Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বস্তিতে রামধনু, থানার দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে গব্বরের

মোগ্যাম্বো ‘নাখুশ’। কাঁচুমাচু গব্বরও। থানার দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে বলিউডের প্রায় সবক’টা ভিলেনের।

রঙিন: এখন এমনই সাজ মুম্বইয়ের চারটি বস্তির। নিজস্ব চিত্র

রঙিন: এখন এমনই সাজ মুম্বইয়ের চারটি বস্তির। নিজস্ব চিত্র

স্নেহাংশু অধিকারী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:০৩
Share: Save:

মোগ্যাম্বো ‘নাখুশ’। কাঁচুমাচু গব্বরও। থানার দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে বলিউডের প্রায় সবক’টা ভিলেনের।

ফিল্মি প্রদর্শনী নয়। মাস আটেক হল, জনা দশেক ছেলেমেয়ে এসে এমনই হাল করে গিয়েছে মুম্বইয়ের সাকীনাকা থানার দেওয়ালের। একটি অলাভজনক উদ্যোগ। এক কনস্টেবল বলছিলেন, ‘‘আজকাল লোকে থানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফেলছেন। চোর-ছ্যাচোঁড়দের নিয়ে কারবার আমাদের। কিছুটা তো স্বাদবদল হল।’’

রং-তুলির সেপাইরা কিন্তু একেই বলছেন স্বপ্নপূরণ। স্বপ্নটা দেখেছিলেন দেদীপ্যা রেড্ডি। বছর বত্রিশের এই তরুণী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রিয়েটিভ থিঙ্কিং-এর কোর্স করে এখন ডিজিটাল মিডিয়া সংস্থা চালান। আর সুযোগ পেলেই দল বেঁধে চলে যান আমচি মুম্বইয়ের অলি-গলিতে।

দেদীপ্যা জানালেন, থানার কাজটা অনুরোধে। কিন্তু ঘাটকোপারে অসল্ফা বস্তিতে কিছু করার তাগিদটা এসেছিল ভিতর থেকে। টিলার উপরে বিবর্ণ একটা বস্তি। রং বলতে ছাদে নীল ত্রিপল। বছর চার আগে এসি মেট্রোয় যেতে যেতে নজরে এসেছিল। দেখে কেমন মন খারাপ হয়ে যায়। ‘‘হঠাৎ এক দিন মাথায় এল, আরে এ তো একটা আনকোরা ক্যানভাস! একটু রং দিলে কেমন হয়! ’’ বলেন দেদীপ্যা। ওঁদের ‘চল রং দে’ অভিযানের সেই শুরু। সময়টা ২০১৭-র ডিসেম্বর।

এখন লাল-নীল-হলুদে ঝলমলে সেই বসতির সঙ্গে তুলনা হচ্ছে ইটালির পজ়িটানো শহরের।

পথটা কিন্তু সহজ ছিল না। ‘বস্তির আবার গ্ল্যামার!’— এমন বাঁকা কথা শুনতে হয়েছে বিস্তর। তত দিনে অবশ্য দেদীপ্যার স্বপ্নটাকে বিশ্বাস করতে শুরু করে দিয়েছেন টেরেন্স ফেরেরা, সাবা হিমানি, সুমিত্র সরকারেরা। কলকাতার ছেলে সুমিত্র এখন পাক্কা মুম্বইকার। শহরের কথা উঠলে বলেন, ‘মাঝি (আমার) মুম্বই।’ বহু সংস্থা ও সংগঠনের দোরে ঘুরে, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে জোগাড় হয় ৪২০ লিটার রং। মালমশলা আর শ’পাঁচেক রং-পাগলকে নিয়ে সটান ওই বস্তিতে হাজির হন সুমিত্র-দেদীপ্যারা। দু’সপ্তাহে মোট পাঁচ দিন কাজ হয় অসল্ফায়। প্রথম দফায় ১৭৫টা দেওয়ালে পড়ে রঙের পোঁচ। পরে ১৫ জন শিল্পী আঁকেন ম্যুরাল। সুমিত্র বললেন, ‘‘বস্তির একটি ছেলে বলল, সে মহাকাশচারী হতে চায়। ওর কথা মাথায় রেখেই দোতলা স্কুলের একটা দেওয়াল জুড়ে আঁকা হল মহাকাশ অভিযান। কোথাও আবার ওঁদের রোজকার জীবন। আমরা শুধু চেয়েছিলাম, চোখ ও মনের বিষণ্ণতা আর একঘেয়েমিটা মুছে যাক।’’

প্রথমে অনেকেই রাজি হননি। প্রশ্ন উঠেছিল, ‘নিশ্চয়ই ধান্দা আছে। রাজনীতি নেই তো!’ কিংবা, ‘আজ দেগে দিচ্ছে, কাল বলবে উঠে যাও।’ কেউ বলেছিলেন, ‘সবুজ আমাদের ধর্মে অশুভ। লাল বা গেরুয়া করো আমার দেওয়াল। এসেছে ‘ভাইদের’ হুমকিও। সুমিত্র জানালেন, আগাগোড়া পাশে থেকেছে পুলিশ, পুরসভা ও মুম্বই মেট্রো। খাবার ও ভরসা জুগিয়েছেন স্থানীয়েরা।

গত মে মাসে ফের মাঠে নামেন সুমিত্ররা। ‘মিশন খার’। শহরতলির তিনটে বস্তি রাঙিয়ে দিতে এগিয়ে আসেন হাজার তিনেক স্বেচ্ছাসেবী এবং ৫২ জন শিল্পী। ১০ দিনে সেজে ওঠে ৪০০টা বাড়ি। ৪৪টি দেওয়ালে বসে মনকাড়া ম্যুরাল। এখন সেপ্টেম্বর। এত দিনে নিশ্চয়ই সে সব দেওয়াল গুটখা আর পানের পিকে ভর্তি? সুমিত্র বললেন, ‘‘আমরাও সেই ভয়টা পেয়েছিলাম। কিন্তু সে দিন গিয়ে দেখি বস্তির বাচ্চাগুলোই দেওয়াল পাহারা দিচ্ছে।’’

দেদীপ্যা জানালেন, চেন্নাই, উদয়পুর এবং দিল্লির থেকে ডাক এসেছে। ‘চল রং দে’-র ব্যাপারে জানতে চেয়ে মেল এসেছে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেও। আর সুমিত্রর কথায়, ‘‘আমাদের দেখাদেখি পাকিস্তানেও তো ‘রং দে কোহাট’ বলে একটা কাজ হয়েছে সম্প্রতি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

painting Mumbai Mural
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy