মোদী সরকার, গরিবের সরকার।
উত্তরপ্রদেশে ভোটের ঠিক আগে, বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা এবং আর্থিক সমীক্ষার মাধ্যমে ফের তা প্রমাণের চেষ্টায় নামল নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
আজ রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদী সরকারের নীতির মূল মন্ত্রই হল গরিব-দলিত-পীড়িত-বঞ্চিত-শোষিত-কৃষক-শ্রমিকের কল্যাণ। যা দেখে কংগ্রেস নেতাদের কটাক্ষ, অভিধান থেকে গরিবের কোনও প্রতিশব্দই বাদ দেয়নি কেন্দ্র।
গরিব মানুষের মন জয়ের চেষ্টাতেই আজ আর্থিক সমীক্ষায় সকলের জন্য ন্যূনতম আয় বা ‘বেসিক ইউনিভার্সাল ইনকাম’-এর কথা বলেছে সরকার। যার মূল মন্ত্র হল, সকলের জন্য, বিনা শর্তে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ টাকা পৌঁছে দেওয়া। বিজেপি সূত্রের খবর, এই প্রকল্প লোকসভা নির্বাচনের সব থেকে বড় হাতিয়ার তো হবেই। তার আগে উত্তরপ্রদেশের ভোট প্রচারেও গ্রামে গ্রামে এই ভাবনাচিন্তার খবর পৌঁছে দেওয়া হবে।
কিন্তু বাস্তবে এর রূপায়ণ কতখানি সম্ভব?
আর্থিক সমীক্ষার যুক্তি, এখন মধ্যবিত্তদের জন্য খাদ্য, তেল ও সারে ভর্তুকি বাবদ খরচ হয় জিডিপি-র ৩ শতাংশ অর্থ। তার বদলে সকলের জন্য ন্যূনতম আয়ের পিছনে জিডিপি-র ৪ থেকে ৫ শতাংশ ব্যয় করলেই দারিদ্রের পরিমাণ কমিয়ে ০.৫ শতাংশে নিয়ে আসা সম্ভব। মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণিয়ন বলেন, যদি আয়ের দিক থেকে উপরের সারির ২৫% মানুষ এই প্রকল্পের টাকা না-নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তা হলেই খরচ জিডিপি-র ৪ থেকে ৫ শতাংশর মধ্যে আটকে রাখা সম্ভব। আর্থিক সমীক্ষা বলছে, কারা এই সুবিধা পাচ্ছেন, তাদের নাম ঘোষণা করে দিলে অনেকেই লজ্জায় টাকা না নেওয়ার কথা ঘোষণা করতে পারেন।
তবে সুব্রহ্মণিয়নের মতে, এখন দারিদ্র দূরীকরণে যে সব প্রকল্প চালু হয়েছে, তার সঙ্গে বাড়তি হিসেবে যদি সর্বজনীন ন্যূনতম আয়ের প্রকল্পকে ভাবা হয়, তা হলে খরচ সরকারের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে। তাঁর বক্তব্য, ধাপে ধাপে অন্য প্রকল্প বন্ধ করে, তাদের বিকল্প হিসেবে একে ভাবতে হবে।
এখানেই বিপদ দেখছেন জাঁ দ্রেজর মতো অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের বক্তব্য, এখন যে সব প্রকল্প চালু রয়েছে, তার পাশাপাশিই এই প্রকল্প চালু করতে হবে। তাতেই লাভ হবে। দ্রেজ সম্প্রতি এক নিবন্ধে লিখেছেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউ অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি-র হিসেব মতো অপ্রয়োজনীয় ভর্তুকির পিছনে জিডিপি-র ৯ শতাংশ অর্থ খরচ হয়। এর একটা বড় অর্থ সর্বজনীন ন্যূনতম আয় প্রকল্পে ব্যয় করা যেতে পারে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, অপ্রয়োজনীয় ভর্তুকি বন্ধ করে সেই টাকা কেন সর্বজনীন ন্যূনতম আয় প্রকল্পেই খরচ করা হবে? কেন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিকাঠামো, পরিবেশের সুরক্ষার মতো জরুরি খাতে খরচ করা হবে না? দ্রেজর বক্তব্য, হতে পারে এই প্রকল্প সব ধরনের
রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকেরাই সমর্থন করবেন। বামেদের কাছে এটা সকলের জন্য স্বাস্থ্য, বিনামূল্যে শিক্ষা, জন পরিষেবা, মিড ডে মিল নিয়ে সার্বিক সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার অঙ্গ। অন্য পক্ষের কাছে এর অর্থ হল, রেশন বা একশো দিনের কাজের প্রকল্পের খরচে কাটছাঁট করা। সর্বজনীন ন্যূনতম আয়ের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে অনেকেই তাই রেশন ও একশো দিনের কাজের প্রকল্প তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন।
পাল্টা যুক্তিতে সুব্রহ্মণিয়ন বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী যেখানে গরিব মানুষের সংখ্যা বেশি, সেখানেই উন্নয়নের পিছনে প্রয়োজনের তুলনায় কম খরচ হয়। দেশের যে অঞ্চলে ৪০ শতাংশ গরিব মানুষ বাস করেন, সেখানে উন্নয়ন তহবিলের মাত্র ২০ শতাংশ অর্থ যায়। তাই ন্যূনতম সর্বজনীন আয় প্রকল্প এখনই চালু করার সময় যদি না-ও এসে থাকে, এ নিয়ে আলোচনা শুরু করার সময় এসে গিয়েছে।
কংগ্রেসের অবশ্য বক্তব্য, মোদী সরকার বাকি সমস্যা থেকে নজর ঘোরানোর জন্যই এই প্রকল্পের কথা বলছে। গুলাম নবি আজাদের কথায়, ‘‘মোদী ভোটের সময় সবকা সাথ, সবকা বিকাশের স্লোগান দিতেন। এখন হল আরএসএস-কা সাথ, বিজেপি-কা বিকাশ। তাই কৃষক আত্মহত্যা ৪৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।’’
বাজেটে জেটলি সকলের জন্য ন্যূনতম আয় নিয়ে শব্দ ব্যয় করবেন কি না, তা বুধবার সকালেই জানা যাবে। কিন্তু সুব্রহ্মণিয়নের যুক্তি হল, এখনই পরীক্ষামূলক ভাবে বাছাই করা কিছু এলাকায় এই প্রকল্প চালু করা হোক। ইতিমধ্যেই অসরকারি সংগঠনের তরফে মধ্যপ্রদেশে পরীক্ষামূলক ভাবে এই প্রকল্প চালু হয়েছে। তাতে সাফল্যও মিলেছে। তবে একা কেন্দ্রের ঘাড়ে গোটা খরচ না চাপিয়ে রাজ্যেরও কিছুটা খরচ বহন করার পক্ষে সওয়াল করেছেন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy