Muthappa Rai Turned to a Life of Crime from a Bank Officer dgtl
muthappa rai
ছিলেন ব্যাঙ্ককর্মী, দাবি করেন ‘র’-কে সাহায্যের, পাঁচ বুলেটেও বেঁচে যান বেঙ্গালুরুর শেষ মাফিয়া
নিছক ব্যাঙ্ককর্মী হয়ে থাকার ইচ্ছে ছিল না মুথাপ্পার। শুরু করলেন ব্যবসা। বার কাম রেস্তরাঁর। কিন্তু ব্যবসার উপর নজর পড়ল অন্ধকার দুনিয়ার। তাদের কালো থাবা থেকে ব্যবসাকে বাঁচাতে গিয়ে ধীরে ধীরে তিনি নিজেই হয়ে উঠলেন অন্ধকার দুনিয়ার অংশ। সেটা আশির দশকের শেষ দিক।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২০ ১২:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
পরিশীলিত, মার্জিত সেই যুবক ছিলেন আত্মমুখী। বাণিজ্যে স্নাতক হওয়ার পরে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন বিজয়া ব্যাঙ্কের অফিসার হয়ে। জীবনের ছয় দশক পেরিয়ে যখন পথ চলা শেষ হল, তখন মুথাপ্পা রাইয়ের পরিচয় বেঙ্গালুরুর আন্ডারওয়ার্ল্ডের একচ্ছত্র অধিপতি।
০২২১
কর্নাটকের পুট্টুরে বান্ট সম্প্রদায়ের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৫২ সালের ১ মে তাঁর জন্ম। আদতে দক্ষিণ ভারতীয় উপকূল অংশে বসবাসকারী এই জনগোষ্ঠী খুবই সমৃদ্ধ। প্রাচীন দ্রাবিড়ীয় ‘তুলু’ ভাষায় কথা বলা এই জনজাতির বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব পরবর্তীকালে সফল হয়েছেন নিজের পেশায়।
০৩২১
ঐশ্বর্য রাই, শিল্পা শেট্টি, সুনীল শেট্টির মতো তারকা এই সম্প্রদায়েরই মানুষ। তাই বলা হয় মিস ওয়ার্ল্ড থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ড, সর্বত্র শাসন করতে পারে তুলু ভাষায় কথা বলা বান্ট জনগোষ্ঠী।
০৪২১
নিছক ব্যাঙ্ককর্মী হয়ে থাকার ইচ্ছে ছিল না মুথাপ্পার। শুরু করলেন ব্যবসা। বার কাম রেস্তরাঁর। কিন্তু ব্যবসার উপর নজর পড়ল অন্ধকার দুনিয়ার। তাদের কালো থাবা থেকে ব্যবসাকে বাঁচাতে গিয়ে ধীরে ধীরে তিনি নিজেই হয়ে উঠলেন অন্ধকার দুনিয়ার অংশ। সেটা আশির দশকের শেষ দিক।
০৫২১
কয়েক বছর পরে মুথাপ্পার সঙ্গে আলাপ হল শরদ শেট্টির। দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ শরদও ছিলেন বান্ট সম্প্রদায়ের। তিনি সে সময় ডি কোম্পানির কারবার সামলাতেন দুবাইয়ে। অভিযোগ, ক্রিকেটে বেটিং ও ম্যাচ ফিক্সিংয়ে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ ছিল।
০৬২১
তার আগে আশির দশকের শেষ দিকে বেঙ্গালুরুর তৎকালীন ডন এম পি জয়রাজকে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করেন মুথাপ্পা। এর পরে ডনের আসন পেতে তাঁর দেরি হয়নি।
০৭২১
এই ঘটনার পরে ভারত ছেড়ে মুথাপ্পা দুবাই পাড়ি দেন। সেখানে শরদের আশ্রয়ে থাকতেন মুথাপ্পা। ক্রমে অন্ধকার দুনিয়ার সঙ্গে আরও গভীর হয় তাঁর পরিচিতি। কিন্তু বলা হয়, যে শরদ এক দিন আশ্রয় দিয়েছিলেন, তাঁকেই তাঁর দুঃসময়ে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন মুথাপ্পা।
০৮২১
দুবাই ছেড়ে মুথাপ্পার পরবর্তী গন্তব্য ছিল উপসাগরীয় অঞ্চল। বহু মামলায় অভিযুক্ত মুথাপ্পাকে সংযুক্ত আরবআমিরশাহি থেকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয় এই শতকের গোড়ায়। কয়েক মাস কারাবন্দিও থাকেন। কিন্তু পরে প্রত্যেকটি মামলা থেকে তিনি মুক্তি পান।
০৯২১
এর পর বেঙ্গালুরুর উপকণ্ঠে নিজের প্রাসাদের মতো বাড়ি থেকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন আন্ডারওয়ার্ল্ডকে। গত দেড় দশকে আবার তাঁকে দেখা গিয়েছিল অ্যাক্টিভিস্টের ভূমিকায়। শুরু করেছিলেন ‘জয় কর্নাটক’ বলে একটি সংস্থা।
১০২১
মুথাপ্পার দাবি ছিল, তিনি আফগানিস্তানে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-কে সাহায্য করেছিলেন। তাঁর জন্যই পরবর্তীকালে তাঁকে ‘সেফ প্যাসেজ’ দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে নিরাপদে দেশে ফিরতে পেরেছিলেন।
১১২১
তবে প্রথম থেকেই মুথাপ্পার কাজের কেন্দ্র বেঙ্গালুরু ছিল না। তিনি কাজ করতেন পুট্টুর থেকে। ১৯৯৪ সালে কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনের সময় তরুণ কংগ্রেস নেতা জয়ন্ত রাইকে গুলি করে খুন করা হয় ওই এলাকায়। তিনি ছিলেন মুথাপ্পার খুব কাছের সহযোগী।
১২২১
এর পরই মুথাপ্পা তাঁর কর্মকাণ্ড সরিয়ে আনেন বেঙ্গালুরুতে। এই শহরেই নব্বইয়ের দশকে আর এক মাফিয়া শ্রীধরের সঙ্গে মুথাপ্পার দ্বন্দ্ব ছিল সে সময়কার শিরোনাম। সেই সময়ে শ্রীধরকে লক্ষ্য করে আক্রমণও হয়েছিল। তাতে প্রাণ হারান তাঁর গাড়ির চালক।
১৩২১
শ্রীধর এখন সরে এসেছেন অন্ধকার দুনিয়া থেকে। তিনি এখন একটি ট্যাবলেয়েডের মালিক। এ ছাড়াও জড়িত ছবি প্রযোজনায়।
১৪২১
মুথাপ্পার জীবন নিতেও একাধিক বার আক্রমণ হয়েছে। এক বার রুটিন হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় আদালত চত্বরেই তাঁর উপর প্রকাশ্যে আক্রমণ হয়। পাঁচটি বুলেটবিদ্ধ হয়েও তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
১৫২১
এর পর তাঁর ব্যবসা আরও ফুলে ফেঁপে ওঠে। তবে কর্নাটকের গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ আধিকারিকদের মত, মুথাপ্পা ছিলেন মূলত জমি-মাফিয়া। মার্জিত সমাজকর্মীর মুখোশের আড়ালে তিনি নিজের কারবার চালিয়ে যেতেন।
১৬২১
তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকারীদের বক্তব্য, কর্নাটকের বিভিন্ন অংশে কয়েকশো কোটি টাকার ভূসম্পত্তির মালিক ছিলেন তিনি। যদিও মুথাপ্পার নিজের দাবি ছিল, তিনি এক জন দেশপ্রেমিক। কারণ হিসেবে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি দেশকে সাহায্য করেছেন।
১৭২১
মোট আটটি মামলায় কর্নাটক পুলিশ অভিযুক্ত করে মুথাপ্পাকে। ২০০১ সালে সুব্বরাজু নামে এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করানোর দায়েও অভিযুক্ত হন মুথাপ্পা।
১৮২১
২০০২ সালে তাঁকে জেরা করে সিবিআই, আইবি, র এবং কর্নাটক পুলিশ। তোলাবাজি, জমি দখল, শিল্পপতিদের কাছ থেকে ‘প্রোটেকশন মানি’ আদায়, প্রোমোটারদের সাহায্য করা-সহ একাধিক অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
১৯২১
অভিযোগ, এ সবই তিনি করতে পারতেন দাউদ ইব্রাহিমের প্রচ্ছন্ন সংযোগে। কিন্তু কোনও মামলাতেই তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ যোগাড় করা যায়নি। উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তিনি ছাড়া পেয়ে যান।
২০২১
তবে হাইটেক সিটি বেঙ্গালুরুতে ইদানীং সংগঠিত মাফিয়ারাজের সাম্রাজ্য অস্তমিত। মুথাপ্পা-ই ছিলেন এই সাম্রাজ্যের শেষ প্রতিনিধি। ব্রেন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১৫ মে প্রয়াত হন এই ডন।
২১২১
মুথাপ্পার প্রথম স্ত্রী রেখা প্রয়াত হন ২০১৩ সালে। মুথাপ্পা-রেখার দুই ছেলে। সন্তানদের পাশাপাশি মুথাপ্পা রেখে গেলেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী অনুরাধাকে। তাঁকে মুথাপ্পা বিয়ে করেন ২০১৬ সালে।