Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

মোদীর দত্তক গ্রামেই ‘ফেল’ ডিজিটাল স্বপ্ন

দু’হাজার টাকার নোট দেখেছেন? — না। ডেবিট কার্ড? — না। এটিএম থেকে টাকা তোলেন? — গ্রামে তো নেই। পেটিএম কী জানেন? — সে আবার কী? লেখাপড়া জানি না। মোবাইল থেকেই ব্যাঙ্কের কাজ হয়, জানেন? — ব্যাঙ্কেই খাতা নেই, মোবাইল দিয়ে কী হবে? ব্যাঙ্কে কেন খাতা নেই?

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

দু’হাজার টাকার নোট দেখেছেন?

— না।

ডেবিট কার্ড?

— না।

এটিএম থেকে টাকা তোলেন?

— গ্রামে তো নেই।

পেটিএম কী জানেন?

— সে আবার কী? লেখাপড়া জানি না।

মোবাইল থেকেই ব্যাঙ্কের কাজ হয়, জানেন?

— ব্যাঙ্কেই খাতা নেই, মোবাইল দিয়ে কী হবে?

ব্যাঙ্কে কেন খাতা নেই?

— পয়সাই নেই। খাতা খুলতে তো পয়সা লাগে।

উত্তরগুলো শুনে যদি চোখ ছানাবড়া হওয়ার জোগাড় হয়, তা হলে বলতে হবে, আপনার ঝটকা লাগা এখনও বাকি। কারণ প্রথমত, এই গ্রামটি রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীর আওতায়। দ্বিতীয়ত, এটি মোদীরই দত্তক নেওয়া গ্রাম। ন’মাস আগে তাঁরই চালু করা আদর্শ গ্রাম যোজনার অধীনে উত্তরপ্রদেশের এই নাগেপুর গ্রামকে দত্তক নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

নোট বাতিলের পর গোটা দেশ যখন টাকা তোলা-জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ল, সেই সময় মানুষের কষ্টের শরিক হওয়ার কথা বলেছিলেন মোদী। ঝুলি থেকে বের করেছিলেন দাওয়াই— ‘ক্যাশ-লেস সমাজ’। যেখানে সব কাজ হবে ডিজিটালে। নগদের আর দরকারই হবে না!

নাগেপুর গ্রামে মাত্র ৪২৫টি পরিবারের বাস। লোকসংখ্যা হাজার তিনেক। নোট বাতিলের ৫০ দিনের মাথায় মোদীর ডিজিটাল দাওয়াইয়ের ফলাফল পরখ করতে যাঁদের একাংশের মুখোমুখি হয়ে ওপরের উত্তরগুলো পাওয়া গেল। সবই ধরা পড়ল এবিপি নিউজের ক্যামেরায়। চ্যানেলের সাংবাদিক চিত্রা ত্রিপাঠী গ্রামের মহিলাদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘নতুন দু’হাজার টাকার নোট দেখেছেন?’’ কেউই হাত তুললেন না। কিছু ছোট ছেলে দাবি করল, তারা দেখেছে। পার্স থেকে নতুন একটি দু’হাজার টাকার নোট বের করে দেখাতেই চোখেমুখে বিস্ময় ছড়িয়ে পড়ল মোদী-গ্রামে। কেউ কেউ বললেন, ‘‘এ তো হজমির কৌটো থেকে বেরোয়!’’

আরও আছে। খোদ গ্রামপ্রধান বললেন, তিনি নাকি ব্যাঙ্কেই যান না! রাম নারায়ণ নামে এক তাঁতি বললেন, ব্যাঙ্কে খাতা খুলতে পয়সা লাগে, তাই খাতাই খোলেননি। আজ পর্যন্ত ব্যাঙ্কও চোখে দেখেননি। জনধন প্রকল্প চালুর সময়ে মোদী দাবি করেছিলেন, সমস্ত দেশবাসী এ বার থেকে ব্যাঙ্কের আওতায় আসবেন। টাকা জমা না করেও এই অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। নাগেপুরে সে বার্তা যায়নি, তা স্পষ্ট। জানা গেল, একটা এটিএমের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ন’মাস ধরে তদ্বির চলছে। নিট ফল এখনও শূন্য।

অবধারিত প্রশ্নটা তাই ওঠার কথা। উঠছেও। যে প্রধানমন্ত্রী নোট বাতিলের প্রধান মস্তিষ্ক, তাঁর দত্তক নেওয়া গ্রামে ডিজিটাল স্বপ্ন এ ভাবে মুখ থুবড়ে পড়লে বাকি দেশের কী হবে? এর আগে বারাণসীর যে গ্রামটিকে দত্তক নিয়েছিলেন মোদী, সেই জয়াপুরের অবস্থা তবু ভাল। সেখানে ঘুরে এবিপি নিউজ দেখেছে, গ্রামে এটিএম আছে। তাতে টাকাও আছে। মানুষ তুলনায় বেশি ওয়াকিবহাল। তাঁরা মনে করেন, নোট বাতিলে বড় পুঁজিপতিদের ‘উচিত শিক্ষা’ দেবেন মোদী।

জয়াপুরকে ঢাল করেই বিজেপি নেতারা বলছেন, দু’বছর আগে এই গ্রাম দত্তক নিয়েছিলেন মোদী। আর নাগেপুর দত্তক নেওয়ার পরে মাত্র ৯ মাস কেটেছে। অচিরে হাল ফিরবে তারও। বিরোধীদের পাল্টা কটাক্ষ, সারা দেশে ক’টা গ্রামকে দত্তক নিয়ে তাদের হাল ফেরাবেন প্রধানমন্ত্রী?

অন্য বিষয়গুলি:

Modi Digital Transactions
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy