Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

মোদী-ঝড়ের গতি কত, বোঝাবে ভোটের ফল

লোকসভা ভোটে ‘মোদী ঝড়’-এর তাণ্ডব দেখেছিল সারা দেশ। এখন সেই ঝড়ের গতি কত, তা জানতে অপেক্ষা করছেন সকলেই। অক্টোবর শেষ হওয়ার আগেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। লোকসভা ভোটের পরে মোদী ঝড়ের প্রথম বড় পরীক্ষা হতে চলেছে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে। নির্বাচন কমিশন আজ ঘোষণা করেছে, দুই রাজ্যেই ভোট হবে ১৫ অক্টোবর। কিন্তু তার আগেই কাল, শনিবার ছোট একটি পরীক্ষায় বসতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সেনাপতি অমিত শাহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪১
Share: Save:

লোকসভা ভোটে ‘মোদী ঝড়’-এর তাণ্ডব দেখেছিল সারা দেশ। এখন সেই ঝড়ের গতি কত, তা জানতে অপেক্ষা করছেন সকলেই। অক্টোবর শেষ হওয়ার আগেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

লোকসভা ভোটের পরে মোদী ঝড়ের প্রথম বড় পরীক্ষা হতে চলেছে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে। নির্বাচন কমিশন আজ ঘোষণা করেছে, দুই রাজ্যেই ভোট হবে ১৫ অক্টোবর। কিন্তু তার আগেই কাল, শনিবার ছোট একটি পরীক্ষায় বসতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সেনাপতি অমিত শাহ। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে মোট ৯ রাজ্যে ৩টি লোকসভা ও ৩৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হবে কাল। এর মধ্যে নরেন্দ্র মোদীর বডোদরা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে মুলায়ম সিংহের ছেড়ে যাওয়া মৈনপুরী লোকসভা কেন্দ্র।

লোকসভা ভোটের পর অবশ্য দু’দফায় বিধানসভার উপনির্বাচন হয়েছে। প্রথম দফায় উত্তরাখণ্ডে ডাহা পরাজয়ের মুখোমুখি বিজেপি। দ্বিতীয় দফায় বিহারে বিজেপি-র দখলে থাকা বিধানসভা আসন হাতছাড়া হয়েছে। সেই পরাজয়ের নেপথ্যে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্ক ও রসায়ন থাকলেও অনেকেই মনে করছেন, একটু একটু করে হয়তো দুর্বল হচ্ছে মোদী ঝড়।

শনিবারের উপনির্বাচনের মাহাত্ম্যও কম নয়। উত্তরপ্রদেশে যে ১১টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হবে, তার মধ্যে ১০টিই বিজেপি-র দখলে। আবার গুজরাতে ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের সবগুলিই বিজেপি-র জেতা আসন। বিজেপি নেতারাই জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে যে দু’জন মানুষ সব থেকে উদ্বেগে রয়েছেন, তাঁরা হলেন মোদী ও অমিত শাহ। কারণ, মোদী এখন বারাণসীর সাংসদ। সেই অর্থে উত্তরপ্রদেশ প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য। আর এখানেই লোকসভা ভোটে ৮০টির মধ্যে ৭৩টি আসন দখল করে নিয়ে মোদীর কাছ থেকে ম্যান অব দ্য ম্যাচের শিরোপা পেয়েছিলেন অমিত শাহ । তাই দশটি আসনের মধ্যে একটিও হাতছাড়া হলে, তা এই দু’জনের ওপর ধাক্কা বলেই বিবেচিত হবে।

একই ভাবে গুজরাতেও একটি আসন হাতছাড়া হলেই রাজনীতিতে বিস্তর কাটাছেঁড়া হতে পারে। মোদী গুজরাত ছাড়ার পর সেখানে বিজেপি-র ঘাঁটি আগের মতোই পোক্ত রয়েছে কিনা, উপনির্বাচনে তা বোঝা যাবে। উত্তরাখণ্ডে উপনির্বাচনের পরেই শাহ দলের মধ্যে বলেছিলেন, “তোমরা মোদীর নাক কেটেছ।” এ বার যাতে তেমন অস্বস্তি না হয়, সে জন্য সর্বশক্তি লাগিয়ে দিয়েছে বিজেপি।

আবার উত্তরপ্রদেশে আগামী কালের উপনির্বাচন রাজ্যে ক্ষমতাসীন মুলায়ম সিংহের সমাজবাদী পার্টির জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, লোকসভা ভোটে ধুয়ে মুছে যাওয়ার পর এই উপনির্বাচনকে মুলায়মের অস্তিত্বের লড়াই হিসাবে দেখা হচ্ছে।

বিজেপি-র রথ থামাতে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে আসন জিতে দেখাতে হবে মুলায়মকে। পাশাপাশি, মৈনপুরী আসনটিকে ধরে রাখতে মরিয়া সপা। মুলায়মও তাই এ বার বেপরোয়া। বিজেপি-র সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাল্টা মেরুকরণের রাজনীতি করছেন তিনি।

মুলায়মের মতোই কংগ্রেসের ইজ্জতের প্রশ্ন গুজরাতের উপনির্বাচন। লোকসভা ভোটে গুজরাতে কংগ্রেস একটি আসন না পেলেও, ওই একই দিনে হওয়া ৭টি বিধানসভার উপনির্বাচনে ৩টি আসন জিতেছিলেন তাঁরা। কংগ্রেস মনে করছে, এ বার ৯টি আসনের মধ্যে যদি তাঁরা দু-তিনটিতেও জিততে পারেন, তা হলেই বড় ধাক্কা খাবে বিজেপি।

সন্দেহ নেই, শনিবার ভোট গ্রহণ শেষ হতে না হতেই মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দেবে কংগ্রেস ও বিজেপি। দুই রাজ্যই এখন কংগ্রেসের দখলে। মহারাষ্ট্রে ১৫ বছর ধরে সরকার চালাচ্ছে কংগ্রেস-এনসিপি জোট। আর হরিয়ানায় কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। দু’ রাজ্যেই প্রবল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মুখে কংগ্রেস সরকার। তার ওপর দুটি রাজ্যেই কংগ্রেস অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত। হুডার বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংহের মতো তাবড় নেতা দল ছেড়েছেন। অন্য দিকে মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের বিরুদ্ধে রাজ্যের বারো আনা কংগ্রেস নেতাই ক্ষুব্ধ। তার ওপর আসন বণ্টন নিয়ে সুর চড়াচ্ছে এনসিপি।

এ হেন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দু’টি রাজ্যের বিধানসভা ভোটেই ‘অ্যাডভান্টেজ’ বিজেপি। কিন্তু বিজেপির মূল সমস্যা হল, দুই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার মতো কোনও সর্বজনগ্রাহ্য নেতা নেই। মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর বিষয়ে শিবসেনা-বিজেপির জটিলতা কাটেনি। ফলে সেখানে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তুলে না ধরারই সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর হরিয়ানায়ও সেই মাপের নেতা নেই। তাই দু’রাজ্যের ভোটেই মোদীকে আরও বেশি করে প্রচারে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি।

রাজ্যভিত্তিক এই ফলের উপরে ভিত্তি করেই মোদী ঝড়ের বর্তমান গতি মাপার চেষ্টা করবেন জাতীয় রাজনীতির নানা কাণ্ডারী।

নির্বাচন ১৫ অক্টোবর

অক্টোবরে একই দিনে বিধানসভা ভোট দুই রাজ্যে। মহারাষ্ট্রের ২৮৮টি এবং হরিয়ানার ৯০টি বিধানসভা আসনে ১৫ অক্টোবর ভোট ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন। ওই দিনই উপনির্বাচন অরুণাচলপ্রদেশ, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং গুজরাতের পাঁচটি বিধানসভায়। ফল ঘোষণা ১৯ অক্টোবর। নির্বাচনী নির্ঘণ্ট বিষয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পত শুক্রবার জানান, মহারাষ্ট্র এবং ওড়িশার দু’টি লোকসভা আসনের ভোটও ১৫ তারিখ। ভোট নির্দেশিকা ২০ সেপ্টেম্বর জারি হবে বলে জানান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। ওড়িশার কন্ধমাল লোকসভা কেন্দ্রটি ছাড়া বাকি সব আসনেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর। কন্ধমালে প্রার্থীদের ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy