অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছবি: পিটিআই।
আলোচনার বিষয় ছিল দেশের আর্থিক পরিস্থিতি। তা নিয়ে জবাব দিতে গিয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে তৃণমূলকে বেনজির আক্রমণ করলেন মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। একই সঙ্গে একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা নিয়ে নির্মলা অভিযোগ তুললেন, রাজ্যের সরকার নিজে অনিয়ম করে এখন মোদী সরকারকে গরিব-বিরোধী বলে প্রচার করতে চাইছে।
রাজ্যসভায় দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘‘বিজেপি ভোটে জেতে। তবে আমাদের সঙ্গে লড়াই হলে ভোটে জেতে না। আমরা ভোটে জিতি। তাই সমানে-সমানে তুলনা হওয়া উচিত। আপনারাও জেতেন, আমরাও জিতি।’’ তৃণমূলের শান্তনু সেন, জহর সরকাররাও পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বকেয়া আটকে রাখা নিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা করেছিলেন।
আজ জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘ডেরেক বলেছিলেন, সমানে-সমানে তুলনা হয়। আমরা ওঁদের সঙ্গে লড়াই করে জিততে পারিনি। তবে আমাদের ভোট জয়ের সঙ্গে সত্যিই ওঁদের ভোট জয়ের তুলনা হয় না। কারণ ওঁরা ভোটে জিতলে আইন-শৃঙ্খলা শিকেয় ওঠে, খুন, রাহাজানি, মহিলাদের উপর অত্যাচার, বাড়িতে আগুন ধরানো শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গে ২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ক্ষমতাসীন দল হিসেবে ফের ভোটে জেতার পরে ঠিক তা-ই হয়েছে।’’
নির্মলা এ বিষয়ে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের রায়কে অস্ত্র করেন। তিনি বলেন, ‘‘যা বলছি, তা আমার কথা নয়। কলকাতা হাই কোর্ট বলেছে, ৬০ শতাংশ ভোট পরবর্তী হিংসার মামলায় এফআইআর দায়ের হয়নি। তাই হিংসার ঘটনা সব প্রকাশ্যে আসেনি। তাই আমাদের সঙ্গে তুলনা হয় না। কারণ আপনারা জিতলে আমাদের দলের কর্মী, সাধারণ মানুষ, মহিলাদের জীবন বিপদের মুখে পড়ে।’’
ডেরেক এ দিন তেলঙ্গানায় কংগ্রেস সরকারের শপথগ্রহণে গিয়েছিলেন বলে রাজ্যসভায় ছিলেন না। নির্মলা জবাব দেওয়ার আগে প্রশ্ন তুলেছিলেন, যে হেতু তৃণমূল সাংসদ হাজির নেই, তাই তাঁর বক্তব্যের জবাব দেবেন কি না! রাজ্যসভার চেয়াম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় বলেন, কিছু সাংসদ তাঁর অনুমতি নিয়েই অন্য কাজে গিয়েছেন। তাই জবাব দেওয়া হোক। এ দিন নির্মলার বক্তব্যের পরে এক্স-হ্যান্ডলে ডেরেক বলেন, ‘সংসদে অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে বলতে গিয়ে গুরুতর বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলাম। সরাসরি প্রশ্নও করেছিলাম। জবাবে পেলাম কিছু অর্থহীন কথাবার্তা।’
এ দিন নির্মলা বলেন, বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে ২০২১-এর ৪ মে খেজুরিতে ৬০ বছরের এক মহিলাকে তাঁর নাতির সামনে গণধর্ষণ করা হয়। ২১ মে ইন্দাসে বিজেপি কর্মী অরূপ দাসের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। এ ক্ষেত্রেও কলকাতা হাই কোর্টের রায়কে উদ্ধৃত করে নির্মলা বলেন, ‘‘এখানেও হাই কোর্ট উদ্ধারকর্তা। কলকাতা হাই কোর্ট তার ১৯ অগস্টের রায়ে বলেছে, যে ২৬৮টি এফআইআর দায়ের হয়েছে বলে পুলিশের দাবি, তার মধ্যে ২১৯টি-র নথি মেলেনি। কিছু ক্ষেত্রে ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর দায়ের হয়েছে। বাকি সব ক্ষেত্রে অনেক পরে দায়ের হয়েছে। ৬ মে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি মুরলীধরনের কনভয়ে হামলা হয়। এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরও নিরাপত্তা নেই।’’ অর্থমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে তোপ দাগায় জহর সরকার-সহ তৃণমূল নেতারা প্রতিবাদ করেন। জহর চিৎকার করে বলেন, মন্ত্রী কি হাই কোর্টের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ভাল, সেটাই বোঝাচ্ছেন! রাজনীতি ছেড়ে অর্থনীতি নিয়ে প্রশ্নে জবাব দেওয়ার দাবি তোলেন জহররা। নির্মলা আঙুল তুলে বলেন, ‘‘তুলনা আপনারা টেনেছেন। আমি জবাব দেবই।’’
পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা ও বারবার কেন্দ্রীয় দল পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শান্তনু, জহররা। নির্মলা বলেন, ‘‘আমি শুধু একটা উদাহরণ দেব। ২০১৯-এ জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় দল পূর্ব বর্ধমান ও হুগলিতে গিয়ে ৪.৮৪ কোটি টাকা বেআইনি বিলির সন্ধান পেয়েছিল। কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়। রাজ্য ট্রেজ়ারি থেকে করদাতাদের টাকা জমা করে দেয়। প্রথমে করদাতাদের টাকা বেহাত হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ করতে ফের করদাতাদের টাকা নষ্ট করা হচ্ছে। এ সব নিয়ে প্রশ্ন করলে গরিব-বিরোধী বলা হচ্ছে।’’ নির্মলার অভিযোগ, প্রকল্পে অনিয়মের জন্য জেলা বা উপরের স্তরের অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে নিচুতলার পঞ্চায়েত কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য। যে কাজ হয়ে গিয়েছে, তাকে ফের একশো দিনের কাজ হিসেবে দেখানো হয়েছে। সিপিএমকে নিশানা করে বলেন, বাংলায় একশো দিনের কাজে বেসরকারি চা-বাগানের রাস্তা তৈরি হয়েছে। কমিউনিস্টরা এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না। এখানে দু’একটি বেসরকারি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন।
একশো দিনের কাজের বকেয়া নিয়ে তৃণমূল এক বার দিল্লিতে ধর্না-আন্দোলন করেছে। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দিল্লি এসে ধর্নায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তৃণমূল কেন্দ্রীয় বঞ্চনা ও বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গ-বিরোধী হিসেবেও তুলে ধরতে চায়। নির্মলা বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে প্রচার হচ্ছে, মোদী টাকা আটকে রেখেছেন। মোদী নিজে একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি কোনও রাজ্যের সঙ্গে বৈষম্য করেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy