চাপ রয়েছে ঘরে-বাইরে। তবু খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত থেকে কোনও ভাবেই পিছিয়ে আসছে না নরেন্দ্র মোদী সরকার।
বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণের সাম্প্রতিক মন্তব্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে বুঝেই মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলি শনিবার সরকারের অবস্থান অনেকটাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার চালানোর ক্ষেত্রে ‘দায়িত্ব’ আর ‘ধারাবাহিকতা’-কেই গুরুত্ব দিতে চান তাঁরা। জেটলির মতে, অতীতে ভারত-মার্কিন পরমাণু সমঝোতার রাজনৈতিক বিরোধিতার পরেও এখন সরকারে এসে তাঁরা ইউপিএ জমানার সেই সিদ্ধান্তকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। একই যুক্তি খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও খাটছে। অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘সরকারের অনেক দায়বদ্ধতা থাকে। সুশাসন সুকৌশল রাজনীতির মিশেলেই হওয়া উচিত।’’ তা হলে লগ্নিকারীরা সরকার না দল— কার অবস্থান দেখে লগ্নি করতে আসবেন? বিজেপির বিরোধিতা দেখবেন নাকি সরকারের অবস্থান? জেটলির সহাস্য জবাব, ‘‘লগ্নিকারীরা আমার-আপনার থেকে অনেক বেশি স্মার্ট!’’
সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক। জেটলির কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সরকার কী পদক্ষেপ করছে? মোদীর সেনাপতির ব্যাখ্যা, ‘‘বক্তব্য স্পষ্ট। সকলের জানা বিজেপি এর বিরোধিতা করছে। কিন্তু সরকার ইউপিএ-র নীতিই বহাল রেখেছে।’’
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়টিতে অর্থ মন্ত্রকের অধীনে থাকা বিদেশি বিনিয়োগ প্রোমোশন বোর্ডের (এফআইপিবি) অনুমোদন প্রয়োজন। ফলে অনেকেই মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী যা বলছেন, সেটিই শেষ কথা। কেন না, এ ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী ও অরুণ জেটলি কোনও ভাবেই এমন বার্তা দিতে চাইছেন না, যাতে আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ ক্ষেত্রে সরকার পরিচালনায় মোদীর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিও বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতায় বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহার সরব হলেও লোকসভা ভোটের প্রচারের সময়ে মোদী এমন বিনিয়োগের জন্য দরজা বন্ধ করার কথা বলেননি। আবার ভারত-মার্কিন পরমাণু সমঝোতায় রাজনৈতিক আপত্তি থাকলেও সরকারে এসে মোদী একেবারে ভিন্ন পথের পথিক। গত বছর তাঁর আমেরিকা সফরের সময়ে কিংবা এ বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফরের সময়ে মোদী চেষ্টা করে গিয়েছেন ওই চুক্তিরই সুফল ঘরে তুলতে। এতটুকুই নয়, এনডিএ সরকার ফ্রান্স ও কানাডার সঙ্গেও চুক্তি নিয়ে একই ভাবে এগোচ্ছে।
তবে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির মতো বিষয়ে রাজনৈতিক তাৎপর্যও বিরাট। রয়েছে দল ও সঙ্ঘের একাংশের প্রবল বিরোধিতা। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘সঙ্ঘের যেমন, তেমনই ব্যবসায়ী সংগঠনেরও প্রবল আপত্তি রয়েছে। জুনের গোড়ায় আন্দোলনের জন্য সঙ্ঘের সদর দফতর নাগপুরকেই বেছে নিয়েছে তারা।’’ কিন্তু বিজেপির সদর দফতরে বসেই অরুণ জেটলি এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দলগত ভাবে যতই বিরোধিতা থাক, সরকার কোনও ভাবে সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটছে না। কারণ, এক বার এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করলে আন্তর্জাতিক লগ্নিকারীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে। সরকারকে সেই দিকটিও মাথায় রাখতে হচ্ছে।
তবে ঘটনা হল, ইউপিএ জমানায় বিনিয়োগের সীমা বাড়ানো হলেও এখনও পর্যন্ত বিদেশি সংস্থাগুলি বিনিয়োগে তেমন উৎসাহ দেখায়নি। খোদ নির্মলার কথায়, নরেন্দ্র মোদী সরকারের গত এক বছরেও কেউ বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে আসেনি। এর সম্ভাব্য একটি কারণ হতে পারে, এই বিভ্রান্তিই। দলগত ভাবে বিজেপি যদি এর বিরোধিতা করে, তা হলে বিজেপি-শাসিত কোনও রাজ্যেই বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবেন না লগ্নিকারীরা। শুধু বিজেপি নয়, আরও অনেক দলেরই এতে আপত্তি রয়েছে। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায়, কংগ্রেস শাসিত কোনও রাজ্যে কেউ লগ্নি করলেন, পরে বিধানসভা ভোটে সে রাজ্য যদি বিজেপি দখল করে? তখন কি ব্যবসা লাটে উঠবে? এই আশঙ্কাও রয়েছে লগ্নিকারীদের মনে। বিভ্রান্তি কাটাতেই আজ এ নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিলেন জেটলি। বিজেপি সূত্রের মতে, ভবিষ্যতে জেটলিরা যদি দেশের শিল্পমহলকে আরও স্বাবলম্বী করে তুলতে পারেন, উৎপাদন শিল্প আরও শক্তিশালী হয়, তা হলে বর্তমান নীতির হাত ধরেই আরও বিদেশি সংস্থা ভারতে আসতে আগ্রহী হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy