নেহরুর তিন মূর্তি ভবনে হঠাৎই হাজির পনেরো ‘মূর্তি’। নরেন্দ্র মোদী নিজেও।
জওহরলাল নেহরুর জন্মদিন গিয়েছে ১৪ নভেম্বর। ১৯ তারিখ ইন্দিরা গাঁধীর। এই সময়ের মধ্যে দিল্লির তিন মূর্তি ভবনে চলছে নেহরু থেকে মোদী— মোট ১৫ জন প্রধানমন্ত্রীর লেখা ও তাঁদের উপরে লেখা বইয়ের প্রদর্শনী। দিল্লিতে এই ভবনই ছিল দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরুর ভিটে। আর সেখানেই তাঁর একাধিপত্য ‘খতম’ করে ঢুকে পড়লেন মোদী!
এখানেই শেষ নয়। তোড়জোড় চলছে ভবন চত্বরেই নতুন সংগ্রহশালা নির্মাণের। একা নেহরু নন, তাঁর পরের সকলের, এমনকী আগামী দিনের সব প্রধানমন্ত্রীরই স্মারক সংগ্রহশালা হবে সেটি। কংগ্রেসের তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করেই।
রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে এই ভবনেই জীবনের শেষ ১৬টি বছর কাটিয়েছিলেন নেহরু। তাঁর মৃত্যুর পরে এটি ‘নেহরু স্মারক সংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগার’-এ রূপান্তরিত করা হয়। মোদী ক্ষমতায় আসার পরেই নজর পড়ে এই ভবনের উপর। পদাধিকার বলে প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই সংস্থার সভাপতি। প্রথমেই দীনদয়াল উপাধ্যায়ের উপরে একটি প্রদর্শনীর প্রস্তুতি শুরু হয়। পরে স্থির হয়, ভবনে একা নেহরু নন, দেশের সব প্রধানমন্ত্রীকেই মেলে ধরা হবে। সেই মতো নেহরুর জন্মদিনের সময়েই সংগ্রহশালায় সব প্রধানমন্ত্রীর প্রদর্শনী চালু করে দেন কর্তৃপক্ষ। নেহরুর কক্ষের পাশের হলেই প্রায় পাঁচশো বইয়ের সম্ভার নিয়ে চলছে প্রদশর্নী। নেহরু থেকে মোদীর ছবি দিয়ে।
এই পদক্ষেপ আসলে আরও বড় উদ্যোগের শুরু মাত্র। তিন মূর্তি ভবন চত্বরেই তৈরি হবে আর একটি নতুন সংগ্রহশালা। সেখানে সামিল করা হবে সব প্রধানমন্ত্রীকে। এই উদ্যোগের কথা জানার পর থেকেই এর বিরোধিতা করছে কংগ্রেস। দলের নেতা জয়রাম রমেশের কথায়, ‘‘খাটো করার চেষ্টা করা হচ্ছে নেহরুর ঐতিহ্যকে।’’ কংগ্রেসের আরও অভিযোগ, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইতিহাসকে নতুন করে লেখার চেষ্টা করছে। মুছে দিতে চাইছে নেহরু-গাঁধীর ঐতিহ্য। এমনকী, ভোটের সময়েও নেহরুকে নিয়ে অশ্লীল প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি।
সংস্কৃতি মন্ত্রকের কর্তাদের পাল্টা বক্তব্য, নেহরু-গাঁধীকে তুলে ধরতে গিয়ে কংগ্রেস এত দিন মোরারজি দেশাই, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, নরসিংহ রাওদের খাটো করে এসেছে। দেশ নির্মাণে তাঁদের অবদানও তুলে ধরা উচিত। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী মহেশ শর্মার বক্তব্য, ‘‘সংগ্রহশালাকে আরও গণতান্ত্রিক করে তুলতেই এই উদ্যোগ।’’ সংগ্রহশালা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এটি তৈরির সময়েই সমঝোতাপত্রে বলা হয়েছিল, এখানে সমসাময়িক ইতিহাসকে তুলে ধরা হবে। ফলে কংগ্রেসের আপত্তি ধোপে টেকে না। অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে তাঁর ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন শক্তি সিংহ। বর্তমানে তিনি এই সংগ্রহশালার নির্দেশক। তিনি বলেন, ‘‘আগামী বছরই নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়ে যাবে। স্থপতিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। নতুন সংগ্রহশালা এমন ভাবে সাজানো হবে, যাতে আগামী দিনের সব প্রধানমন্ত্রীকেও মেলে ধরা যায়। এর জন্য গোটা ব্যবস্থাটিই হচ্ছে ডিজিটালে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy