Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Delhi Ordinance

দিল্লির আমলাদের রাশ হাতে রাখার অর্ডিন্যান্স সংশোধনে সক্রিয় কেন্দ্র, বদলাচ্ছে তিনটি বিধি?

গত ১১ মে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছিল, আমলাদের রদবদল থেকে যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে দিল্লি সরকারের। তার পরেই অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল মোদী সরকার।

Narendra Modi government changes three points of the bill on control of services in Delhi

নরেন্দ্র মোদী (বাঁ দিকে) এবং অরবিন্দ কেজরীওয়াল। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৩ ১৮:০৯
Share: Save:

বদল ঘটেছে খসড়ায়। দিল্লির আমলাদের রাশ হাতে রাখতে গত ১৯ মে নরেন্দ্র মোদী সরকার যে বিতর্কিত অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জারি করেছিল, তাকে স্থায়ী আইনের রূপ দিতে তৈরি হয়েছে বিলের খসড়া। কিন্তু সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই অর্ডিন্যান্সের অন্তত তিনটি বিষয়ে সংশোধন করা হয়েছে বিলের খসড়ায়। চলতি সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদের বাদল অধিবেশনে খসড়াটি পেশ করতে পারেন বলে ওই সূত্রের খবর।

সূত্রের খবর, অর্ডিন্যান্সের ৩এ ধারাটি বিলের খসড়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে। রাখা হয়েছে শুধুমাত্র ভারতীয় সংবিধানের ২৩৯এএ অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ। ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনও আদালতের কোনো রায়, নির্দেশ বা ডিক্রিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, ওই অনুচ্ছেদে অনুযায়ী আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আইনসভার। প্রসঙ্গত, গত ২০ জুলাই প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ নির্দেশে বলেছিল, ‘‘জন পরিষেবা সংক্রান্ত ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে শাসনের সাংবিধানিক নীতিতে হস্তক্ষেপ করা যায় কি না, সাংবিধানিক বেঞ্চ তা বিবেচনা করবে।’’ এমনকি, সংসদ সংবিধানের ২৩৯এএ অনুচ্ছেদে বদল ঘটিয়ে জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লির শাসন ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে কি না, তা-ও ‘সাংবিধানিক বেঞ্চের বিচার্য’ বলে জানানো হয়েছে তিন বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশে।

১০ পাতার ওই নির্দেশে বলা হয়, অর্ডিন্যান্সের ৩এ ধারা সরাসরি দিল্লি সরকারের হাতে থাকা ৪১ নম্বর ধারা (পরিষেবা সংক্রান্ত ক্ষমতা)-য় হস্তক্ষেপ করছে। ফলে তার সাংবিধানিক বৈধতা বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। এর পরে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতি বেঞ্চ মামলাটি পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠিয়েছিল। সেখানে এখন মামলাটি বিচারাধীন। এই পরিস্থিতিতে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপ এড়াতেই খসড়া বিলে মোদী সরকারের এই অবস্থান বদল বলে মনে করা হচ্ছে।

নয়া বিলের খসড়ায় ‘জাতীয় রাজধানী সিভিল সার্ভিস অথরিটি’র বার্ষিক প্রতিবেদন সংসদ এবং দিল্লি বিধানসভায় পেশ করা ‘বাধ্যতামূলক’ করা হয়েছে বলেও সরকারি সূত্রের খবর। পাশাপাশি জানানো হয়েছে, আমলাদের উদ্দেশে দিল্লির মন্ত্রীরা যে নির্দেশিকা পাঠাবেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর (উপরাজ্যপাল) এবং মুখ্যমন্ত্রীর আগে তা কেন্দ্রকে পাঠাতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ হাতে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার মে মাসে যে অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জারি করেছিল শীর্ষ আদালতেই তা চ্যালেঞ্জ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রধান কেজরীওয়াল। গত ৩০ জুন দিল্লি সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল। কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্সের জেরে দিল্লির ‘ইলেক্ট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন’-এর চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে বলে সরকার পক্ষের তরফে অভিযোগ করায় ১৭ জুলাই ‘আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্রের সন্ধান করার’ কথা বলেছিল প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। এর পর গত ২০ জুন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ কেন্দ্রের ওই বির্তকিত অর্ডিন্যান্স সংক্রান্ত মামলাটি পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠিয়েছিল। সেই সাংবিধানিক বেঞ্চেই বিষয়টি এখন বিচারাধীন। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, অর্ডিন্যান্সের সাংবিধানিক বৈধতা খতিয়ে দেখা হবে। সেই সঙ্গে যাচাই করা হবে, এ বিষয়ে সংসদের অধিকারের সীমাও।

এরই মধ্যে গত মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ হাতে রাখার জন্য কেন্দ্র যে অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল, সংসদের বাদল অধিবেশনে সে সংক্রান্ত বিল পাশ করিয়ে পুরদস্তুর আইনের চেহারা দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, গত ১১ মে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছিল, আমলাদের রদবদল থেকে যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে দিল্লির নির্বাচিত সরকারের।

এর পর হঠাৎ গত ১৯ মে গভীর রাতে অর্ডিন্যান্স এনে ১০ পাতার গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তাতে বলা হয়, ‘জাতীয় রাজধানী সিভিল সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হচ্ছে। আমলাদের নিয়োগ এবং বদলির ব্যাপারে তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। অধ্যাদেশে জানানো হয়, (দিল্লির) মুখ্যমন্ত্রী হবেন এর চেয়ারপার্সন। সদস্য হিসেবে থাকবেন মুখ্যসচিব এবং প্রিন্সিপাল স্বরাষ্ট্রসচিব। নিয়োগ এবং বদলি সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত এই কর্তৃপক্ষ ভোটাভুটির মাধ্যমে চূড়ান্ত করবেন। মতবিরোধ হলে শেষ কথা বলবেন উপরাজ্যপাল।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ হাতে রাখার জন্য মোদী সরকারের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে গত দু’মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে ‘সক্রিয়তা’ দেখিয়েছিলেন কেজরীওয়াল। রাজ্যে রাজ্যে ঘুরে কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতায় অবিজেপি দলগুলির সমর্থন চেয়েছেন তিনি। আবেদন জানিয়েছেন, ওই অর্ডিন্যান্সকে স্থায়ী রূপ দিতে মোদী সরকার সংসদে বিল আনলে বিরোধী দলগুলি যেন ঐক্যবদ্ধ ভাবে তার বিরোধিতা করে। মে মাসেই নবান্নে এসে মমতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন কেজরী। তৃণমূল-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের তরফে সহায়তার আশ্বাস মিললেও প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেস অর্ডিন্যান্স বিতর্কে কেজরীর পাশে দাঁড়ায়নি।

শেষ পর্যন্ত বেঙ্গালুরুতে বিরোধী নেতৃত্বের বৈঠকের আগে গত ১৬ জুলাই কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেয়, বিতর্কিত ওই অর্ডিন্যান্সকে ‘স্থায়ী’ আইনে পরিণত করতে মোদী সরকার সংসদে বিল আনলে তার বিরোধিতা করা হবে। এর পরেই কেজরী ১৭-১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুর বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। রাজ্যসভায় কেন্দ্রের বিলের বিরোধিতার জন্য ইতিমধ্যেই কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল তাদের সাংসদদের উদ্দেশে হুইপ জারি করেছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE