Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
National News

বকেয়া নিয়ে টেলিকম সংস্থাগুলির পক্ষেই সওয়াল! সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে কেন্দ্র

বুধবার কেন্দ্রের তরফে আদালতে জানানো হয়, টেলিকম সংস্থাগুলির এজিআর পুনর্মূল্যায়ন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ফের সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে কেন্দ্র ও টেলিকম সংস্থাগুলি। —প্রতীকী ছবি

ফের সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে কেন্দ্র ও টেলিকম সংস্থাগুলি। —প্রতীকী ছবি

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২০ ১৩:৫৯
Share: Save:

আগের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারের পাওনা বকেয়া টাকা কিছুটা মিটিয়েছে টেলিকম সংস্থাগুলি। কিন্তু এ বার সরকার পক্ষই টেলিকম সংস্থাগুলির হয়ে সওয়াল করায় ফের সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে পড়ল কেন্দ্র। ‘আদালতের সঙ্গে প্রতারণা’, ‘আদালতের সম্মানের প্রশ্ন’—এ রকম কড়া শব্দবন্ধে সরকারি আইনজীবীকে আক্রমণ করেছে বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বেঞ্চ। পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দেওয়া ‘অফিসারদের ছাড়া হবে না’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিন বিচারপতির বেঞ্চের প্রশ্ন, ‘‘টেলিকম সংস্থাগুলি কি এই গ্রহের সবচেয়ে প্রভাবশালী?’’ টেলিকম সংস্থাগুলির বকেয়া পুনর্মূল্যায়নের অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্র। সেই নির্দেশ প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে বেঞ্চ।

গত জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের ওই কড়া নির্দেশের পর ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন-আইডিয়ার মতো সংস্থা কয়েকটি ধাপে বকেয়ার কিছুটা মিটিয়েও দেয়। কিন্তু বুধবার কেন্দ্রের তরফে আদালতে জানানো হয়, টেলিকম সংস্থাগুলির এজিআর পুনর্মূল্যায়ন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি টেলিকম সংস্থাগুলি যাতে ধাপে ধাপে ২০ বছরের মধ্যে বকেয়া মেটাতে পারে, সেই আর্জিও জানান সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তাতেই চরম ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন বিচারপতি অরুণ মিশ্র, বিচারপতি এস আব্দুল নাজির এবং বিচারপতি এম আর শাহ।

বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, ‘‘যদি পুনর্মূল্যায়নের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে সেটা হবে আদালতের সঙ্গে প্রতারণা। যে সব অফিসার পুনর্মূল্যায়নে অনুমোদন দিয়েছেন, তাঁদের আমরা ছাড়ব না।’’ পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত বাতিল করার নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি মিশ্রর বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘বিল পেশ হয়ে গিয়েছে, সিএজি (কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল) অডিট করেছে। তার পরেও কী ভাবে পুনর্মূল্যায়ন সম্ভব?’’ তার পরেই বিচারপতিদের প্রশ্ন, ‘‘টেলিকম সংস্থাগুলি কি এমন ভাবে যে তারা এই গ্রহের সবচেয়ে শক্তিশালী? কেউ যদি মনে করে তাঁরা অধিক শক্তিশালী, অথবা আমাদের প্রভাবিত করতে চান, তাহলে তাঁরা ভুল ভাবছেন।’’ টেলিকম সংস্থাগুলি জানিয়েছিল, তারা আট থেকে ১০ মাসের মধ্যে নিজেদের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন করবে এবং তার পর বকেয়া মেটাবে। বিচারপতিরা এ দিন বলেন, সেটা যদি হয়, তাহলে তাঁরা মামলা থেকে নিজেদের নাম তুলে নেবেন।

আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত কলকাতার তরুণ স্থিতিশীল, লালারস গেল নাইসেডে

এর পর জনস্বার্থের ক্ষতি এবং অর্থনীতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে যুক্তি দেন সলিসিটর জেনারেল। তুষার মেহতা বলেন, ‘‘এই বিষয়ে কেন্দ্র সচেতন যে, টেলিকম সংস্থাগুলির পরিচালনা ও পরিষেবার উপর কোনও খারাপ প্রভাব পড়লে দেশের পুরো অর্থনীতির উপর তার প্রভাব পড়বে। পাশপাশি সারা দেশে বিরাট সংখ্যক গ্রাহককেও তার ফল ভোগ করতে হবে।’’ তাতে আরও ক্রুদ্ধ বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘এটা জনগণের টাকা। কেউ সেটা পকেটে পোরার চেষ্টা করছে এবং ডিওটি বলছে, তারা এ নিয়ে নমনীয়?’’ সলিসিটর জেনারেলের উদ্দেশে বিচারপতিদের কটাক্ষ, ‘‘সরকার আগে বলেছিল, তারা জরিমানা পর্যন্ত ধার্য করতে প্রস্তুত। অথচ এখন তাদের (টেলিকম সংস্থাগুলি) স্বার্থেই কাজ করছে?’’

আরও পড়ুন: হোম আইসোলেশনে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী, দেশে আক্রান্ত বেড়ে ১৪৭ : করোনা আপডেট এক নজরে

গত বছরের ২৪ অক্টোবরে টেলিকম সংস্থাগুলিকে সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার পরে কেন্দ্রের ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকম (ডিওটি)-র তরফে এমন একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল, যাতে কার্যত শীর্ষ আদালতের ওই নির্দেশ না মানলেও টেলিকম সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা ছিল না। ডিওটি-র নির্দেশে বলা হয়েছিল, আপাতত অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ (এজিআর) মেটানোর প্রয়োজন নেই। সেই নির্দেশ কার্যত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশের নামান্তর হয়ে দাঁড়ায়। এর পর ১৬ জানুয়ারিতে ওই মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের ওই নির্দেশিকা নিয়ে চরম উষ্মা প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্র ও টেলিকম সংস্থাগুলিকে তুলোধনা করে ডিওটি-র যে আধিকারিক ওই নির্দেশিকা জারি করেছিলেন, তাঁকে অবিলম্বে নির্দেশিকা প্রত্যাহার করার কথা বলেছিল শীর্ষ আদালত। নয়তো জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতেও বলেছিলেন বিচারপতিরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Supreme Court Telecom Vodafone Idea Bharti Airtel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE