নির্ভয়া মামলার চার আসামি।
হেলদোল নাকি নেই। বরং ফাঁসির দিনক্ষণ কী ভাবে আরও পিছিয়ে দেওয়া যায়, নির্ভয়া মামলার চার আসামি তার ‘ছক’ কষছে বলেই পর্যবেক্ষণ তিহাড় জেলের কয়েক জন আধিকারিকের।
কয়েক দিন আগে পর্যন্ত তিহাড়ের দু’নম্বর জেলে রাখা হয়েছিল মুকেশ সিংহ, অক্ষয়কুমার সিংহ এবং পবন গুপ্তকে। আর তিন নম্বর জেলে বিনয় শর্মা। এখন বাকি তিন জনকেও তিন নম্বরে নিয়ে আসা হয়েছে। কারণ, তার অদূরেই ফাঁসির মঞ্চ। তিন নম্বর জেলের চারটি পৃথক সেলে রাখা হয়েছে চার জনকে। পাঁচ জন কারারক্ষী ওই সেলের উপরে নজর রাখছেন। নির্দিষ্ট সময় অন্তর তাঁদের বদলে দেওয়া হচ্ছে। রয়েছে বেশ কয়েকটি সিসি ক্যামেরাও।
জেল সূত্রে দাবি, আপাতত আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ফাঁসির আদেশ কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও চার আসামির আচার-আচরণে পরিবর্তন হয়নি। মাঝেমধ্যে ওই চার জনকে সেলের বাইরে বার করা হচ্ছে। সেই সময়ে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছে অভিযুক্তেরা। সেই
কথাবার্তা থেকেই আধিকারিকদের কেউ কেউ আঁচ পেয়েছেন যে ফাঁসির দিন কী ভাবে পিছনো যায়, তা নিয়েই কথা বলছে তারা। নিয়মানুসারে পবনদের সঙ্গে সপ্তাহে দু’দিন করে দেখা করার সুযোগ পান পরিজনেরা। কিন্তু পরিজনেরা এখন আর আসছেন না বলে জেল সূত্রের খবর। সে সব নিয়ে আসামিদের তেমন ‘হেলদোল নেই’ বলেই মনে হয়েছে ওই আধিকারিকদের।
জেল সূত্রের দাবি, খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রেও বিনয়, মুকেশ, অক্ষয় এবং পবনের পরিবর্তন হয়নি। ভাত, রুটি, তরকারির সঙ্গে ডিম-সয়াবিন দেওয়া হয় তাদের। রয়েছে পেয়ারা, আমলকি, কমলালেবু, মৌসম্বি, দুধ, দুগ্ধজাত খাবারও।
নিয়মিতই চার আসামির ‘কাউন্সেলিং’ এবং শারীরিক পরীক্ষা চলছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে কখনও কখনও সেলের বাইরে নিয়ে তাদের হাঁটা-ব্যায়ামের ব্যবস্থাও করেছেন জেল কর্তৃপক্ষ। তিহাড়ের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘শারীরিক এবং মানসিক ভাবে চার জনই ফিট। এখনও পর্যন্ত সমস্যা নেই।’’
মৃত্যুদণ্ডের আসামিদের অনেক ক্ষেত্রে আগ্রাসন বাড়ে। আবার অনেকের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। যেমন ইন্দিরা গাঁধী হত্যার দুই আসামি সতবন্ত সিংহ এবং কেহর সিংহের ভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা দেখা গিয়েছিল। নির্বিকার সতবন্ত ফাঁসুড়কে বলেছিল, ফাঁসির দড়ি যেন ‘আরামসে’ তার গলায় লাগানো হয়। কেহার কার্যত অচৈতন্য হয়ে পড়ে।
নির্ভয়া মামলার আসামিরা সত্যিই কি নির্বিকার হতে পারে? মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলছেন, ‘‘প্রাণদণ্ডাদেশের ক্ষেত্রে কারও বিকার হয়, কারও হয় না। অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ভাবতে পারে, যে সে হয়তো পরিস্থিতি সামলে নেবে। তাই বিকার থাকে না। আবার কারও বিকার থাকলে প্রকাশ্যে আনতে চায় না। তবে নির্ভয়ার ক্ষেত্রে যা দেখা গিয়েছে, তা হল নৃশংসতা। সেই নৃশংসতার অংশীদার ছিল এই চার জন। ওদের মানসিকতা হয়তো অন্য রকম। তাই হতাশা, কষ্ট, পাপবোধ, খারাপ লাগা, কোনওটাই নেই।’’ মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের বক্তব্য, ‘‘অপরাধীসুলভ মানসিকতা তৈরি হলে সব কিছুকেই অগ্রাহ্য করে অনেকে। নিজে ভুল করেছে বা অপরাধ করছে—সেই বোধই থাকে না। ওদের কাছে বেঁচে থাকা বা মৃত্যুর আলাদা অর্থ নেই। সে কারণে পরিবর্তন নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy