পরামর্শ দেওয়া সোজা। নিজে করে তার দায় নেওয়াটা অনেক শক্ত। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তা টের পাচ্ছেন হাড়ে-হাড়ে।
রেল বাজেট মিশে গিয়েছে মূল বাজেটে। প্রথম মিলিত বাজেট পেশ করার দায়িত্ব পেয়ে জেটলি পরামর্শ চেয়েছিলেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর কাছে। জানতে চেয়েছিলেন, রেলের লাভ-ক্ষতির অঙ্কে ভারসাম্য আনতে কী করা উচিত। প্রভু সাফ জানিয়ে দেন, যাত্রিভাড়া খাতে ফি বছর গড়ে ৩৩-৩৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। এই ভর্তুকি বন্ধ করলেই রেল হাঁটবে লাভের রাস্তায়।
বাজেট পেশের তিন দিনের মধ্যেই ভোট যুদ্ধ শুরু হবে পাঁচ রাজ্যে। তার আগে যাত্রিভাড়া বাড়ানোর এই সুপারিশে কার্যত আঁতকে উঠেছেন জেটলি। প্রভুর প্রস্তাব আপাতত ঠাঁই পেতে চলেছে ঠান্ডা ঘরে। মুখ টিপে হাসছেন রেলকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, এই অর্থ মন্ত্রকই এক সময়ে যাত্রিভাড়া বাড়াতে নিরন্তর চাপ দিত। বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার প্রশ্ন আসতেই তারাই পিছিয়ে আসছে।
রেলের আয়ের মূল উৎস যাত্রিভাড়া ও পণ্য পরিবহণ থেকে আয়। গত এক দশকে স্লিপার শ্রেণিতে তেমন হাত না দিয়ে দফায় দফায় বাড়ানো বাতানুকূল শ্রেণির ভাড়া ও পণ্য মাসুল বাড়ানো হয়েছে। জনমোহিনী এই সিদ্ধান্তে লালুপ্রসাদ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটের বাক্সে সাফল্য পেলেও, তাতে ক্রমশ শুকিয়ে গিয়েছে রেলের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রটি। সড়ক পরিবহণের কাছে হু হু করে ব্যবসা হারিয়েছে রেল। সড়কের তুলনায় এখন কার্যত অর্ধেক পণ্য পরিবহণ হয় রেলে। রেলকর্তাদের একাংশ বলছেন, আগামী কয়েক বছর রেলে পণ্য মাসুল বাড়ানো শুধু বন্ধ রাখলেই চলবে না, সড়ক ব্যবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিতে পণ্য পরিবহণে বিশেষ ছাড় দিতে হবে রেলকে।
আয় তবে বাড়বে কীসে? যাত্রিভাড়া বাড়িয়ে! বর্তমানে গড়ে একটি টিকিটে ৪৭% ভর্তুকি দেয় রেল। যার একটি বড় অংশই যায় স্লিপার শ্রেণির যাত্রীদের পিছনে। বর্তমানে স্লিপার শ্রেণিতে প্রতি কিলোমিটারে ২৯ পয়সা ভাড়া নেয় রেল। চিনে তা চার গুণ বেশি। রেলের এক কর্তার কথায়, ‘‘ভাড়া বাড়ানোর প্রশ্ন উঠলেই, বাতানুকূল শ্রেণির উপরে চাপ বাড়ানো হয়। আমজনতার কথা ভেবে পারতপক্ষে ছোঁয়া হয় না স্লিপার শ্রেণি।’’ রেলের তাই বক্তব্য, ভাড়া যদি বাড়াতেই হয়, তবে সবার আগে স্লিপার শ্রেণির ভাড়া বাড়ানো উচিত। রেল এই সংস্কারমুখী পরামর্শ দিলেও, ভোটের মুখে আমজনতার উপরে চাপ বাড়ানোর প্রশ্নে মেপে পা ফেলতে চাইছেন জেটলিও।
বাকি রইল বাতানুকূল শ্রেণি। এ ক্ষেত্রেও ভাড়া বাড়ানোর পথ প্রায় বন্ধ। গত কয়েক দফায় বাতানুকূল শ্রেণির ভাড়া বাড়তে বাড়তে কার্যত ছুঁয়ে ফেলেছে বিমানের ভাড়াকে। দেখা যাচ্ছে, চার মাসে আগে দিল্লি-মুম্বই রুটে রাজধানীর বাতানুকূল দ্বিতীয় শ্রেণির ও বিমানের টিকিট কাটলে বিমান-ভাড়ার জন্য মাত্র ১৫% অর্থ বেশি দিতে হয়। এর উপরে লো-কস্ট বিমানসংস্থাগুলি বিভিন্ন সময়ে সস্তায় টিকিট বিক্রি করায় বাতানুকূল শ্রেণিতে ক্রমশ ব্যবসা হারাচ্ছে রেল। গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবরে বিমান ক্ষেত্রের কাছে অন্তত ২৩% যাত্রী হারিয়েছে রেল। দূরপাল্লার অনেক ট্রেনে খালি যাচ্ছে বাতানুকূল কামরা। যা দেখে সম্প্রতি বাতানুকূল শ্রেণির টিকিটে ১০% ছাড়ও ঘোষণা করতে হয়েছে রেলকে।
উচ্চ শ্রেণির যাত্রী ও পণ্য পরিবাহণের বাজার খোয়ানোটা রেলের কাছে অশনি সঙ্কেত। এমন সঙ্কটের সময়ে ভাড়া ও মাসুল বাড়ানোর দায় থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন রেলকর্তারা। লালু-মমতাদের জমানায় ভাড়া বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করে এসেছে অর্থ মন্ত্রক ও যোজনা কমিশন। তাঁরা সেই পথে হাঁটার ঝুঁকি নেননি।
জনমোহিনী পথ ছেড়ে ভোটের মুখে সংস্কারের সাহস দেখানার প্রশ্নে জেটলিও পিছপা হতে পারেন আঁচ করে এক রেল-কর্তার টিপ্পনি, আপনি আচরি ‘সংস্কার’ পরেরে শিখাও।
জটে জেটলি
• ভাড়ায় ভর্তুকি বছরে ৩৩-৩৫ হাজার কোটি টাকা। এটা বন্ধ হোক, আগে বলত অর্থ মন্ত্রক। এখন বলছে রেল
• প্রতি টিকিটে ভর্তুকি ৪৭%। বেশিটাই যায় স্লিপার ক্লাসে। ভোটের মুখে কমানোটা ঝুঁকির
• উচ্চ শ্রেণির ভাড়া ছুঁয়ে ফেলছে বিমানকে। ভাড়া বাড়ালে আরও হারাতে হবে যাত্রী
• রেলে পণ্য পরিবহণ কমে এখন সড়কের অর্ধেক। মাসুল বাড়ালে তা আরও কমবে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy