সাংসদ শান্তনু সেন। ফাইল চিত্র।
করোনা নিয়ে আজ রাজ্যসভায় আলোচনার মঞ্চকে ব্যবহার করে মোদী সরকারের গত দেড় বছরের কোভিড নীতিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালে তৃণমূল। পশ্চিমবঙ্গের টিকার অনটন থেকে শুরু করে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে কেন্দ্রের চূড়ান্ত ব্যর্থতাকে সামনে নিয়ে এসে দলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের দাবি, কেন্দ্রের অসহযোগিতা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোভিড রুখতে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উচিত বাংলায় এসে তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে যাওয়া।
পাশাপাশি, আজ করোনা পরিস্থিতি ও টিকাকরণ নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তৃণমূল নেতৃত্ব জানালেন, সময়ে প্রতিষেধকের জোগান পেলে রাজ্য প্রশাসন করোনার তৃতীয় ঢেউ আটকে দিতে প্রস্তুত। বাদল অধিবেশন চলাকালীন সংসদের বাইরে ওই বৈঠক হওয়ায় তা বয়কট করে কংগ্রেস, অকালি, আপ, আরজেডি, সিপিএম, সিপিআইয়ের মতো দলগুলি। বিরোধী দলগুলির মধ্যে উপস্থিত ছিল তৃণমূল, শিবসেনা প্রমুখ। সূত্রের মতে, বৈঠকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে লোকসভা ও রাজ্যসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন মোদীকে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে টিকার জোগান বাড়ন্ত। চাহিদা মতো টিকা পাঠাতে ব্যর্থ কেন্দ্র। তৃণমূল নেতৃ্ত্বের পক্ষে দাবি করা হয়, কেন্দ্র যদি রাজ্যের দাবি মতো টিকা পাঠায়, তা হলে পশ্চিমবঙ্গ অন্তত রাজ্যে করোনার তৃতীয় ধাক্কাকে আটকে দেবে। বৈঠকের শেষে রাজ্যের টিকার অভাব সংক্রান্ত একটি চিঠিও প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন সুদীপবাবু।
গত কয়েক সপ্তাহে রাজ্যে যথেষ্ট টিকা পাঠানো হচ্ছে না, এই মর্মে অন্তত তিনটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রের দাবি, আসন্ন দিল্লি সফরে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা রয়েছে মমতার। সেই বৈঠক শেষ পর্যন্ত হলে তাতেও টিকার অভাব নিয়ে সরব হবেন মমতা।
আজ চিঠিতে সুদীপবাবু লিখেছেন, চলতি মাসে রাজ্যকে ৭৩ লক্ষ প্রতিষেধক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেন্দ্র। সেখানে ১৫ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ২৫ লক্ষ টিকা পৌঁছেছে রাজ্যে। আগামী দিনে টিকার জোগান সুনিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি ব্যক্তিগত স্তরে খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেন সুদীপবাবু।
এই বছরের মধ্যে কত শতাংশ ভারতবাসীর টিকাকরণ সম্ভব হবে, ডেরেক ও’ব্রায়েনের এই প্রশ্নের জবাবে রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডবিয়া স্পষ্ট সংখ্যা বলতে চাননি। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘টিকাকরণ খুব ভাল ভাবে এগোচ্ছে। যাঁরা প্রথম ডোজ় পেয়েছেন, তাঁরা স্বাভাবিক ভাবেই সময় মতো দ্বিতীয়টিও পাবেন।’’ মন্ত্রীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট উত্তর না পাওয়ার অভিযোগে আলোচনার শেষার্ধে কক্ষত্যাগ করে তৃণমূল।
আজ বিকেলে কোভিড নিয়ে রাজ্যসভায় আলোচনা শুরু হওয়ার পরে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বক্তা শান্তনু সেন প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, “এক দিনের জন্য বাংলায় আসুন না? বাংলায় সংক্রমণের হার ৩৩ শতাংশ থেকে ১.৩ শতাংশে নেমেছে এক মাসে। কী ভাবে হল, শিখতে ক্ষতি কী? এক জন ভদ্রমহিলা যদি আপনার থেকে বেশি জানেন, তাহলে তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিতে ক্ষতি কী?”
রাজ্যসভার দলনেতা কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সবাইকে থালা বাজাতে বলেছেন, মোমবাতি জ্বালাতে বলেছেন। মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু মোদী নিজের প্রতিশ্রুতি রাখেননি।’’ কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, নিজে সবাইকে মাস্ক পরতে বলে নির্বাচনের সময় বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে সেই নিয়ম মোদী নিজেই ভেঙেছেন। বক্তৃতায় এই প্রসঙ্গটি তুলতে দেখা গিয়েছে শান্তনুকেও।
রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য মন্ত্রক যেহেতু যৌথ তালিকার মধ্যে পড়ে, তাই রাজ্যেরও দায়িত্ব রয়েছে কোভিড মোকাবিলায়।’’ এর প্রতিক্রিয়ায় সরব হয় তৃণমূল। তৃণমূলের বক্তব্য, কেন্দ্র নিজে কোভিডকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের আওতায় এনে, এই বিষয়ে সমস্ত ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছে। ফলে এখন রাজ্যের উপর দায় ঠেলা নিরর্থক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy