সর্বদল বৈঠকের ফাঁকে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস অঠওয়ালে। ছবি পিটিআই।
বিরোধীদের দাবি না মানায় কার্যত জলে ভেসে গিয়েছিল সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন। মাঝখানে বিরতির পরে সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে শীতকালীন অধিবেশন। রবিবার সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর ডাকা সর্বদল বৈঠকেও উঠে এল কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, এসপি, ডিএমকে-সহ বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত দাবিগুচ্ছ। কিন্তু সংসদীয় রেওয়াজ অনুযায়ী সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, সকাল দেখেই বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে! গত অধিবেশনে ফোনে আড়ি পাতা সংক্রান্ত পেগাসাস কাণ্ড নিয়ে সংসদ উত্তাল হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন বিরোধীরা। বিরোধীদের বক্তব্য, কিন্তু উদাসীনতা ছাড়া জবাবে কিছুই পাওয়া যায়নি।
এ বারেও বিরোধীদের দাবি তালিকা দীর্ঘ। সূত্রের বক্তব্য, বৈঠকে অন্তত এক ডজন বিষয় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে উত্থাপন করেছেন বিরোধীরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংসদে আলোচনার দাবি জানানো হয়েছে। অন্য দিকে সরকার পক্ষ জানিয়েছে, এ বার ২৬টি বিল পাশ করানোর লক্ষ্য রয়েছে তাদের। সোমবার লোকসভা এবং রাজ্যসভার বিষয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সংসদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি স্থির হবে।
সরকার পক্ষে এ দিনের বৈঠকে প্রহ্লাদ জোশী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সূত্রের খবর, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে তাঁদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতির কারণ জানতে চান। মোদী সুস্থ আছেন কি না, কোনও বিদেশি নেতার সঙ্গে বৈঠকের কারণে তিনি অনুপস্থিত থাকলেন কি না তা জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু সে ভাবে স্পষ্ট কারণ দর্শায়নি কেন্দ্র।
গত বারের মতো এ বারেও পেগাসাস কাণ্ডের জবাবদিহি চেয়ে সংসদে আলোচনার দাবি তুলেছে কংগ্রেস-সহ ছ’টি বিরোধী দল। সোমবার কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল পেশ হওয়ার কথা। কৃষকেরা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের যে আইনি গ্যারান্টি চাইছে তা নিয়ে সরব হন কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গে, আপের সঞ্জয় সিংহ, তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েনরা। কংগ্রেসের দাবি, কোভিডে মৃত পাঁচ লক্ষ ব্যক্তির প্রত্যেককে ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। পাশাপাশি কৃষক আন্দোলনে মৃত ৭০০ জনকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তুলেছে কংগ্রেস। বৈঠকের মাঝেই বেরিয়ে আসেন আপ সাংসদ। বাইরে সাংবাদিকদের জানান, তিনি ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করা নিয়ে বলতে উঠেছিলেন। কিন্তু তাঁকে বলতে দেওয়া হচ্ছে না।
বৈঠকের পরে সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক বলেন, “কৃষি আইনে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি গ্যারান্টি রাখার পাশাপাশি মহিলা সংরক্ষণ বিল এই অধিবেশনে নিয়ে আসার দাবি তুলেছি আমরা। সমাজবাদী পার্টি এই বিষয়ে আমাদের পুরোদস্তুর সমর্থন করেছে। পাশাপাশি বিএসএফের টহলদারির এলাকা বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে দুর্বল করার অভিযোগও আজ তোলা হয়েছে। এই নিয়ে সংসদে আমরা সরব হব।’’ ডেরেক বলেন, ‘‘বেকারত্ব, পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, কোভিড পরিস্থিতি সম্পর্কে সংসদে দাঁড়িয়ে দেশকে অবহিত করা, সংসদীয় কমিটিতে না পাঠিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের গায়ের জোরে বিল পাশ করানোর মতো বিষয়গুলিও এ বারের অধিবেশনে তোলার জন্য কেন্দ্রকে বলা হয়েছে।” কাশ্মীরের সাংসদ ফারুক আবদুল্লা দাবি জানিয়েছেন, কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা করতে হবে এ বারের অধিবেশনে।
কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল কি আলোচনা না করেই পাশ করিয়ে দিতে পারে কেন্দ্র? সেই আশঙ্কাই করছেন বিরোধীরা। তাঁদের যুক্তি, এই নিয়ে যে হেতু মোদী সরকারের মুখ পুড়েছে তাই তারা বিরোধীদের হাতে সুযোগ তুলে দিতে চায় না সরকারকে আরও অস্বস্তিতে ফেলার। এই বিষয়ে সোমবার সকালে বিষয় উপদেষ্টা কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, “সংসদে তোলার মতো বহু বিষয় রয়েছে। অথচ সংসদ মাত্র ১৯ দিন চলবে। এতগুলি বিষয় কী করে উঠবে সেটা বড় সমস্যা। আজ বৈঠকে আমরা বলেছি, গোটা ভারতের কাছেই প্রতি দিন বাজারে যাওয়াটা দুঃস্বপ্নের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বাজারে যেভাবে দাম বাড়ছে হু হু করে তা নিয়ে সরকার কী করছে জানাক। বেকারত্ব বাড়ছে কেন তা নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে হবে। চিন আজ ভারতে ঢুকে এসেছে কিন্তু আমরা কিছু জানতে পারছি না। সরকার কেন কিছু বলছে না?”
সর্বদল বৈঠকের পাশাপাশি আজ এনডিএর সমন্বয় কমিটির বৈঠক হয়েছে। বিজেপির সংসদীয় দলও নিজেদের মধ্যে বসে সংসদীয় কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছে।
অন্য দিকে, শীতকালীন অধিবেশনের আগে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এম বেঙ্কাইয়া নায়ডুর ডাকা বৈঠকে রাজ্যসভার কয়েক জন সদস্য সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁরা জানান, সংসদ ও অন্য আইনসভার কাজকর্ম ও আইন তৈরি নিয়ে মন্তব্য করেছে কোর্ট। কিন্তু এ নিয়ে আইনসভার অধ্যক্ষেরাই পদক্ষেপ করতে পারেন। বেঙ্কাইয়া বলেন, ‘‘এই ধরনের মন্তব্যের মোকাবিলা করতে গেলে আইনসভা সুষ্ঠু ভাবে চালানো প্রয়োজন।’’ প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘আইনসভা তাদের তৈরি আইনের কী প্রভাব পড়বে তা বিচার করে না। ফলে অনেক সময়ে বড় সমস্যা তৈরি হয়। বিচার বিভাগের উপরে মামলার চাপ বাড়ে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy