ফ্ল্যাট-বাড়ি-আবাসন তৈরির ব্যবসায় আইনি নিয়ন্ত্রণ আনতে গিয়ে হোঁচট খেল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
অভিযোগ উঠেছে, মোদী সরকার মুখে ফ্ল্যাট-বাড়ির ক্রেতার স্বার্থের কথা বললেও বিলে আসলে প্রোমোটার বা নির্মাতা সংস্থাকেই সুবিধা করে দিচ্ছে। এই অভিযোগ তুলেই আজ সংসদে বিরোধীরা রিয়েল এস্টেট (রেগুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) বিল পাশে বাধা দিয়েছে। কংগ্রেস-বাম-সমাজবাদী পার্টির অভিযোগ, ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে এই বিল আনা হয়েছে। কিন্তু প্রোমোটার বা নির্মাতা সংস্থারা বেআইনি কাজ করেও যাতে ছাড় পেয়ে যায়, বিলে সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু আজ রাজ্যসভায় এই বিলটি পাশ করানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিরোধীরা দাবি তোলেন, বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক। বাদানুবাদের পর ঠিক হয়, আগামী কয়েক দিন বিরোধী দলের নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন নায়ডু। তাতেও রাস্তা বের না হলে বিলটি সিলেক্ট কমিটিতেই যাবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, দেশের রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রে কোনও আইনি অনুশাসন নেই। সেই অনুশাসন আনার জন্যই ৭ এপ্রিল নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা রিয়েল এস্টেট (রেগুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) বিলে অনুমোদন দেয়। তার জন্য রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা গড়ে তোলা হবে। সমস্ত রিয়েল এস্টেট সংস্থা, সব আবাসন প্রকল্প, ফ্ল্যাট-বাড়ি-জমি কেনাবেচায় নিযুক্ত রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের এই সংস্থার কাছে বাধ্যতামূলক ভাবে নথিভুক্ত হতে হবে। নির্মাতাদের তাঁদের সংস্থা সম্পর্কে সব তথ্য জানাতে হবে। আবাসন প্রকল্প সম্পর্কেও সমস্ত তথ্য জমা করতে হবে। আবাসনের নকশা, কাজ শেষের সময়সীমা, জমির অবস্থা ও বৈধ অনুমোদন আছে কি না, তা-ও জানিয়ে দিতে হবে। কোনও নির্মাতা সংস্থা বাড়ির প্ল্যান বা কাঠামোগত নকশায় ইচ্ছেমতো রদবদল ঘটাতে পারবে না। এই কাজে দুই-তৃতীয়াংশ ক্রেতার অনুমতি নিতে হবে। কারও সমস্যা হলে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতেও যেতে পারবেন। বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, ‘‘আজকে কোনও সাধারণ মানুষকে ফ্ল্যাট-বাড়ি কিনতে গিয়ে যে সব সমস্যার মুখে পড়তে হয়, তার সব দিকই খেয়াল রাখা হয়েছে এই বিলে।’’
তা হলে বিরোধীদের আপত্তি কোথায়? তাদের বক্তব্য, ইউপিএ সরকার ২০১৩ সালে এই বিলটি প্রথম রাজ্যসভায় এনেও পাশ করানোর সময় পায়নি। মোদী সরকার যে নতুন বিল নিয়ে এসেছে, তাতে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রোমোটারদের সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে। প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ— তারা একটি আবাসনের ক্রেতাদের থেকে টাকা নিয়ে অন্য প্রকল্পে খরচ করে ফেলে। ফলে আবাসন তৈরির কাজ শেষ হতে অনেক সময় লেগে যায়। এ জন্য পুরনো বিলে বলা হয়েছিল, কোনও প্রকল্পে ক্রেতাদের থেকে নেওয়া টাকার ৭০% একটি অস্থায়ী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে রাখতে হবে। অন্য কোথাও তা খরচ করা যাবে না। কিন্তু নতুন বিলে তা কমিয়ে ৫০% করা হয়েছে। কেন্দ্রের যুক্তি, কোনও আবাসন প্রকল্পের জমি কিনতেই ২৫ থেকে ৫০% টাকা খরচ হয়। কাজ শুরুর আগেই সেই টাকা মিটিয়ে দিতে হয়। ক্রেতাদের থেকে নেওয়া টাকার ৫০% পৃথক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রাখলেই যথেষ্ট। পুরনো বিলে কোনও নির্মাণ সংস্থা নিয়ন্ত্রকের নির্দেশ না মানলে তাদের ডিরেক্টর, ম্যানেজার, সচিব বা অন্য কোনও আধিকারিককে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা ছিল ট্রাইব্যুনালের। মোদী সরকারের বিলে এই শাস্তি দেওয়া ক্ষমতা উধাও। কোনও প্রোমোটার আগে বেআইনি কাজ করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা এবং একাধিক বার আইন ভাঙলে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করার বিষয়টিও বিল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের যুক্তি হল, নিয়ন্ত্রক সংস্থাই আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। কোনও প্রকল্প নথিভুক্ত না করলে জরিমানা-জেলের ব্যবস্থাও রয়েছে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষায় যে সব ব্যবস্থা ছিল, তার সবই বিল থেকে বাদ দিয়ে প্রোমোটারদের সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁকে সমর্থন করেন সিপিএমের তপন সেনও। নায়ডু বলেন, ‘‘প্রোমোটার মানেই সে দেশের শত্রু, এমন তত্ত্বে আমি বিশ্বাস করি না।’’ বিরোধীদের অভিযোগ, আবাসন নির্মাণ সংস্থাগুলির চাপে পড়েই এই ব্যবস্থা করেছে মোদী সরকার। ঠিক যে ভাবে কৃষকদের নয়, শিল্পপতিদের স্বার্থে জমি অধিগ্রহণ বিলে সংশোধন করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কেন্দ্র চেয়েছিল, সিলেক্ট কমিটি তৈরি হলেও তাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হবে, যাতে এই অধিবেশনেই বিলটি পাশ করা যায়। কিন্তু সেখানেও আপত্তি তোলেন সপা-র নরেশ অগ্রবাল। রাজ্যসভায় কিছু না বললেও তৃণমূলও এই বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর পক্ষে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy