Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
NEET Paper Leak Case

স্থানীয় পর্যায়ে প্রশ্ন ফাঁস, শুরুতেই দাবি ধর্মেন্দ্রের

গোটা দেশেই ওই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল বলে মানতে রাজি নয় শিক্ষা মন্ত্রক। সেই কারণে ওই পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সূত্রের মতে, তা ছাড়া বিষয়টি নিয়েসুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলাও চলছে।

নিট-এর প্রশ্ন ফাঁসে ধৃতদের হাসপাতালে ডাক্তারি-পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে বিহার পুলিশ। রবিবার।

নিট-এর প্রশ্ন ফাঁসে ধৃতদের হাসপাতালে ডাক্তারি-পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে বিহার পুলিশ। রবিবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ০৭:২৭
Share: Save:

ডাক্তারির প্রবেশিকা নিট-এর প্রশ্নপত্র ফাঁস কাণ্ডে সদ্য তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। সেই তদন্তের অভিযোগ ভাল করে দায়ের হওয়ার আগেই আজ কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান কার্যত রায় দিয়ে জানিয়ে দিলেন, গোটা দেশে নয়, ডাক্তারি-প্রবেশিকা নিট-এর প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল একেবারে স্থানীয় পর্যায়ে। তাই পরীক্ষা বাতিল করা হয়নি।

এ দিকে অষ্টাদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশনের আগে বিরোধীদের দাবি, প্রশ্ন ফাঁস কেলেঙ্কারি নিয়ে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ হোক সংসদে। রীতিমতো ব্যাকফুটে চলে যাওয়া ধর্মেন্দ্র আজ জানান, নির্দেশ দেওয়া হলে তিনি প্রশ্ন ফাঁস বিতর্কে সংসদে বয়ান দিতে প্রস্তুত। বিষয়টির সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে যাওয়ায় রাজনৈতিক ভাবে গোটা কেলেঙ্কারির দায় স্বীকার ছাড়া সরকারের কাছে কোনও রাস্তাও খোলা নেই। তাই আজ ফের প্রশ্ন ফাঁসের পিছনে নৈতিক দায় স্বীকার করে নেন ধর্মেন্দ্র। তবে আপাতত ইস্তফা দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই বলেই জানা গিয়েছে। সূত্রের মতে, পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ)-র সংস্কারে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আগামিকাল তাঁদের প্রথম বৈঠকে বসতে পারে।

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ‘স্থানীয় পর্যায়ে প্রশ্ন ফাঁস’ বলে তদন্ত শুরুর আগেই ‘রায়’ দিলেও বাস্তবে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে দেশের একাধিক রাজ্যে। বিহার, ঝাড়খণ্ড, গুজরাত হয়ে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে এ দিন নাম জুড়ে গিয়েছে মহারাষ্ট্রেরও। প্রাথমিক তদন্তে একের পর এক কেন্দ্রের নাম উঠে এলেও আজ ঘরোয়া ভাবে ধর্মেন্দ্র প্রধান দাবি করেছেন, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র খুব অল্প সংখ্যক কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা হাতে পেয়েছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্রের দাবি, খুব বেশি হলে ১৫-২০টি কেন্দ্রের কিছু সংখ্যক পরীক্ষার্থীর কাছে ওই প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে পৌঁছে যায়। প্রশ্ন ফাঁস সত্ত্বেও কেন তা বাতিল হচ্ছে না, তার পিছনে ধর্মেন্দ্র প্রধানের যুক্তি, গোটা দেশে ২৩ লক্ষের বেশি পড়ুয়া ওই পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে দেশের মেডিক্যাল কলজেগুলিতে এক লক্ষ পরীক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেন। প্রথম এক লক্ষ পড়ুয়াদের কেন্দ্র বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, তাঁদের উপস্থিতি দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার কেন্দ্রে ছড়িয়ে রয়েছে। বড় শহর ছাড়াও ছোট টাউন এমনকি প্রত্যন্ত ব্লকের পরীক্ষার্থীরা যোগ্যতামান ছুঁতে সক্ষম হয়েছেন।

ধর্মেন্দ্রের যুক্তি, যদি কোনও নির্দিষ্ট শহর বা কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁস হত, তা হলে সে‌ই শহর বা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা বেশি সংখ্যায় মেধা তালিকায় স্থান পেতেন। শিক্ষা মন্ত্রকের দাবি, ফলাফলে সে ধরনের কোনও ‘প্যাটার্ন’ লক্ষ্য করা যায়নি। তাই গোটা দেশেই ওই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল বলে মানতে রাজি নয় শিক্ষা মন্ত্রক। সেই কারণে ওই পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সূত্রের মতে, তা ছাড়া বিষয়টি নিয়েসুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলাও চলছে। তাই আপতত সুপ্রিম কোর্ট আগামী দিনে কী ধরনের পদক্ষেপ করে, সে দিকে নজর রাখার পক্ষপাতী সরকার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী ৬ জুলাই যেমন নিটের পরীক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং হওয়ার কথা, তেমনি হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রক।

কিছু কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের দেরিতে প্রশ্নপত্র দেওয়ার কারণে ‘গ্রেস নম্বর’ দেওয়া নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। ওই গ্রেস নম্বর দেওয়ার দায় এনটিএ-র ঘাড়ে ঠেলে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রক। বলা হয়েছে, পরীক্ষার্থীদের দেরিতে প্রশ্ন হাতে পাওয়ায় তাঁদের গ্রেস নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এনটিএ। এ ক্ষেত্রে দেরিতে প্রশ্ন হাতে পাওয়াদের সময় বাড়িয়ে দেওয়া যেত বলেই দাবি করেছেন শিক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা। তাঁদের মতে, তা হলেই বিতর্ক এড়ানো যেত।

আগামিকাল সংসদের অধিবেশনের প্রথম দিনেই বিরোধীদের বাক্যবাণের যে শিকার হতে হবে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতৃত্ব। প্রথমে রেল দুর্ঘটনা ও তার পরে একের পর এক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তথা পরীক্ষা বাতিল বিরোধীদের হাতে একাধিক অস্ত্র তুলে দিয়েছে। আজ ফের সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। তিনি সমাজমাধ্যম এক্স-এ লেখেন, ‘স্নাতকস্তরের নিটে প্রশ্ন ফাঁস। স্নাতকোত্তর স্তরের নিট-স্থগিত। একই ভাবে স্থগিত হয়েছে ইউজিসি-নেট ও ইউজিসি-সিএসআইআর-নেট পরীক্ষা। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলির এই হাল। বিজেপির শাসনে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে মাফিয়া ও দুর্নীতিগ্রস্তদের হাতে চলে গিয়েছে। লোভী ও তোষামোদিতে ব্যস্ত অযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সঁপে দেওয়ার রাজনৈতিক জেদ ও অহংঙ্কারই প্রশ্ন ফাঁস, পরীক্ষা বাতিল, শিক্ষা প্রাঙ্গনে পড়াশোনোর অবলুপ্তির পাশাপাশি রাজনৈতিক গুন্ডামির রাস্তা খুলে দিয়েছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে বিজেপি স্বচ্ছ ভাবে একটি পরীক্ষাও নিতে পারছে না।’’ প্রিয়ঙ্কার মতে, ‘‘আজ দেশের যুব সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি সরকার। দেশের যোগ্য যুবকেরা নিজেদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়, নিজেদের সব শক্তি বিজেপির দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে খরচ করে ফেলছে। আর মোদী কেবল তামাশা দেখে চলেছেন।’’

রবিবার কৃষ্ণনগরে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেন পরীক্ষা পে চর্চা। ফলাফলে এত দুর্নীতি হয়েছে, তা নিয়ে চর্চা করা হচ্ছে না কেন? প্রধানমন্ত্রী এখনও এ বিষয়ে একটিও কথা কি বলেছেন? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও তাই। বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী একটা কথাও কি বলেছেন?’’

নিটে হওয়া দুর্নীতি এবং নেট বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘কেন্দ্র সরকার জানে, কোনটা কী করতে হয়। এবং তারা কড়া পদক্ষেপ করেছে। যে পদক্ষেপ পশ্চিমবঙ্গ সরকার করে না। বরং পশ্চিমবাংলার ক্ষেত্রে যারা দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ত্রুটি করে, তাদের বাঁচানোর চেষ্টা চলে।’’ শুভেন্দু এ-ও বলেছেন, ‘‘এটা আংশিক পদক্ষেপ। সামগ্রিক ভাবে কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে যে সব পদক্ষেপ কররা হচ্ছে, তা এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে নেওয়া হয় না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

NEET CBI Dharmendra Pradhan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy