Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে অনড় উদ্ধব, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের লিখিত আশ্বাস দাবি শিবসেনার

এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার আজও স্পষ্ট বলেছেন যে, সরকার গড়ার কোনও বিকল্প তাঁদের সামনে নেই। ভোটদাতাদের রায় মেনে বিরোধী আসনেই বসবে এনসিপি।

উদ্ধব ঠাকরে।

উদ্ধব ঠাকরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৯ ০২:০৩
Share: Save:

মহারাষ্ট্রে সরকার গড়া নিয়ে জট খুলল না আজও। আড়াই বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পদ চেয়ে এখনও অনড় উদ্ধব ঠাকরের দল। এক ধাপ সুর চড়িয়ে শিবসেনা আজ এ নিয়ে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের লিখিত আশ্বাস দাবি করেছে।

এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার আজও স্পষ্ট বলেছেন যে, সরকার গড়ার কোনও বিকল্প তাঁদের সামনে নেই। ভোটদাতাদের রায় মেনে বিরোধী আসনেই বসবে এনসিপি। কিন্তু বড় শরিক বিজেপির প্রতি শিবসেনার যে দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ রয়েছে, তা উস্কে দিতে আজ তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে কংগ্রেস ও এনসিপির একাংশ। এনসিপি নেতা ছগন ভুজবল কিংবা কংগ্রেস সাংসদ হুসেন দলওয়াই একই সুরে বলেছেন, শিবসেনা একা সরকার গড়তে চাইলে কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলি পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত।

ভোটের ফল বেরোতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, শিবসেনার সমর্থন ছাড়া বিজেপির পক্ষে সরকার গড়া অসম্ভব। আর তা বুঝেই উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে সোজা মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি চেয়ে সরব হন উদ্ধব। পঞ্চাশ-পঞ্চাশ সমীকরণ মেনে সরকার গড়ার দাবি ওঠে। সূত্রের বক্তব্য, এ যাবৎ বিজেপি একচেটিয়া ছড়ি ঘুরিয়ে এসেছে শিবসেনার উপরে। তাই এ বার সুযোগ পেতেই বিজেপিকে পাল্টা চাপে রাখার কৌশল নিয়েছেন উদ্ধবেরা। তবে এখনও শিবসেনার দাবি মানার প্রশ্নে অমিত শাহেরা যেমন নীরব, তেমনই নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন উদ্ধবেরা।

এই পরিস্থিতিতে আজ উদ্ধবের বাড়ি মাতশ্রীতে বৈঠকে বসেন শিবসেনার জয়ী বিধায়কেরা। সেই বৈঠকেও উদ্ধব-পুত্র আদিত্যকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর জন্য ফের দাবি ওঠে। বৈঠক শেষে ঠাণের বিধায়ক প্রতাপ সরনায়েক বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের আগে অমিত শাহ সমস্ত ভোটে পঞ্চাশ-পঞ্চাশ সমীকরণের কথা বলেছিলেন। সেই সূত্র মেনে উভয় দল আড়াই বছর সরকার চালানোর দায়িত্ব পাক। তা হলে শিবসেনার কোনও নেতাও মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন। ওই সমীকরণ মেনে চলার বিষয়ে শিবসেনাকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিক বিজেপি।’’ তা না-হলে প্রয়োজনে শিবসেনা অন্য পথ ভাবতে পারে বলে আজ প্রচ্ছন্ন হুমকিও বিজেপিকে দিয়ে রেখেছেন ওই বিধায়ক।

ভারতের রাজনীতিতে দুই জোট শরিকের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদ ভাগাভাগি করে নেওয়ার নজির সাম্প্রতিক অতীতে এক বারই রয়েছে। ১৯৯৩ সালে উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে রুখতে জোট করেছিল এসপি এবং বিএসপি। ঠিক হয়েছিল, মুলায়ম সিংহ যাদব এবং মায়াবতী পালা করে মুখ্যমন্ত্রী হবেন। কিন্তু নির্ধারিত মেয়াদ শেষের পরেও কুর্সি ছাড়তে চাননি মুলায়ম। উল্টে মায়াবতীর উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে এসপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মায়া বিজেপির হাত ধরেন।

দীর্ঘ দিন বাদে মহারাষ্ট্রে শিবসেনার কাছে তো বটেই, তার চেয়েও বড় কথা, এই প্রথম ঠাকরে পরিবারের কোনও সদস্যের সামনে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার সুযোগ এসেছে। তাই শিবসেনা তা ছাড়তে নারাজ। দলের একাংশ মনে করছে, মহারাষ্ট্রের নিজেদের প্রভাব বাড়াতে হলে এই সুযোগ ছাড়া অনুচিত। যদিও রাজনীতির অনেকেরই বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে শিবসেনা চাপ বাড়ানোর কৌশল নিলেও তাদের আসল লক্ষ্য উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব এবং স্বরাষ্ট্র বা অর্থের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর। কারণ রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ আদিত্যকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দলের অনেকে চাইলেও আদিত্যের এই মুহূর্তে উপমুখ্যমন্ত্রী পদে বসাটাই যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেন খোদ উদ্ধব।

নীতিগত ভাবে উপমুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়তে বিজেপিরও আপত্তি নেই। কিন্তু বড় শরিক হিসেবে স্বরাষ্ট্র বা অর্থ দফতর ছাড়ার প্রশ্নে আপত্তি রয়েছে তাদের। সূত্র জানিয়েছে, দফতর বণ্টন সংক্রান্ত জটিলতা কাটলেই সরকার গড়া নিয়ে ঘোষণা হবে। সেই কারণে আগামী ৩০ অক্টোবর বিজেপির বিধায়ক দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে দেবেন্দ্র ফডণবীসকেই বিধানসভার নেতা হিসেবে নির্বাচিত করবে দল। বিজেপি শিবির আশা করছে, হরিয়ানায় আগামিকাল শপথগ্রহণ হয়ে গেলেই মহারাষ্ট্রের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সে ক্ষেত্রে আগামী দিন তিনেকেই অচলাবস্থা কেটে যেতে পারে।

এই মুহূর্তে কংগ্রেস ও এনসিপির মোট বিধায়ক সংখ্যা ৯৮। শিবসেনার ৫৬। কংগ্রেস নেতা বিজয় ওয়াদেটিট্টিওরের কথায়, ‘‘শিবসেনাকে যদি কংগ্রেস ও এনসিপি সমর্থন দেয়, তা হলেই বিধায়ক সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫৪-তে। সরকার গড়তে ম্যাজিক সংখ্যা হল ১৪৫। তাই শিবসেনা এখন ঠিক করুক তারা কী চায়— আড়াই বছরের আংশিক শাসন না পাঁচ বছরের পূর্ণ শাসন।’’ যদিও এনসিপির আর এক শীর্ষ নেতা প্রফুল্ল পটেল বলেন, ‘‘এনসিপি কোনও সরকার গঠনের অংশীদার হতে অনিচ্ছুক। বরং বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে আমরা প্রস্তুত।’’ আর ঠিক এই কথাটিই বলেছেন পওয়ার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy