নির্ভয়া কাণ্ডে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত পবন, বিনয়, মুকেশ ও অক্ষয় (বাঁ দিক থেকে)। —ফাইল চিত্র
তিন জনের আর্জি আগেই খারিজ হয়েছিল। নির্ভয়া কাণ্ডে চতুর্থ দোষীর ফাঁসি রদের আবেদনও ফেরাল সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ চার জনেরই মৃত্যুদণ্ড কার্যত নিশ্চিত করে দিল শীর্ষ আদালত। তবে আইনজ্ঞ মহলের মতে, সুপ্রিম কোর্টেই আরও একটি রাস্তা খোলা রয়েছে দোষীদের কাছে। আইনি পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘কিউরেটিভ পিটিশন’ বা ‘রায় সংশোধনের আর্জি’। তার পর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষাও চাইতে পারেন চার দোষী।
‘কিউরেটিভ পিটিশন’ কি? এক কথায় বলতে গেলে কোনও রায় পছন্দ না হলে আইনি পথে এটাই শেষ বিকল্প। সুপ্রিম কোর্টে এই ‘রায় সংশোধনের আর্জি’র বিষয়টি চালু হয় ২০০২ সালে। রূপা অশোক হুডা বনাম অশোক হুডা মামলায় এই প্রশ্ন উঠেছিল যে, ‘রিভিউ পিটিশন’ বা রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ হওয়ার পরেও কোনও পক্ষ সন্তুষ্ট না হলে তাঁর কাছে আর কি কোনও বিকল্প থাকবে না? সেই মামলাতেই সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, বিচার প্রক্রিয়ায় যাতে কোনও গলদ বা ত্রুটি না থাকে, সেটা রুখতে পুনর্বিবেচনার পরেও ফের মামলার রায় খতিয়ে দেখতে পারে শীর্ষ আদালত। সেটাকেই নাম দেওয়া হয় ‘কিউরেটিভ পিটিশন’।
ফলে নির্ভয়াকাণ্ডের ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামিরাও সেই সুযোগ নিতে পারে বলেই মত আইনজীবী মহলের। সেই আর্জিতেও রায়ে কোনও রদবদল না থাকলে অর্থাৎ ফাঁসির আদেশ বহাল থাকলে তখন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাতে পারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। আইনি পথে সমস্ত বিকল্প শেষ হওয়ার পরেই এই আবেদন করা যায়। যদিও কিউরেটিভ পিটিশন না করেও মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচতে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হতে পারে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত।
নির্ভয়া কাণ্ডে ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত তিন জন আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন করবে না। অন্য এক দোষী বিনয় শর্মা আবার প্রাণভিক্ষার আবেদন করেও পরে তুলে নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তার বক্তব্য ছিল, ওই আবেদনে সে স্বাক্ষর করেননি এবং তার আইনজীবী তাকে না জানিয়েই আবেদন করেছিল। তবে আইনি পথে আর কোনও বিকল্প হাতে রয়েছে কি না, আগে সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলেও জানিয়েছিল বিনয়। অর্থাৎ কিউরেটিভ পিটিশন খারিজ এবং রাষ্ট্রপতিও প্রাণভিক্ষার আর্জি ফিরিয়ে দিলে তবেই ফাঁসির আসামির সমস্ত বিকল্প শেষ হয়।
যদিও সব বিকল্প শেষের পরেও সঙ্গে সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া যায় না। তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তার পরেও অন্তত ১৪ দিন সময় লাগে। কেন? জেলের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ২০০১ সালে সংসদে হামলায় দোষী সাব্যস্ত আফজল গুরুর প্রাণভিক্ষার আর্জি রাষ্ট্রপতি খারিজ করেছিলেন ২০১৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। তার ৬ দিন পরে ৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় তিহাড় জেলে। তার পরেই এত তাড়াতাড়ি ফাঁসিতে ঝোলানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তার জেরে নয়া জেল ম্যানুয়াল তৈরি হয় এবং তা কার্যকর হয় গত বছর।
সেই অনুযায়ী ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামির সব বিকল্প শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও আরও ১৪ দিন সময় লাগে ফাঁসি কার্যকর করতে। এই সময়ের মধ্যে আসামি এবং তার পরিবারকে ফাঁসির আদেশ একটি লাল খামে করে দিতে হয়। ফাঁসি রদের জন্য আসামি একে একে সব বিকল্প শেষ করে ফেলেছে এবং তার ফাঁসি অনিবার্য সেটাও লিখিত ভাবে পরিবার ও আসামিকে জানাতে হয়। পরিবারের সদস্যদের প্রাপ্তি স্বীকার এবং তার তারিখ নথিবদ্ধ করতে হয় জেলের রেজিস্টারে। পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আসামিকে দেখা করতে দিতে হয়।
অন্য দিকে এই সময় আসামিকে খোলামেলা পরিবেশে আলাদা সেলে রেখে এক জন ওয়ার্ডেন তার উপর সারাক্ষণ নজরে রাখেন। ঘনঘন তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করা হয়। আসামির ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে গুরুত্ব দিতেই হয় জেল কর্তৃপক্ষকে। এই গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আসামিকেও মানসিক ভাবে ফাঁসির জন্য প্রস্তুত করতে হয়। আইনি বিকল্প শেষ হওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানানোই দস্তুর। নির্ভয়া কাণ্ডের দোষীদের ক্ষেত্রেও এই এক সপ্তাহই সময় দেওয়া হয়েছে। দোষীরা আবেদন জানালে এবং রাষ্ট্রপতি খারিজ করার পরেও এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই যেতে হবে তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy