রুশ বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ইগর মোর্গুলভের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। — নিজস্ব চিত্র।
পথে পশ্চিমী ঝঞ্জা ছিল! কিন্তু মস্কোর ওপর পশ্চিমের রোষে দিগভ্রান্ত হল না নয়াদিল্লির কূটনীতি! আজ সন্ধ্যায় রাশিয়ায় পৌঁছলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির জয়ের সত্তর বছর পূর্ণ হবে আগামী পরশু। মস্কোর রেড স্কোয়ারে সে দিন ‘বিজয় দিবস’ উদ্যাপন করবে ক্রেমলিন। প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিতে তাঁদের আধুনিক অস্ত্রসম্ভার তুলে ধরে পশ্চিমকে পেশি দেখাবে পুতিন প্রশাসন। সেই উৎসবে সামিল হবেন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি। নাৎসিবাহিনীকে পরাস্ত করার সাফল্যের অংশীদার হয়ে এই প্রথম রেড আর্মির সঙ্গে মস্কোর রাজপথে পা মেলাবে ভারতীয় সেনা বাহিনীর গ্রেনেডিয়ার রেজিমেন্টের সত্তর জন জওয়ানও।
তার দু’দিন আগে থেকেই মস্কোর আকাশ আলো ঝলমলে। কুচকাওয়াজের মহড়া চলেছে আজও। পথে নেমে পড়েছে রাশিয়ার নিজের তৈরি আধুনিকতম ট্যাঙ্ক, মিসাইল, অস্ত্রবাহী যান। চলছে বোমারু বিমানের মহড়া! মস্কোভা নদীর বুকে ভাসছে আলোর ভেলা। আর তা দেখতে পথে উপচে পড়েছে মানুষ!
এই বিজয়োৎসবের শরিক হতেই ভারতীয় রাষ্ট্রপতির এতটা পথ উজিয়ে আসা? আর স্রেফ সে জন্যই পশ্চিমী ঝঞ্ঝাকে উপেক্ষা করা!
জবাবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সফররত সাউথ ব্লকের কূটনীতিকরা অবশ্য বলছেন, পাতা উল্টে দেখুন। মলাটের ভিতরে আছে আরও কত কূটনীতির আঁকিবুকি।
প্রতি বছর ৯ মে বিজয় দিবস পালন করে রাশিয়া। এ বছরের মাহাত্ম্য অন্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয়ের সত্তর বছর পূর্তিতে সত্তরটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বিবাদের জেরে ওয়াশিংটন সপাটে জানিয়ে দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপস্থিতির প্রশ্নই নেই। ইউক্রেন-বিবাদের জেরে কার্যত গোটা পশ্চিম অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাশিয়ার ওপর। আমেরিকাকে অনুসরণ করে ফ্রান্স, জার্মানির মতো ইউরোপের শক্তিধর দেশগুলিও জানিয়ে দিয়েছে, ৯ মে-র উদ্যাপনে তারা সামিল হবে না। মস্কোর মিডিয়া যাকে বলছে ‘পশ্চিমী ঝঞ্ঝা।’ পুতিনের এমন দুঃসময়ে নয়াদিল্লি সাবেক এবং চিরন্তন বন্ধুর পাশে দাঁড়ানো কৌশলগত নয় কি! মস্কোয় নিযুক্ত প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত কানওয়াল সিব্বলের কথায়, ‘‘এ হল ভারতের কৌশলগত স্বশাসনের প্রকাশ। বহুমেরু বিশ্বে সাবালক ও স্বাধীন কূটনৈতিক অস্তিত্ব বজায় রাখা।’’ তাঁর মতে, ‘‘দিল্লি এ ভাবে ইউরোপ ও ওয়াশিংটনের বন্ধুদেরও বার্তা দিল যে, তাদের সঙ্গে বহুক্ষেত্রে মতের মিল থাকলেও, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় থাকবে।’’
রাশিয়ার সঙ্গে নয়াদিল্লির কৌশলগত সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সেই সম্পর্ককেই আরও পরিণত করে বাণিজ্য সম্পর্কের প্রসার ঘটাতে গত ডিসেম্বরে ভারত সফরে গিয়েছিলেন পুতিন। সাউথ ব্লক জানাচ্ছে, সেই ভরবেগ অব্যাহত রাখতে পুতিনের সঙ্কট-মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই ৯ মে-র বিজয় দিবসে সামিল হতে চেয়েছিলেন। কারণটা সহজ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ‘‘ভারতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের সত্তর শতাংশ কেনা হয় রাশিয়া থেকে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।’’ কিন্তু এ বছর দু’বার মোদীর রাশিয়া সফর নির্ধারিত রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy