য, শ্রম আইনের সংস্কারের অর্থ শুধু শিল্পের স্বার্থ দেখা নয়। শ্রমিকদের স্বার্থও সেখানে দেখতে হবে। অর্থাৎ, একটি বিষয় স্পষ্ট। তা হল, সময়ের প্রয়োজন মেনে শ্রম সংস্কারের কথা বললেও তা যে মোটেই শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী নয়, সে কথাই বোঝাতে চাইছে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব।

কিন্তু এ সব যুক্তি হজম হচ্ছে না বিএমএস নেতাদের। গত ২ সেপ্টেম্বর সমস্ত কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন শ্রম আইনের সংস্কারের প্রতিবাদে দেশ জোড়া ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। তাতে বিএমএস যোগ দেয়নি। কিন্তু ওই একই বিষয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলি যখন আবার আন্দোলনে নামছে, তাতে বিএমএসও সামিল হয়েছে।

শ্রম আইনের বদল নিয়ে সংঘাতে সঙ্ঘের শাখা সংগঠনগুলির সমন্বয়ের অভাবও সামনে চলে এসেছে। অতীতে বিজেপি, আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল, বিএমএস— প্রত্যেটি সংগঠনের মধ্যে অসাধারণ সমন্বয় ছিল। প্রতিটি সংগঠনেই অন্তত একজন করে গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন, যাঁদের কথা সংগঠনের সকলেই শুনতেন। আরএসএসের রজ্জু ভাইয়া বিজেপির লালকৃষ্ণ আডবাণী, ভিএইচপি-র অশোক সিঙ্ঘল ছিলেন এমন নেতা। এই মুহূর্তে সেই ধরণের নেতাও নেই, যাঁর কথা সকলে শুনবে। এখন বিএমএসের নেতা বি এন রাই। কিন্তু সংগঠনে আরও অনেক নেতা। কে কোনদিকে চলবেন, তাতে কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। ৪৬-তম শ্রম সম্মেলনেই বিএমএসের মধ্যে প্রকাশ্যে চার রকমের মতামত সামনে এসে গিয়েছিল। নেতৃত্বের এই সঙ্কটও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Arun jaitley
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy