নরেন্দ্র মোদী।
লোকসভা ভোটের আগে ফেব্রুয়ারিতে বিরতি নিয়েছিলেন রেডিয়োর ‘মন কি বাত’ থেকে। বলেছিলেন, আবার ফিরছেন। হয়েছেও তাই। তিনশো পার করে ফের ক্ষমতায় এসেছেন নরেন্দ্র মোদী। বিরোধীদের কটাক্ষ করেই আজ ফের শুরু করলেন সেই অনুষ্ঠান। দাবি করলেন, মানুযের ওপর ভরসা করেই তিনি আবার ফিরে আসার কথা বলার জোর পেয়েছিলেন। আর রাজনীতি নয়, আত্মোপলব্ধির জন্যই ধ্যানে বসেছিলেন কেদারনাথের গুহায়। মোদীর কথায়, মুন্সি প্রেমচন্দের ‘ইদগা’ গল্পই নাকি তাঁর ‘উজ্জ্বলা’ প্রকল্পের প্রেরণা। যে প্রকল্পে গরিবের রান্নাঘরে গ্যাসের সিলিন্ডার পৌঁছে দিতে চেয়েছে সরকার।
ভোটের বিরতির আগে মোদীর মুখে ‘ফিরে আসা’র কথা শুনে কটাক্ষ করেছিলেন বিরোধী নেতারা। আজ সে কথা শুনিয়ে বললেন, ‘‘অনেকেই বলেছিলেন, মোদীর কত আত্মবিশ্বাস! কিন্তু এই বিশ্বাস মোদীর নয়, আপনাদের বিশ্বাসের কারণেই আমি সহজ ভাবে বলে ফেলেছিলাম, কয়েক মাস পরে আসছি। আমি তো আসিনি, আপনারা এনেছেন।’’
প্রথম জমানাতেই মাসের শেষ রবিবার মোদীর এই রেডিয়ো বার্তা নিয়ে বিরোধীরা বার বার প্রশ্ন তুলেছেন। অভিযোগ ছিল, সরকারিতন্ত্র ব্যবহার করে ভোটের রাজনীতি করছেন মোদী। কিন্তু শক্তি বাড়িয়ে জিতে আসা প্রধানমন্ত্রীকে ঠেকায় কে?
সদ্য হওয়া নির্বাচনকে আজও তিনি ১৯৭৭-এর ভোটের সঙ্গে তুলনা করলেন। জরুরি অবস্থার পরে যে নির্বাচনে মোরারজি দেশাইয়ের সরকার এসেছিল ইন্দিরা গাঁধীকে পরাস্ত করে। কংগ্রেসকে বিঁধে মোদী বলেন, ‘‘৭৭-এর নির্বাচনে মানুষ কোনও কিছুর পরোয়া না করে গণতন্ত্রের পক্ষে ভোট দেন।’’
বিরোধী দলের অনেকেই এখনও ভোটের ফলের জন্য নির্বাচন কমিশন ও ইভিএম-কে দায়ী করছেন। মোদী আজ আরও এক বার কমিশনের তারিফ করলেন। সাম্প্রতিক নির্বাচনকে ‘দুনিয়ার ইতিহাসে সব থেকে গণতান্ত্রিক ভোট’ অ্যাখ্যা দিলেন। একই সঙ্গে জলসঞ্চয় আন্দোলন গড়ে তোলার আর্জিও জানালেন। সমাজের সব অংশকে এ কাজে এগিয়ে আসার আবেদন জানালেন। ঠিক যে ভাবে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ শুরু করেছিলেন তিনি।
আগের জমানাতেই ‘মন কি বাত’ শোনার জন্য বিজেপি নেতাদের জমায়েত হওয়ার নির্দেশ ছিল। বিজেপি সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজও দিল্লির নেতাদের নিয়ে পশ্চিম দিল্লির একটি স্টেডিয়ামে বসে শুনলেন প্রধানমন্ত্রীর রেডিয়ো বার্তা। কার্যকরী সভাপতি জে পি নড্ডা ছিলেন আর এক সমাবেশে। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর এই অনুষ্ঠানে দলের জনভিত্তি প্রসারিত হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় এর প্রভাব অনেক। জল সঞ্চয়ের মতো অভিযানের মারফত আজও জন-অংশীদারির নতুন বার্তা যেমন তিনি দিলেন, তেমনই ‘সবকা বিশ্বাস’-এর মন্ত্রও শুনিয়েছেন।’’
শেষ দফার ভোটের মুখে কেদারনাথ গিয়ে ধ্যানে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেটি বিধি ভঙ্গ বলে সেই সময় বিরোধীরা অভিযোগ করেন। আজ মোদী বলেন, ‘‘অনেকে এর মধ্যে রাজনীতি দেখেছেন। কিন্তু আমার কাছে এটি ছিল নিজের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ।’’ মোদীর যুক্তি, ‘মন কি বাত’ না করতে পারার শূন্যতা মেটাতেই তিনি ধ্যানে বসেছিলেন। এই সফরের আরও অভিজ্ঞতা তিনি পরে শোনাবেন বলে জানিয়ে রাখলেন।
বিরোধীরা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও মোদীর যুক্তি তাঁদের হজম হচ্ছে না। তবে বিজেপি বলছে, এটাই প্রধানমন্ত্রীর ‘সবকা বিশ্বাস’-এর মন্ত্র। এক দিকে
কেদারনাথের কথায় হিন্দুত্বের প্রচার। অন্য দিকে প্রেমচন্দের গল্পের চরিত্র হামিদের কথা শোনাচ্ছেন। ‘ইদগা’ গল্পের হামিদের কথা পড়েই নাকি ‘উজ্জ্বলা’ প্রকল্পের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy