পরীক্ষার্থী: রেলকর্মী-অফিসার।
প্রশ্নকর্তা: আম-ট্রেনযাত্রী।
পরীক্ষক, পরিদর্শক: রেলমন্ত্রী।
মহাপরীক্ষক: খোদ প্রধানমন্ত্রী।
জীবনের নানা পর্যায়ে নানান পরীক্ষা দিয়ে রেলের ছোট-মেজো-বড় পদে পৌঁছেছেন তাঁরা। কিন্তু আসন্ন পরীক্ষাটা যেন হাজির হচ্ছে মহাপরীক্ষার চেহারায়। কী ভাবে সেই বৈতরণী উতরোবেন, ভেবে কাঁটা হয়ে আছেন রেলের কর্মী-অফিসারেরা।
প্রশ্ন কেমন হতে পারে, সেটা তো বড় প্রশ্ন বটেই। তার থেকেও বড় কাঁটা প্রশ্নকর্তারা। পরীক্ষক-পরিদর্শক রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর সামনে প্রশ্নকর্তা যাত্রিসাধারণ কী ভয়ানক প্যাঁচে ফেলবেন, ভেবেই ঘুম ছুটে গিয়েছে রেলের কর্মী-অফিসারদের!
এত উদ্বেগের কারণ কী?
নতুন সরকারের এক বছর পরে অন্যান্য ক্ষেত্রের সঙ্গে রেল-পরিস্থিতি কতটা বদলাল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে সেই খতিয়ান চেয়েছেন বলে রেল সূত্রের খবর। সেই জন্যই রেলে এখন সাজো সাজো রব। অফিসার-কর্মীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সেই পরীক্ষার প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন। পাঠ তো অনেক রকমের: l টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে সব রকমের হিসেব ‘আপডেট’ বা হালনাগাদ করে রাখা।
• স্টেশন ধুয়েমুছে সাফসুতরো করা।
• ট্রেন চলাচলের সব তথ্য হাতের কাছে তৈরি রাখা।
• নিরাপত্তার ফস্কা গেরোর জায়গাগুলোয় জোড়াতালি দেওয়া। আরও কত কী! শুধু হাওড়া বা শিয়ালদহ নয়, দেশের সব ক’টি জোনেই চলছে এই কর্মকাণ্ড।
কিন্তু এ ভাবে উঠেপড়ে লেগেও রেলের কর্মী-অফিসারেরা স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না। কেন?
শিরে সংক্রান্তি যে! প্রধানমন্ত্রী যা চেয়েছেন, রেলের সব জোনে সেই কাজের খতিয়ান নেওয়ার পরীক্ষা একসঙ্গে শুরু হচ্ছে আজ, সোমবার। শুধু রেলমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর কাছে খতিয়ান দাখিল করলেই হবে না। এক বছরে কী কী কাজ হয়েছে, যাত্রীদের সামনে তা জানাতে হবে বিভিন্ন জোনের রেলকর্তাদের। মুখোমুখি পরীক্ষার এই ধাঁচটাই রেলকর্তাদের চিন্তা বাড়িয়েছে। কেননা একতরফা জবাব শুনে যাত্রীরা বাড়ি চলে যাবেন, এমন তো নয়! তাঁরাও প্রশ্ন করার, রেলকর্তাদের জবাবের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে দেখার সুযোগ পাবেন। পরীক্ষার এই ‘ভাইভা’ বা মুখোমুখি প্রশ্নোত্তর পর্বটাই স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না রেলকর্তাদের।
কারণ, ‘স্টেজ’-এ মেরে দেওয়ার কৌশল খাটবে না। পরিকাঠামোর অভাবে ট্রেনযাত্রার ঝক্কি, নিরাপত্তার ঘাটতি ইত্যাদি নিয়ে নিত্যযাত্রীরা প্রশ্ন তো শানাবেনই। তার উপরে আগামী ৬ জুন সেই পরীক্ষায় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু নিজেই উপস্থিত থাকবেন শিয়ালদহে। প্রশ্নকর্তা ও পরীক্ষকের মাঝখানে বসে উত্তর দেওয়ার পালা শেষ পর্যন্ত কেমন দাঁড়াবে, ভেবে পাচ্ছে না রেলকর্তারা। তাঁদের আশঙ্কা, যাত্রীদের অভিযোগের বানানো জবাব দিতে গেলে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হবে না তো?
‘‘রেলমন্ত্রীর সামনে যাত্রীরা যদি আমাদের গালভরা কথা শুনতে না-চান, তখন বিপদে পড়তে হবে,’’ বললেন এক রেলকর্তা।
কিন্তু এমন আশঙ্কা কেন?
রেলকর্তাদের একাংশ বলছেন, মূল প্রশ্ন সাকুল্যে দু’টো:
• সময়মতো ট্রেন চলে না কেন?
• নিরাপত্তার অভাব না-মেটানোর কারণ কী?
কোনওটারই জুতসই জবাব নেই রেলের কাছে। বিশেষ করে শিয়ালদহ ও হাওড়ার রেলকর্তারা এই দু’টি বিষয়েই ডাহা ফেল বলে মনে করেন যাত্রীরা। শিয়ালদহ শাখার নিত্যযাত্রী, ব্যারাকপুরের বাসিন্দা অপর্ণা মোহন্ত বলেন, ‘‘কোনও দিনই ট্রেন সময়মতো চলে না। আর শুধু মহিলা নয়, কোনও যাত্রীরই নিরাপত্তার বালাই নেই। টিটাগড়ে চলন্ত ট্রেনে বোমা বিস্ফোরণের পরেও হেলদোল নেই রেলের।’’ একই বক্তব্য হাওড়া-খড়্গপুর শাখার নিত্যযাত্রী বিপুল তরফদারের। তিনি বলেন, ‘‘রোজ ট্রেন লেট! কোনও দিনই ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছতে পারি না।’’
দূরপাল্লার ট্রেনের হালও তথৈবচ। যাত্রীদের অভিযোগ, সময়সারণি না-মেনে ট্রেন চলাটাই এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। নামী ট্রেনগুলিও প্রায়ই চার-পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে চলছে। বিশেষ করে ভায়া মোগলসরাই সব ট্রেনের যাত্রীরা প্রায় রোজই নাকাল হচ্ছেন।
এই দু’টি মূল সমস্যা ছাড়াও খাবার-সহ রেলের বিভিন্ন পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ যাত্রীদের। রাজধানী এক্সপ্রেস, বিমানের সমান ভাড়ার প্রিমিয়াম ট্রেনেও খাবারের নিম্ন মান নিয়ে অভিযোগ উঠছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নালিশ করেও ফল মেলে না। অনেক সময় ‘অভিযোগ বই’-ও দেওয়া হয় না।
যাত্রীদের অভিযোগ কলকাতার মেট্রো রেলের পরিষেবা নিয়েও। প্রায় প্রতিদিনই কোনও না-কোনও কারণে সুড়ঙ্গের মধ্যে আটকে পড়ছে মেট্রো। কয়েক মাস আগেই বেলগাছিয়া খালের নীচের ‘ডেঞ্জার জোন’-এ দীর্ঘ ক্ষণ আটকে ছিল ট্রেন। সে-যাত্রায় যাত্রীরা কোনও মতে প্রাণ বাঁচালেও তাঁদের আতঙ্কও এখনও কাটেনি। মেট্রো-কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যত উদাসীন বলে যাত্রীদের অভিযোগ।
রেলমন্ত্রীর সামনে এই সব প্রশ্ন উঠলে তা সামলানো মুশকিল হবে বলেই মনে করছেন রেলকর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy