কেকে মেনন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র
টানা ২৬ বছর ধরে ছায়াছবির জগতে তাঁর অবদানের জন্য ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন অভিনেতা কেকে মেনন। নেটমাধ্যমে সেই খবর জানান অভিনেতা নিজেই। সেখান থেকেই পুরস্কার নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। নাম এক হলেও দেখা যাচ্ছে, এই পুরস্কার আসলে ভারতীয় সিনেমার সেরা সম্মান ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ নয়। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফেও আদৌ এই পুরস্কার দেওয়া হয়নি।
এখানেই বিতর্কের শেষ নয়। বরং তা নতুন মোড় নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সচিবালয় থেকে পাঠানো একটি চিঠিতে। মোদী স্বয়ং এই পুরস্কার পাওয়ার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অভিনেতা কেকে-কে। সেখান থেকে উঠে এসেছে আরও প্রশ্ন। কারণ, ‘দাদাসাহেব ফালকে অ্যাওয়ার্ড’ আর ‘দাদাসাহেব ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ তো এক নয়। সেটা খতিয়ে না দেখেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠানো হল কেকে-কে? নাকি সব জেনেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে কেকে মেননকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো হয়েছে? বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের চোখ এড়িয়েই বা গেল কী করে? খোদ প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে এমন শুভেচ্ছাবার্তা পাঠানোর আগে কি কেউ বিষয়টি খতিয়ে দেখেননি? নাকি দাদাসাহেব ফালকের নামাঙ্কিত পুরস্কার মাত্রেই প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা পাওয়ার যোগ্য?
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কারের তালিকায় ভারতীয় ছবির বাঘা বাঘা ব্যক্তিত্বের নাম রয়েছে। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাজ কপূর, সত্যজিৎ রায়, দিলীপ কুমার, মনোজ কুমার, দেব আনন্দ, মৃণাল সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অমিতাভ বচ্চন।
ফলে কেকে-র পুরস্কারপ্রাপ্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে টলিপাড়াতেও। নাট্যকার, পরিচালক, অভিনেতা সুমন মুখোপাধ্যায়ের যেমন বলছেন, "কেকে মেনন যদি দাবি করেন, তিনি ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পেয়েছেন, তা হলে সেটা হাস্যকর। তবে তার চেয়েও আশ্চর্যের বিষয় প্রধানমন্ত্রীর তাঁকে পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তা! কী আর বলব? আমাদের দেশে এখন এমন অনেক কিছুই হয়।"
পরিচালক, অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রের কথায়, ‘‘এক জনের নামে এতগুলো পুরস্কার বা সম্মানই আসলে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। দাদাসাহেব ফালকে সম্মান সিনে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সম্মান। সেই নামের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালকে জুড়ে কী দাঁড়াল বুঝে উঠতে পারছি না।’’ পরিচালক অনীক দত্ত অবশ্য এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। কেকে মেননকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছেন তিনি। আবার অভিনেত্রী ঊষসী চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘কেকে আমার প্রচণ্ড পছন্দের অভিনেতা। ওঁর সব কাজ ভীষণ পছন্দ করি। তাই কী সম্মান পেলেন, তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। সম্মান পেয়েছেন, এতেই আমি খুব খুশি।’’
তবে ‘দাদাসাহেব ফালকে’ সম্মানের নাম নিয়ে এই ধোঁয়াশা নতুন নয়। ২০১৮-য় মুম্বই সংবাদমাধ্যম মারফত জানা গিয়েছিল, দাদাসাহেব ফালকের নামে রয়েছে আরও দু’টি পুরস্কার। ‘দাদাসাহেব ফালকে এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘দাদাসাহেব ফালকে ফিল্ম ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড’। অক্ষয় কুমার, শাহিদ কপূর, সোনম কপূর, ভূমি পেডনেকরের মতো তারকারা সেই সম্মানে সম্মানিত। ‘সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন’ (সিবিএফসি)-এর সদস্য বাণী ত্রিপাঠী টিক্কু ২০১৮ সালে মুম্বইয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ভারতীয় ছবির জনককে সম্মান জানাতে দীর্ঘ সময় ধরে ভারতীয় সম্প্রচার মন্ত্রক এবং জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসব সংগঠন ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ দিয়ে আসছে। যা পেয়েছেন রাজ কপূর, মনোজ কুমার, দিলীপ কুমার, সত্যজিৎ রায়-সহ বহু বিখ্যাত মানুষ। এটিই একমাত্র ভারতীয় সিনেমার সর্বোচ্চ সম্মান। তাঁর আরও বক্তব্য ছিল, একই নামে একাধিক পুরস্কার চালু হওয়ার ফলেই জন্ম নিয়েছে ‘নাম বিতর্ক’। একই সঙ্গে টিক্কুর আশঙ্কা ছিল, ‘‘আগামিদিনে হয়তো এ ভাবেই একাধিক ‘পদ্ম’ বা ‘ভারতরত্ন’ সম্মান নতুন বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে!’’ করলও। নতুন সংযোজন ২০২১-র ‘দাদাসাহেব ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অ্যাওয়ার্ড’। যাতে সিলমোহর লেগে গেল প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy