ছবি: পিটিআই।
মহল্লার সবার কাছে সে রানি। বাবা এলাকার একটি মুদির দোকানে কাজ করেন। মা ঘর সামলান। দুই দিদির সঙ্গে বেড়ে ওঠা রানি ক্লাস সেভেন-এ পড়ে। বড় দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আর মেজ জন পড়াশোনা ছেড়ে বাড়িতেই থাকে। চার জনের সংসার কোনও মতে ‘দিন আনা দিন খাওয়া’ করে চালাতে নাভিশ্বাস ওঠে বাবার। কিন্তু, রানি বেশ খুশিতেই আছে। নিয়মিত স্কুলে যায়। কোনও প্রাইভেট টিউটর ছাড়াই আগের পরীক্ষায় সে বেশ ভালই ফল করেছে। দশের ভেতরে নাম ছিল।
—বাবাকে তো আমিই বলেছিলাম নীতীশজিকে ভোট দেওয়ার জন্য। ভিন্ রাজ্য থেকে যাওয়া অপরিচিত মানুষের কাছে কোনও রকম রাখঢাক না করেই বলল রানি।
কেন?
জবাব এল, ‘‘আসুন। দেখাচ্ছি।’’
খুপচি যে ঘরে বসে কথাবার্তা চলছিল, তারই লাগোয়া একটি ঘরে টেনে নিয়ে গেল সে। ‘‘ওই দেখুন!’’—ঘরের ১০০ পাওয়ারের বাল্বটি জ্বালিয়ে আঙুল তুলে রানি কাপড় দিয়ে ঢাকা কিছু একটা দেখাল। ভাল মতো নজর করে বোঝা গেল, পুরনো রংচটা ওই কাপড়ের আড়ালে রয়েছে একটা সাইকেল। এ বার সে কাপড়টাকে যত্ন করে সরিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘‘আমার বড় সাধের সাইকেল জানেন! স্কুল থেকে এসে ঢেকে রেখে দিই। আবার পর দিন ফের স্কুল যাওয়ার আগে মুছে বের করি।’’ ‘অতিথি’কে প্রিয় জিনিসটি দেখাতে পেরে আহ্লাদে মুখ খানা প্রায় দশ খানা হওয়ার জোগাড় তখন তার। এর পরেই টোল পড়া গালের হাসিটা আরও চওড়া করে সে বলল, ‘‘নীতীশজি জেতায় আমি না ভীষণ খুশি হয়েছি।’’
শুধু দানাপুরের অকলুচকের রানি নয়, গোটা রাজ্যে তার মতো অনেক মেয়েই নীতীশ কুমার জেতায় খুশি। তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্ব কালে রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ছাত্রীদের। পাশাপাশি নারী শক্তিকে আরও পোক্ত করার ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয় বলে দাবি করছেন খোদ মহিলারাই। পুলিশে চাকরির পাশাপাশি নানা ক্ষেত্রে মহিলাদের কাজের সুযোগ বেড়েছে। এমনকী, জিতলে মহিলাদের জন্য সরকারি চাকরিতে ৩৫ শতাংশ সংরক্ষণের কথাও ঘোষণা করে রেখেছেন আগে থেকে। ছাত্রীরা সাইকেল পেয়েছে। দেওয়া হয়েছে বই। সঙ্গে পোশাক কেনার টাকা। এমনকী, স্কুলগুলিতে নতুন করে শিক্ষকও নেওয়া হয়েছে। আর সবের পেছনের কারিগর হিসেবে মহিলারা কৃতিত্ব দিচ্ছেন নীতীশ কুমারকে। যেমন রানিও খুব গর্বের সঙ্গে বলল, ‘‘এই সাইকেলটা আমাকে নীতীশজি দিয়েছেন। বইও দিয়েছেন। আসুন দেখাব!’’ এতটাই খুশী ওই কিশোরী যে, দিন পনেরো আগে বাবাকে রাজি করিয়েছে নীতীশজিকে ভোট দিতে।
রানির বাবা বছর পঁয়তাল্লিশের আনন্দ কুমার। মহল্লারই এক মুদির দোকানের ঠিকে কর্মী। বললেন, ‘‘টানাটানির সংসার। জিনিসপত্রের যা দাম তাতে শুধু খাওয়ার জোগাড় করতেই হিমশিম খাই, সেখানে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চালানোটা বেশ কঠিন ব্যাপার। সরকার যদি পড়াশোনার এমন আশ্বাস দেয়, তবে রানির মতো মেয়েদের তো খুশি হওয়ার কথা। আর সেটাই হয়েছে।’’
এ সব সত্ত্বেও আনন্দ কুমার ভেবেছিলেন এ বার বিজেপিকে ভোট দেবেন। কারণ লালুর সঙ্গে নীতীশের এই জোট তাঁর ভাল লাগেনি। আর সে কারণেই বাড়িতে খোলামেলা আলোচনায় জানিয়ে দিয়েছিলেন নিজের সিদ্ধান্ত। স্ত্রী তাঁর কথা মেনে নিলেও বাধ সাধে রানি। সে বাবার কাছে আবদার করে নীতীশকে ভোট দেওয়ার জন্য। ভেতরের টানাপড়েন কাটিয়ে শেষমেশ নীতীশেই আস্থা রেখেছেন আনন্দ কুমার।
ছোট মেয়ে যে এ ভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে তা ভাবেননি আনন্দের স্ত্রী। তিনি নিজেও তো তিন ক্লাসের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। বড় মেয়েকে চার ক্লাস আর মেজ জনকে ছয় ক্লাসের পর আর স্কুলে পাঠাতে পারেননি। রানি যদি ঠিকঠাক পড়াশোনাটা চালিয়ে পুলিশে একটা চাকরি পেয়ে যায় তবেই ষোলো কলা পূর্ণ হবে তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy