Mohanlal Bhaskar claimed to work as a Indian spy in Pakistan dgtl
india
‘র’-এর গুপ্তচর হিসাবে ছিলেন পাকিস্তানে, তাঁর মুক্তিতে বড় ভূমিকা নেন অমিতাভ বচ্চনের বাবা
নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছিলেন বই, ‘ম্যায়ঁ পাকিস্তান মেঁ ভারত কা জাসুস’। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত এই বইটি লেখা হয়েছিল হিন্দিতে। পরে বইটি মরাঠি-সহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। জয় রতনের অনুবাদ করা ইংরেজি সংস্করণটির নাম ‘অ্যান ইন্ডিয়ান স্পাই ইন পাকিস্তান’।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২০ ১০:৪৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
“তোমার রক্তে চাষ করা শস্যদানা আমরা খেয়েছি। যা আমাদের মধ্যে শহিদ হওয়ার বীজ বপন করেছে।” ভগৎ সিংহের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলছিলেন এক যুবক। জানতেনও না তাঁর রক্ত গরম করা বক্তব্য আসলে লিখে রাখছে তাঁর ভবিতব্য। শোনা যায়, এই বক্তৃতা দিয়েই গোয়েন্দাদের চোখে পড়েছিলেন মোহনলাল ওরফে সোহনলাল ভাস্কর
০২১৬
পাকিস্তানে দীর্ঘ দিন ভারতের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন তিনি। ধরা পড়ে অকথ্য অত্যাচারও সহ্য করতে হয়েছিল। শেষ অবধি জন্মভূমিতে ফিরে আসতে পেরেছিলেন তিনি। গুপ্তচর পরিচয় নিয়ে কোনও দিন কুণ্ঠা ছিল না ভাস্করের।
০৩১৬
মহম্মদ আসলাম নাম নিয়ে তিনি ‘র’-এর গুপ্তচর হিসেবে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। এই বিএড স্নাতকের উপর দায়িত্ব ছিল, প্রতিবেশী দেশের পরমাণুবিজ্ঞান চর্চা ও পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে যাবতীয় তথ্য ভারতে পাঠানোর জন্য।
০৪১৬
সীমান্ত লাগোয়া শহর পঞ্জাবের ফিরোজপুরের বাসিন্দা ভাস্কর ১৯৬৭ সালের এপ্রিলে যোগ দেন মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সে। তাঁর পরিবারের কেউ, এমনকি, তাঁর স্ত্রীও জানতেন না তাঁর কাজের বিন্দুবিসর্গ।
০৫১৬
নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছিলেন বই, ‘ম্যায়ঁ পাকিস্তান মেঁ ভারত কা জাসুস’। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত এই বইটি লেখা হয়েছিল হিন্দিতে। পরে বইটি মরাঠি-সহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। জয় রতনের অনুবাদ করা ইংরেজি সংস্করণটির নাম ‘অ্যান ইন্ডিয়ান স্পাই ইন পাকিস্তান’।
০৬১৬
মোট ৪১টি অনুচ্ছেদের এই বইয়ে পাকিস্তানে তাঁর চরবৃত্তির বিশদ বর্ণনা আছে। গবাদি পশুর ব্যবসায়ী পরিচয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছিলেন বিএড স্নাতক ভাস্কর, ওরফে মহম্মদ আসলাম। এই পরিচয়েই পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে ঘুরেছিলেন তিনি। কড়া নিরাপত্তার বলয়ে ঘেরা ডিফেন্স এলাকাও ছিল তাঁর গন্তব্য।
০৭১৬
কয়েক বছর কাজ চলার পরেই ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে গেলেন তিনি এবং তাঁর গাইড বাবা সামুন্দ সিংহ ওরফে ইমামুদ্দিন। এই প্রসঙ্গে তাঁর অভিযোগের আঙুল ছিল অমৃক সিংহ নামের এক চরের বিরুদ্ধে।
০৮১৬
ভাস্করের অভিযোগ, এই অমৃক ছিলেন ডাবল এজেন্ট। অর্থাৎ ভারত ও পাকিস্তান, দুই দেশের হয়ে চরবৃত্তি করতেন। ধরা পড়ার পরে যে নৃশংস অত্যাচার পর্ব চলেছিল, তার বিশদ বিবরণও দিয়েছেন ভাস্কর।
০৯১৬
লাহৌর, রাওয়ালপিন্ডি, কোট লখপত-সহ পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে নিয়ে গিয়ে জেরা করা হয়েছিল তাঁকে। সঙ্গে ছিল বীভৎস নির্যাতন। শিকলে হাত পা বাঁধা অবস্থায় উপরে ফেলা হয়েছিল তাঁর চুল, দাড়ি ও ভুরু।
১০১৬
কোর্ট মার্শালে মৃত্যুদণ্ড হয় সোহনলাল ভাস্করের। কিন্তু শেষে আইনি লড়াইয়ের সুযোগ পাওয়া গিয়েছিল। আইনি যুদ্ধে ১৪ বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর। নির্মম কারাবাসের সময় ভগৎ সিংহের জীবন এবং উদ্ধৃতিই ছিল তাঁর জীবনীশক্তি।
১১১৬
১৪ বছর পাকিস্তানের জেলে কাটানোর পরে অবশেষে এসেছিল মুক্তি। ১৯৭২ সালের ২ জুলাই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর পর ভাস্কর-সহ বেশ কয়েক জন ভারতীয় বন্দি মুক্তি পান পাকিস্তান থেকে।
১২১৬
তবে পাকিস্তান জানায়, তাদের কাছে সোহনলাল বলে কোনও বন্দি নেই। কিন্তু মোহনলাল ভাস্কর নামে বন্দি আছেন। এই নামেই ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ভারতের মাটিতে পা রেখেছিলেন তিনি। এর পর তিনি এই নামটিই তিনি বহাল রেখেছিলেন পরিচয়স্বরূপ।
১৩১৬
শোনা যায়, ভাস্কর পরিবারের আর্তিতে সাড়া দিয়ে মোহনলাল ওরফে সোহনলাল ওরফে মহম্মদ আসলামের ভারতে ফিরে আসার প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চনের বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন। সর্বভারতীয় এক দৈনিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি সে সময় সুইজারল্যান্ডে কর্মরত ছিলেন। মোহনলাল ও সোহনলাল যে একই ব্যক্তি, তা প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল হরিবংশ রাই বচ্চনের।পরবর্তী কালে সংবাদমাধ্যমে তাঁর অবদানের কথা স্বীকার করেছেন ভাস্করের ছেলেও।
১৪১৬
পরবর্তী সময়ে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বার বার ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এই গুপ্তচরের স্ত্রী, প্রভা ভাস্কর। সংবাদমাধ্যমে তাঁর অভিযোগ ছিল, ভারত সরকার তাঁদের পরিবারের খেয়াল রাখেনি।
১৫১৬
ভারতে ফেরার পরেও পারিশ্রমিক পেতে ভাস্করের সমস্যা হয়েছিল বলে অভিযোগ। শেষ অবধি, লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ
প্রয়াত বলরাম জাখরের হস্তক্ষেপে ১৯৭৭ সালে তিনি আটাশ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন বলে দাবি ভাস্করের পরিবারের।
১৬১৬
ভারতে ফেরার পরে আরও তিন দশক জীবিত ছিলেন ভাস্কর। জন্মভূমির জন্য সারা জীবন উৎসর্গ করে দেওয়া এই দেশপ্রেমিক প্রয়াত হন ২০০৪-এর ২২ ডিসেম্বর।