প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।
পেগাসাস কাণ্ডের জেরে কার্যত জলে গিয়েছে বাদল অধিবেশনের প্রথম সাত দিন। ওই অচলাবস্থার জন্য আজ মূলত কংগ্রেসকেই নিশানা করে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে সরব হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দলের সাংসদদের তাঁর নির্দেশ, ‘‘কংগ্রেস যে সংসদ চলতে দিচ্ছে না, সেই বিষয়টি জনতার সামনে তুলে ধরুন। কংগ্রেসের মুখোশ খুলে দিন।’’ তবে একই সঙ্গে বিরোধী সাংসদদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলার জন্য দলীয় সাংসদদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গত কয়েক দিনের মতো আজও পেগাসাস কাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের দাবিতে সরব ছিলেন বিরোধীরা। সেই কারণে দফায় দফায় মুলতুবি করে দিতে হয় সংসদের দুই কক্ষের অধিবেশন।
গত সোমবার সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হয়েছিল। প্রথম দিনে মূল্যবৃদ্ধি ও তার পর থেকে পেগাসাস রিপোর্টের জেরে কার্যত টানা মুলতুবি হয়ে গিয়েছে সংসদ। রাজ্যসভায় বিরোধীরা এতটাই আক্রমণাত্মক ছিলেন যে, তার জেরে নতুন মন্ত্রীদের পরিচয়-পর্ব ভাল ভাবে শেষ করতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। বিরোধী সাংসদদের ওই উগ্র মনোভাবের সমালোচনা করে গত সপ্তাহে নিজের ক্ষোভ জানিয়েছিলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু। আজ সংসদীয় দলের বৈঠকে বিরোধী দলগুলির অধিবেশন বানচাল করে দেওয়ার ওই ‘কৌশলের’ সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। দলের সাংসদদের তিনি বলেন, বাদল অধিবেশন অচল করে দেওয়ার মতো কোনও ইসু নেই বিরোধীদের হাতে। তা সত্ত্বেও বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস বারবার সংসদ চলতে বাধা দিচ্ছে। মোদীর অভিযোগ, গত সপ্তাহে কোভিড নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে কংগ্রেস নিজে তো অনুপস্থিত ছিলই, অন্য দলগুলিও যাতে অনুপস্থিত থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য তৎপরও ছিল। মোদীর কথায়, কংগ্রেস না নিজেদের কাজ করছে, না সংসদ চলতে দিচ্ছে। এর পরেই দেশের সাধারণ মানুষ, সংবাদমাধ্যমের কাছে কংগ্রেসের ‘আসল চরিত্র’ তুলে ধরার জন্য দলীয় সাংসদের নির্দেশ দেন তিনি। সূত্রের খবর, মোদী সাংসদদের বলেন, সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে, সরকার সংসদে আলোচনার পক্ষে, কিন্তু কংগ্রেস আলোচনা হতে দিতে রাজি নয়।
তবে বিরোধী দলের সাংসদদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলার উপরেও জোর দিয়েছেন মোদী। বিজেপি শিবিরের ব্যাখ্যা, রাজনৈতিক শত্রুতা যেন ব্যক্তিগত শত্রুতায় পরিণত না-হয়, সেই বিষয়টিতেই জোর দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, ‘‘দলে থেকেও যে বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে সখ্য বজায় রাখা যায়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যসভার সদ্য-প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদের সম্পর্ক।’’ এ দিকে সংসদে বিরোধীদের চলতি সপ্তাহের রণকৌশল স্থির করতে আজ বৈঠকে বসেছিলেন কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গে, আনন্দ শর্মা, তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুখেন্দুশেখর রায়-সহ সমমনস্ক দলগুলির নেতারা। বৈঠকে বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, সংসদ চালানোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির দায় সরকারের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেই দায় বিরোধীদের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়ার কৌশল নিয়েছেন, যা কাম্য নয়।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে আগামী এক বছর সাংসদদের কী করতে হবে, আজকের বৈঠকে সেই দিশা-নির্দেশও দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকের শেষে সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী চান, স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি নিছক সরকারি অনুষ্ঠানে যেন আটকে না-থাকে। দেশের মানুষ যেন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। মোদীর নির্দেশ হল, প্রত্যেক সাংসদকে নিজের এলাকার প্রতিটি বিধানসভায় একটি করে দু’সদস্যের দল গঠন করতে হবে। সেই দল বিধানসভা এলাকার অন্তত ৭৫টি গ্রামে সফর করে জনতার কাছে জানতে চাইবে, আরও পঁচিশ বছর পরে অর্থাৎ স্বাধীনতার একশো বছরে তাঁরা ভারতকে কী ভাবে দেখতে চান। মোদীর এই সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘গোড়া থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামী আইকনের অভাবে ভুগছে বিজেপি। সঙ্ঘ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের হয়ে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। সেই দাগ মুছতেই মোদীর ওই চেষ্টা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy