Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

রাজ্যগুলির গা নেই, প্রকল্প নিয়ে ফাঁপরে মোদী

ভোটের আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে একটি ‘টিম-ভারত’ গড়ার ডাক দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ক্ষমতায় এসে বুঝতে পারছেন কাজটি আদৌ সহজ নয়। উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যের সহযোগিতা আদায় করতে প্রতি পদে ঠোক্কর খেতে হচ্ছে তাঁকে। মোদী সরকারের একাধিক মন্ত্রী কবুল করছেন, নতুন সরকারের একশো দিন হয়ে গেল, তবু সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সহযোগিতা পেতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

ভোটের আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে একটি ‘টিম-ভারত’ গড়ার ডাক দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ক্ষমতায় এসে বুঝতে পারছেন কাজটি আদৌ সহজ নয়। উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যের সহযোগিতা আদায় করতে প্রতি পদে ঠোক্কর খেতে হচ্ছে তাঁকে।

মোদী সরকারের একাধিক মন্ত্রী কবুল করছেন, নতুন সরকারের একশো দিন হয়ে গেল, তবু সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সহযোগিতা পেতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বিরোধিতাও জুটছে। যেমন সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের একটি উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়ে কথা বলার জন্য কয়েক দিন ধরে মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবকে টানা ফোন করে যাচ্ছেন এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ফোন ধরছেন না। সমাজবাদী পার্টির কিছু সাংসদকে দিয়েও বার্তা পাঠানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী যেন কথা বলেন। তাতেও লাভ হয়নি। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের সঙ্গে এক মাস ধরে দেখা করতে চেয়েও তাঁর সময় পাননি আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। জমি অধিগ্রহণ বিল সংক্রান্ত আলোচনার জন্য আগাম নোটিস দিয়ে কলকাতা গিয়েও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখা পাননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান। বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রীরা দাবিদাওয়া নিয়ে কেন্দ্রের মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করছেন, কিন্তু গোটা দেশের কথা ভেবে সামান্য স্বার্থত্যাগের প্রসঙ্গ এলেই বেঁকে বসছেন তাঁরা। এমনকী পণ্য ও পরিষেবা কর নিয়ে তো খোদ গুজরাতের অর্থমন্ত্রীই বাদ সেধেছেন কেন্দ্রের প্রস্তাবে।

এ তো গেল প্রকল্প রূপায়ণ করার ঝক্কি। মোদী সরকারের উপর রাজনৈতিক ক্ষোভ অনেক সময় প্রকাশ্যেই উগরে দিচ্ছেন অনেক মুখ্যমন্ত্রী। ভোটমুখী রাজ্য হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিংহ হুডা কেন্দ্রের হুঁশিয়ারির তোয়াক্কা না করেই গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি তৈরি করে সরাসরি সংঘাতের পথে গিয়েছেন। মোদীর সঙ্গে এক মঞ্চে এসে যে ভাবে হুডাকে ‘বেইজ্জত’ হতে হয়, তার পর কংগ্রেস শাসিত সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাই স্থির করেছেন, তাঁরা মোদীর সঙ্গে এক মঞ্চে যাবেন না। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন তো হেনস্থা হওয়ার পরে প্রকাশ্যেই বলেছেন, এই ধরনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধর্ষণের সামিল। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝিও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী একনায়কের মতো কাজ করছেন। যে নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলছিলেন মোদী, তাঁর দলও বলছে, ইউপিএ-র সঙ্গে নতুন সরকারের কোনও ফারাক নেই। আর সদ্য তৈরি হওয়া নতুন রাজ্য তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও-ও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মোদী সরকার রাজ্যপালের মাধ্যমে দাদাগিরির চেষ্টা করলে পস্তাবে। মোদী ক্ষমতায় আসার পর যে ভাবে একের পর এক রাজ্যপালকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়, দু’জনকে সরাসরি অপসারণ করা হয়, তখন থেকেই বিরোধী দল-শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে সংঘাতের শুরু। মোদী সরকারের মন্ত্রী পীযূষ গয়াল আজ বলেন, “নরেন্দ্র মোদী আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতি ঘরে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছেন। কিন্তু রাজ্যের সাহায্য ছাড়া কী করে এটা সম্ভব? আপাতত রাজস্থান, দিল্লি ও অন্ধ্রপ্রদেশের প্রতি ঘরে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পৌঁছনোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বাকি রাজ্য এগিয়ে না এলে কী করা যায়?”

বিরোধী দলগুলি ইতিমধ্যেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এককাট্টা হচ্ছে। বিহারে তার সফল পরীক্ষাও হয়ে গিয়েছে। মোদী সরকারের এক মন্ত্রীর মতে, বিরোধী দলগুলির কেন্দ্র-বিরোধিতার খেসারত দিতে হচ্ছে সরকারকে। অথচ উন্নয়নের কাজ রাজ্যের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। রাজ্য না চাইলে কেন্দ্র পরামর্শ দেওয়া ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। তাই এখন উভয় সঙ্কটে মোদী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy